স্টাফ রিপোর্টার : বন্ধ থাকা যশোরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে দোকানপাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর গণপরিবহন আগের মতোই বন্ধ থাকবে।
‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত’ জেলা কমিটির সভায় কিছু সময় আগে এই সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফসহ সভায় উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ বুধবার বেলা ১১টায় যশোর সার্কিট হাউজে ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত’ জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। চলে বেলা একটা পর্যন্ত।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ।
সভা শেষে তিনি জানান, যশোর জেলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলে দোকানপাট খুলতে পারবেন। তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রত্যেক দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। পরস্পরের সঙ্গে নির্ধারিত দূরত্বও বজায় রাখতে হবে।
আজকের সভায় আরো অংশ নেন যশোরে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, করোনা সংক্রান্ত সেনা তৎপরতায় যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লে. কর্নেল নেয়ামুল, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপকুমার রায়, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।
এর আগে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার মুখে গত ২৭ এপ্রিল যশোর জেলাকে ‘লকডাউন’ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত’ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ।
এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গেল ১০ মে দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তখন ঈদবাজারে মানুষের চাপ ক্রমে বাড়তে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানছিলেন না। অন্যদিকে, জেলায় করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছিল। এমন পরিস্থিতিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক’দিন পর গত ১৭ মে নির্বাহী আদেশ জারি করে ১৯ মে থেকে ফের দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এর ফলে ঈদ-বাজার ধরতে বিশেষত পোশাক, জুতা, কসমেটিক্স প্রভৃতি দোকানিরা যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তা মাঠে মারা যায়।
আজকের সভার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, পূর্ববর্তী আদেশ প্রত্যাহার করা হলো। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলে তাদের দোকানপাট খুলতে পারবেন।
আজকের সভায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। তা হলো- শহরের শঙ্করপুর এলাকায় অবস্থিত জেডিএল হসপিটালকে ‘অস্থায়ী করোনা হাসপাতাল’ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত।
সভা শেষে সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘টিবি হাসপাতালকে যেভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে, সেভাবেই চলবে। বাড়তি হিসেবে গ্রিন ড্রিম লিমিটেড (জিডিএল) হাসপাতালকে ব্যবহার করা হবে। বেসরকারি জিডিএল হসপিটালে অপারেশনের সুবিধা আছে। যদি কোনো রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়, তাহলে সেই কাজ এখানে করা হবে। আর যদি রোগী সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলেও এই হসপিটালে তাদের রাখা যাবে।’
এর আগের একটি সভায় যশোরের বেসরকারি কুইন্স হসপিটাল, ইবনে সিনা, নোভা মেডিকেল, জেনেসিস হসপিটালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এই হসপিটালগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়নি। এখন আবার জিডিএল হসপিটালকে কেন নতুন করে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলো, তা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি। সিভিল সার্জনও বিষয়টি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দেননি।
সিভিল সার্জন জানান, আজ পর্যন্ত যশোরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মোট ১০০ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ মারা যাননি। অনেকে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।
দোকানপাট কত সময় খোলা রাখা যাবে?- এমন প্রশ্নের জবাবে সভায় অংশ নেওয়া প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে। তবে হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যাপারে কী নির্দেশনা তা অবশ্য তিনি জানাতে পারেননি।
সভা শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে যোগাযোগ করা হলে যশোর বড়বাজারের ইজারাদার ও ব্যবসায়ী নেতা মীর মোশাররফ হোসেন বাবু বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ব্যবসায়ী নেতারা তাদের সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করেছেন। সিদ্ধান্ত জানার পর পরই শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কিছু কিছু দোকানপাট খুলেছে। সাধারণত ঈদের দুই-একদিন পর দোকানপাট খোলে। সেই হিসেবে আশা করা হচ্ছে, আগামীকাল নাগাদ মোটামুটি সব দোকানপাট খুলবে।