আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ১:৪১

নরেন্দ্রপুরে ঐতিহাসিক দরবার শরীফে মসজিদ উদ্বোধন করলেন শাহারুল ইসলাম

এম আহম্মেদ (যশোর প্রতিনিধি) : নরেন্দ্রপুরে কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) জামে মসজিদের উদ্বোধন করলেন যশোর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম।

আজ শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) যশোর সদর উপজেলাধীন ১৪ নং নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) দরবার শরীফে এ মসজিদ উদ্বোধন হয়েছে।

: কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) এর ইতিহাস :

মূলত ৬৭ বছর পর নতুন কমিটির পূনপূন উদ্যোগে সেজে উঠছে জিরাট গ্রামে মাজারস্থ কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) দরবার শরীফ। কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম হিমু ‘র পরিকল্পিত চিন্তাধারায় এরই মধ্যে দরবার শরীফ প্রাঙ্গনে গড়ে উঠেছে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা,অযুখানা এবং নতুন পাঁকা মসজিদ যা প্রাণ ফিরিয়েছে রূপদিয়া-জিরাট বাসীর আস্থা ও এ অঞ্চলের ইসলাম প্রচার প্রসারে ভুমিকা রাখা কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) দরবার শরীফের।

কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) দরবার শরীফ দীর্ঘ ৬৭ বছর অবহেলিত ছিল। ইরান থেকে পাকিস্তান , পাঞ্জাব হয়ে যশোর জেলাধীন নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের জিরাট গ্রামে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আনুমানিক ১২০ বছর আগে কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) আসেন। এরপর পাগলের বেশ ধরে তিনি মানুষকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। প্রথমত এ অঞ্চলের মানুষ খাতের (রাঃ) চিনতে পারেননি। পরে ফুরফুরা শরীফের হুজুর আবু বক্কর সিদ্দীকি (রাঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্যেশ্যে খুলনায় যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে রূপদিয়া আন্ধারী বটতলা নামক স্থানে গাড়ি থামিয়ে হাফেজ খাতের (রাঃ)’র সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটেই রওনা হন ওদিকে আল্লাহ রহমতের শক্তিতে হাফেজ খাতের (রাঃ) সবকিছু জানতে পেরে দরবার ছেড়ে রূপদিয়ার দিকে রওনা হন। আবু বক্কর সিদ্দীকি (রাঃ)‘র সাথে থাকা সফর সঙ্গীরা বোঝার আগেই রূপদিয়ার বর্তমান বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে হাফেজ খাতের (রাঃ) আবু বক্কর সিদ্দীকি (রাঃ) দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করেন। সফর সঙ্গীরা পাগল লোকটির সাথে আবু বক্কর সিদ্দীকি (রাঃ)’র আলিঙ্গনের দৃশ্য দেখে অবাক হলে আবু বক্কর সিদ্দীকি (রাঃ) বলেন, ”হে যশোরবাসী তিনি পাগল নন তিনি আল্লাহর কুতুব।” সেদিন থেকেই মরহুম হাফেজ খাতের (রাঃ)’র নামের সাথে কুতুব উপাধী যুক্ত হয়ে কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) নামেই তিনি পরিচিত।

এর আগে মরহুম কুতুব হাফেজ খাতের এর পুত্ররা এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জিরাট আলিম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একই সাথে পদ্মবিলা ফাযিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ভূমিকা ছিলো পরিবারটির। গাজী পাড়া জামে মসজিদ তাদেরই প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদ।
সম্প্রতি মরহুম কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ)’র বংশধর আনিছুর রহমান সহ এলাকাবাসীর চেষ্টায় নতুন করে জেগে উঠছে দরবার শরীফ। নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম হিমু দরবার শরীফ এর প্রধান পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব গ্রহণের পরে ইউনিয়নের ০৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালাম আসাদ পারভেজকে সাথে নিয়ে ইতিমধ্যে কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা।

মরহুম কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ)’র পরিবার সূত্রে জানা যায়, রূপদিয়া বাজারের বাসস্ট্যান্ডের প্রচলন হয় প্রথম যেদিন আবু বক্কর সিদ্দীকি (রাঃ) রূপদিয়ার বর্তমান বাসস্ট্যান্ডে কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) কে আলিঙ্গন করেন। জানা যায়, হাফেজ খাতের (রাঃ) কে ঐদিনই প্রথম কুতুব উপাধি দেন আবুবকর সিদ্দিকী (রা:)।

কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ)’র মাঝে আল্লাহর রহমতের শক্তির কিছু উদাহরণ মিলেছিলো। পরিবার সূত্রে জানা যায়, একদিন কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) তার এক মুরিদের কাছে মাছ খেতে চাইলে ওই মুরিদ বিল থেকে আর একজনের পেতে রাখা ঘুনি থেকে মাছ চুরি করে নিয়ে আসলে আল্লাহর রহমতের শক্তিতে ওই মুরিদকে মাছগুলো দরবার শরীফের পুকুরে ছেড়ে দিতে বললে অলৌকিক ভাবে মুরিদের নিজের ধরা মাছ গুলি ভেসে থাকে এবং চুরি করা মাছগুলি পানিতে ডুব মারে। এভাবেই ১২০ বছর আগে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসা আল্লাহর এই কুতুব এ অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য দুটি মাদ্রাসা জিরাট আলিম মাদ্রাসা এবং পদ্মবিলা ফাযিল মাদ্রাসা তার অন্যতম অনন্য নিদর্শন।

স্থানীয় মুসল্লিরা বলছে, সম্প্রতি মরহুম কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ)’র দরবার শরীফে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন করে আল্লাহর এই কুতুবের দরবার শরীফে তার ভক্ত-অনুরাগীদের আসা যাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত মরহুম কুতুব হাফেজ খাতের (রাঃ) হাফেজিয়া মাদ্রাসা’র সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, “আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দরবার শরীফ নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছি। সবথেকে বড় উৎসাহ পাচ্ছি দরবার শরীফের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক মনিরুল ইসলাম হিমু’র কাছ থেকে, আমাকে সর্বোচ্চ সাহস যুগিয়ে সহযোগিতা করছেন নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সালাম আসাদ পারভেজ। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। মসজিদের জমি রেস্ট্রি শেষে মসজিদ নির্মাণ ও উদ্বোধন হলো। শীঘ্রই আমরা মাদ্রাসা কক্ষগুলো পাঁকাকরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব। সমাজের বিত্তবান এবং সুশীল মানুষদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।”

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়মী লীগ নেতা আব্দুল মতলেব বাবু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম বিশ্বাস, আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম হিমু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও ইউপি সদস্য জাকির হোসেন, ০৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আজিম বিশ্বাস, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক যুবলীগ নেতা আব্দুল আলীম, ০৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি গনি মোল্যা, ০৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সালাম আসাদ পারভেজ, ০৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আফতাব হোসেন, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিন আলম, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কিরণ, ছাত্রলীগ নেতা ডি এম আল আমিন হোসেন, প্রচার সম্পাদক মোঃমহিউদ্দিন সানি, ছাত্রলীগ নেতা কাদের বরকন্দাজ প্রমুখ।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত