আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৮:২৮

চলে গেলেন হেফাজত ইসলামের আমির আলস্নামা শাহ আহমদ শফী: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রবীণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব, হেফাজত ইসলামের আমির আলস্নামা শাহ আহমদ শফী আর নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিলস্নাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তার মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বিবৃতিতে তারা এ বর্ষীয়ান ধর্মীয় নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় আলস্নামা শাহ আহমদ শফীকে মুমূর্ষু অবস্থায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় এনে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরুর আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

শতবর্ষী আলস্নামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, আলস্নামা শফীর হার্টে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়ার পাশাপাশি ফুসফুসে পানি জমেছিল। এছাড়া তার শ্বাসকষ্টও বেড়ে গিয়েছিল। তাই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রম্নত ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।

হাটহাজারী মাদ্রাসার একজন শিক্ষক জানান, ছাত্র বিক্ষোভের মুখে অবরুদ্ধ অবস্থায় আলস্নামা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই শিক্ষকের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আলস্নামা শফী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তিনি হাসপাতাল যেতে চাইলেও রাত ১২টার দিকে মাদ্রাসার প্রধান গেটের সামনে প্রায় আধাঘণ্টা আলস্নামা শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রেখেছিল আন্দোলনরত ছাত্ররা।

এর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন হেফাজত আমির শাইখুল ইসলাম আলস্নামা শাহ আহমদ শফী। ঘোষণায় বলা হয়, মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে যাওয়ায় তাকে (আলস্নামা শফীকে) সাদরে মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বৈঠকে মাওলানা নুরুল ইসলাম কক্সবাজারিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি মাওলানা আনাস মাদানীর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

এরপর রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পুলিশ ওর্ যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাদ্রাসার সামনে থেকে সরে যায় এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে মাদ্রাসার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় প্রবেশ করে।

এই ইসলামি ব্যক্তিত্ব হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ছিলেন। তিনি একইসঙ্গে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের হাটহাজারীর মহাপরিচালক ছিলেন।

তিনি আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন। শফী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীর পদত্যাগ এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে দারুল উলুম হাটহাজারীর ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। দুপুর থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়, রাত্রে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরদিন আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করে। ছাত্ররা সরকারের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়। পরে আহমদ শফী পদত্যাগ করলে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

আলস্নামা শাফী ২০০৯ সালে আজিজুল হক ও অন্যান্য সিনিয়র ইসলামী ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন যেখানে, ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।

ইসলামি এই প্রবীণ ব্যক্তিত্বের লেখা উর্দু গ্রন্থাবলি হচ্ছে- ফয়জুল জারি (বুখারীর ব্যাখ্যা), আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক্ব ওয়াল বাতিল, ইসলাম ও ছিয়াছাত এবং ইজহারে হাকিকাত। এছাড়া তার লেখা বাংলা গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে, হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ইসলাম ও রাজনীতি, সত্যের দিকে করুন আহ্বান এবং সুন্নাত ও বিদ’আতের সঠিক পরিচয়।

শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তার বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত