ডেস্ক রিপোর্ট।। মুঘল সম্রাট আকবর। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস তার বিজয়গাথায় ভরা। ভারতের বিশাল অংশ জুড়ে ছিলো তার সম্রাজ্য। তাকে নিয়ে কত গল্প, কত উপকথা! তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল। টিভি পর্দায় মুগ্ধ হয়ে মানুষ দেখেন সেগুলো। আজ আরেকজন আকবরকে মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন শতকোটি মানুষ। তিনি বাংলাদেশের আকবর; আকবর আলী। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকেও স্মরণ করবে একজন ‘আকবর দ্যা গ্রেট’ হিসেবেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা স্বপ্ন যখন ধুসর হতে শুরু করেছে ঠিক তখন ত্রাতা হয়ে আসেন আকবর। অধিনায়কদের এমনই হতে হয়? সমর্থকরা অন্তত এমন অধিনায়কই চান। যিনি সব চাপ কাঁধে তুলে নেবেন কিন্তু ভেঙে পড়বেন না। সামনে থেকে লড়াই করে দলকে সাহস যোগাবেন।
বিশ্বকাপ ফাইনালে পরাক্রমশালী ভারতের বিপক্ষে এর সবগুলো গুণই ফুটে ওঠে আকবরের মধ্যে। ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো দেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শিরোপা এনে দিলো তার দল। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ডিএল মেথডে হারালো ৩ উইকেটে।
সহজ লক্ষ্য কঠিন বানিয়ে জিতলো বাংলাদেশ:
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে করতে নেমে শুরুটা ভালই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার ইমন ও তানজিদ। খুব সহজেই তাঁরা সামলাচ্ছিলেন ভারতীয় বোলারদের। ম্যাচ যত এগিয়ে যাচ্ছিলো উইকেটও হয়ে উঠছিল সহজ। কিন্তু স্কোর বোর্ডে ৫০ রান তোলার পরে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ১৭ রান করা তানজিদ। রাভি বিষ্ণইকে মারতে গিয়ে তানজিদ ফেরেন কার্তিক তিয়াগীর হাতে ক্যাচ দিয়ে।
বিষ্ণইর সেই শুরু, এরপর মাহমুদুল হাসান জয়কে (৮) তুলে নেয়ার পরের বলেই ফেরান তৌহিদ হৃদয়কে। শাহাদতকেও দাঁড়াতে দেননি। ১ রানেই তাকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন বিষ্ণই। অল্প সময়ের মধ্যেই চার উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন এ লেগস্পিনার।
শরীরটাকে উজাড় করে লড়লেন ইমন:
অধিনায়ক আকবর আলী ক্রিজে এসে চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু তাকে সঙ্গ দেয়ার কেউ তো থাকতে হবে! শামিম হোসেন, অভিষেক দাসরা বিদায় নিলে কঠিন চাপে পড়া দলের হাল ধরতে ইনজুরি নিয়ে আবারো ফিরতে হয় ইমনের। অধিনায়কের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে আবারো জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। দারুণ সব বাউন্ডারিতে সহজ সমীকরণের দিকে নিয়ে যান দলকে।
কিন্তু তার এই ত্যাগ আর উজাড় করে দেয়া ইনিংসটি বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে পারল না। ৩২তম ওভারের শেষ বলে জয়শওয়ালের শিকার হন তিনি। অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল সজোরে হাঁকাতে গিয়ে আকাশ সিংয়ের তালুবন্দী হন ইমন।
তার বিদায়ের পর অধিনায়ক আকবর আলী দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। সহজ লক্ষ্য দেখতে দেখতে কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সংকল্পের দিকে এগিয়ে যান আকবর।
জয় সহজ করে দিলো বৃষ্টি:
বৃষ্টির কারণে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থেকে শুরু হওয়ার পর কাজটা আরো সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের। বৃষ্টির পর ৩০ বলে জয়ের জন্য দরকার হয় ৭ রান। যা নিতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি আকবর, রাকিবুলের।
মূল কাজটা করে রেখেছিলেন বোলররাই:
এর আগে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তটাকে সঠিকই প্রমাণ করেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারকে বেশিদূর যেতে দেননি তারা, রেখেছিলেন নাগালের মধ্যে।
শুরু থেকেই ভারতের রানের চাকা চেপে ধরে টাইগাররা। দলীয স্কোরে মাত্র ৯ রান যাগ হতেই ওপেনার ধিবইয়াশ সাক্সেনাকে ফেরান অভিষেক দাস। সেই চাপ সামলে উঠেন আরেক ওপেনার জয়শওয়াল এবং তিলক ভার্মা। ৩৮ রানে তিলককে ফেরান সাকিব। এরপর জুরেলের ২২ রান ছাড়া আর কেউই দুই অংশ ছুঁতে পারেননি। একপাশ আগলে লড়তে থাকা জয়শওয়াল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১২ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন। ৮৮ রানে শরিফুলের শিকার হয়ে তিনি ফিরে গেলে মুখ থুবড়ে পড়ে ভারত। শেষ পর্যন্ত ১৭৭ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা।
স্কোর:
ভারত: ১৭৭/১০ (৪৭.২) জয়শওয়াল ৮৮, তিলক ভার্মা ৩৮; শরিফুল ২/৩১, সাকিব ২/২৮, অভিষেক ৩/৪০।
বাংলাদেশ: ১৭০/৭ (৪২.১) ইমন ৪৭, আকবর ৪৩*; বিষ্ণই ৪/৩০, মিশ্রা ২/২৫।