ক্যাম্পাস প্রতিবেদক :: শিবির সন্দেহে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করার ঘটনা যেন থামছেই না। শিবির সন্দেহে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার পর এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় ঘটলেও এবার একই কায়দায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার চার মাস না পেরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থীকে আবরারের স্টাইলে রাতভর নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ। ঘটনার নিন্দা প্রতিবাদে আজ বুধবার বিকেলে শাহবাগে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে হলের গেস্টরুমে ডাকা হয়। হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমের কাছ থেকে ‘শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি’ আদায়ের চেষ্টা করে। বেশ কিছুক্ষণ মানসিক চাপ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেও স্বীকারোক্তি আদায় ব্যর্থ হয়ে ওই শিক্ষার্থীকে লাঠি, রড দিয়ে পেটানো হয়।
মুকিমের ব্যবহৃত মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে তার ফেসবুক মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখা হয়। পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে ডেকে এনে দু’জনকে একসঙ্গে ফের মারধর করা হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে তারা উভয়েই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়েন।
একই গেস্টরুমে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে আনা হয়। রাত দুইটা পর্যন্ত তাদেরকে দফায় দফায় নির্যাতন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে তুলে দেয়া হয়। প্রক্টরিয়াল টিম নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীদের শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে দিয়ে দেন।
হল ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেছেন, ওই চার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে এবং তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
তবে তার কোনো নাম অথবা প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। এমনকি শিবির সন্দেহে তাদের গেস্টরুমে ডাকা হলেও তাদের কাছে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ছাত্রলীগ।
এদিকে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের থানায় দেয়ার পর পুলিশ তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই আবার থানায় আনা হয়। এখন তারা থানায় আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, শুনেছি ছাত্রলীগ তাদের মেরেছে। ছাত্রলীগ তাদের মারার কে? ছাত্রলীগ যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে তার একটি হল ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের শিবির সন্দেহে মারধর করা। ছাত্রলীগকে এই অধিকার কে দিয়েছে? দেশটি আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নয়। তারা ভিপির ওপর হামলা করে বলে জামাত-শিবির।
মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত আমির হামজার আগেও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে এক ফার্মেসি দোকানদারকে মারধর করেছিলেন। ওই ঘটনায় তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানা গেছে।
প্রক্টরিয়াল টিম শিক্ষার্থীদের রক্ষা না করে কেন পুলিশের হাতে দিল- এই প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘হল প্রশাসন তাদেরকে পুলিশে দিয়েছে।’
তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার কোন প্রমাণ পাওয়া গেছে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশকে বলেছি তাদেরকে ছেড়ে দিতে। কোন নিরহ শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা হবে না।’
তবে ঘটনার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডঃ আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি তা কেটে দেন।