আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ১০:৪৮

ঝিনাইদহতে চাটাই দিয়ে ঘেরা স্কুলে শতভাগ জিপিএ-৫

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : এবারের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৬ শিক্ষার্থীর সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে এই বিদ্যালয় থেকে।

ঝিনাইদহ হরিনাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর বাজারে স্থাপিত আলোর দিশারী নামের স্কুলটির এমন ফলাফলে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকের আনন্দের শেষ নেই। ফলাফলের দিন বাচ্চারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করে। আর অভিভাবকরা এসে জড়িয়ে ধরেন শিক্ষকদের। যেন কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, তাদের বাচ্চারা এতো ভালো ফল করবে সেটা অনেক অভিভাবক ভাবেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে চাটাই দিয়ে ঘেরা স্কুল, উপরে টিনসেড। পালাক্রমে চারটি কক্ষে পড়ালেখা করে ১৭০ থেকে ১৮০ টি শিশু। ৬ জন শিক্ষক তাদের লেখাপড়া করান ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, দখলপুর গ্রামে ও পাশ্ববর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যেও এই স্কুলে লেখাপড়া করতে আসা বাচ্চাদের দেখভাল করার দায়িত্ব নেন তারা। ২০০২ সালে ৩০ শতক ভাড়া জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন কেজি স্কুলটি। পাড়াগায়ে স্কুলটি হওয়ায় সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভাবে চালানো যায় না। নিজেরা বেঁচে থাকতে পারেন এমন পয়সা নিয়ে তারা শ্রম দিয়ে চলেছেন। তারা ৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা বাচ্চাদের পড়ালেখা শেখানোর কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি বছরই তাদের প্রতিষ্ঠান ভালো ফল করছে। এবার ১৬ জন সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। যেটা তাদের জানামতে ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে সেরা।

শিক্ষকরা জানান, এই ভালো ফল করার পেছনে বাবা-মায়েদের চেষ্টা রয়েছে। সবচে বেশি চেষ্টা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের। প্রতিমাসের ১ থেকে ৭ তারিখ তারা শিক্ষার্থীর বাড়িতে যান, মতবিনিময় করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর অভিভাবকদের মুটোফোনে ফোন দিয়ে খবর নেন। বাচ্চাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখানো, নৈতিক শিক্ষা দেওয়া সবই করেন বলে শিক্ষকরা জানান ।

জিপিএ-৫ পাওয়া শিশু মিম এর মা রোজিনা খাতুন জানান, এই কেজি স্কুলটিতে বাচ্চা ভর্তি করার পর অভিভাবকরা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যান। কারণ শিক্ষকরা এতোটা খেয়াল করেন যে বাবা-মাকে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। তাছাড়া বাচ্চাদের পৃথক কোনো প্রাইভেট পড়াতে হয় না। পরীক্ষা এলে শিক্ষকরা টাকা ছাড়াই কোচিং করান।  জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষকরা তাদের পেছনে যে পরিশ্রম করেছেন তা সর্বক্ষেত্রে তাদের পড়ালেখা অনেক সহজ হতো। আরেক শিক্ষার্থী আল-আমিনের বাবা আনিচুর রহমান জানান, শিক্ষকদের চেষ্টায় তাদের ছেলে-মেয়েরা এতো ভালো ফল করেছে।

প্রধান শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, এবারের বার্ষিক পরীক্ষায় তাদের প্রতিষ্ঠানের ফলাফল অনেক ভালো। তিনি বলেন, এই বাচ্চারা আগামীতে দেশের কান্ডারি হবে। তাই তাদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

হরিনাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম আব্দুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানটির ফলাফল খুবই সন্তোষজনক। ওই প্রতিষ্ঠানের শিশুরা খুবই ভালো ফল করেছে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত