এম আহম্মেদ (যশোর থেকে) : আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ হবে কে হচ্ছেন যশোরের নতুন পৌরপিতা। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষনার পর মুহুর্ত থেকেই শহর জুড়ে ভোট আমেজ লেগেই আছে। রীতিমত ক্ষমতাসীন সম্ভাব্য মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা স্থানীয়ভাবে জনমত গঠনের লক্ষে গণসংযোগে নিজেদের পক্ষে ঢাক ঢোল পেটানো শুরু করেছেন। অনেকেই ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে নির্বাচনি বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সর্বশেষ দেন-দরবারে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে অনেক প্রার্থী । কেউ কেউ আবেদন ফরম কিনে যশোরে এসে গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। কেউ আবার জোরেসোরে কেন্দ্রীয়ভাবেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
এখনো পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন মোট ছয় (০৬) জন। তারা হলেন,
বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি বলেন, ‘দল যে আশা নিয়ে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিল, তা আমি সফলভাবে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। গত পাঁচ বছরে যশোর পৌরসভায় অভাবনীয় উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এখনো অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। পরীক্ষিত নেতা হিসেবে দলীয় নেত্রী যদি আবারো আমার হাতে নৌকা তুলে দেন, তাহলে যশোর পৌরসভাকে সারাদেশের মধ্যে মডেল হিসেবে গড়ে তুলবো। সেইসাথে শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।’
পৌরপিতা পদে রেন্টু চাকলাদারের নিকটতম প্রতিদ্বন্দী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের নিবেদিত কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। একজন পরীক্ষিত নেতা হিসেবে দলের কাছ থেকে আমি কিছুই পাইনি। আমি মনে করি দলের হাইকমান্ড বিবেচনা করে আমার হাতে নৌকা তুলে দিলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে যশোরবাসীকে সম্পৃক্ত করতে পারবো। সেইসাথে জনমনে এ সরকারের জন্য আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবো। এছাড়া পৌরবাসীর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করবো।’
এ পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর কবু। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে মানুষের জন্য কাজ করি। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমি তৃপ্ত হই। আমার প্রতিষ্ঠান কুইন্স হসপিটালে অসহায় মানুষের চিকিৎসা করাতে টাকার চিন্তা করি না। সমাজের একজন ছোটখাট সেবক ও দলের পরীক্ষিত একজন কর্মী হিসাবে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। অবশ্যই দলের হাইকমান্ড সবকিছু বিবেচনায় রেখে আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। নৌকার মাঝি হিসেবে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত মানুষের সেবা করে যেতে চাই।’
জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আসাদুজামান মিঠুও পৌর মেয়র পদে মনোনয়ন চাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলের একজন পরীক্ষিত কর্মী। তাছাড়া, সামাজিক কাজকর্ম ও দেশের যুবসমাজকে মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে ক্রীড়া ক্ষেত্রে কাজ করছি। সবকিছু বিবেচনায় রেখে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে প্রত্যাশা করছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে ও নির্বাচিত হলে যশোরের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হায়দার গনি খান পলাশ। তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও দলের পরীক্ষিত কর্মী। দল আমাকে কোনো কিছু দেয়নি। আমি আশাবাদী এবার দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।‘
এখনও পর্যন্ত মাত্র ১ জন মহিলা হিসেবে জেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ ভারতের দ্বিতীয় ও বাংলাদেশের প্রথম পৌরসভা যশোর। এই পৌরসভায় কখনো কোনো নারী নেতৃত্ব দেয়নি। বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। দলের একজন পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে দলীয় প্রধান আমাকে মনোনয়ন দেবেন- এমনটা প্রত্যাশা করি। দলীয় মনোনয়ন পেলে ও নির্বাচিত হলে আমি যশোর পৌরসভার উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।’
বি এন পির মনোনয়ন চাচ্ছেন সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত যশোর পৌরসভায় উন্নয়ন কাজ শুরু হয় আমি দায়িত্বে থাকাকালে। আমার শুরু করা কাজই চলমান রয়েছে। যার ক্রেডিট নিচ্ছেন বর্তমান মেয়র। এখনো নানাভাবে অবহেলিত পৌরসভার সাধারণ মানুষ। তারা তাদের সুখ-দুঃখের কথা মেয়রকে বলার সুযোগ পান না। অথচ, তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখভাল করাই পৌরপিতার কাজ। আমি নির্বাচিত হলে জনমানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবো। একইসাথে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি যশোর পৌরসভাকে নাগরিকদের জন্য আস্থার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবো।’
এছাড়া আরও দুজন বিএন পির মনোনয়ন চাচ্ছেন। তারা হলেন, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুল্লুক চান।
কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে সবাইকে এমাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় দফতরে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। যা প্রত্যাহার হবে দুদিন পর অর্থাৎ ৪ ফেব্রুয়ারি। সূত্র বলছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। যে সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে সাধারণ ভোটারদের অভিযোগ— ভোট নেয়ার সময় প্রার্থীরা পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজের আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর আর কেউ সে কথা মনে রাখেন না, এ জন্য এবার নির্বাচনে ভোট দেয়ার বিষয়টি সবাই গুরুত্ব সহকারে এবং প্রার্থী দেখে ভেবেচিন্তে দেয়ার কথা ভাবছেন। তাছাড়া পৌর মেয়র হওয়ার পর সাধারণ জনগন পৌর মেয়রের সাথে দেখা করার ও কথা বলার সুযোগ হারায় বলে জানিয়েছেন ভোটাররা।