‘নকশী কাঁথা, ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা’- যশোরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য আধুনিকায়নের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে। যশোরের এ ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য ব্যক্তি উদ্যোগে দীর্ঘ ৮ বছর গবেষণা করেছেন সৈয়দ নাকীব মাহমুদ।
তিনি বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন অঞ্চল, বরিশাল ও গাজীপুর থেকে দীর্ঘ ৮ বছর সময় নিয়ে উচ্চ ফলনশীল রস উৎপাদন করে এমন খেজুরের গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৮ হাজার খেজুরের চারা উৎপাদন করেছেন।
মঙ্গলবার যশোরের মণিরামপুরের নাগরঘোপ গ্রামে সরকারি জায়গায় দেশীয় উন্নত জাতের সেই চারা রোপণ করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এখানে উন্নত জাতের খেজুর বাগান করা হচ্ছে। পরে সেখানে এই গাছ নিয়ে আরও গবেষণা করা হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ জিয়াউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান, কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. এম. আরাফাত হোসেন ও গবেষক সৈয়দ নাকীব মাহমুদ।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, নানা কারণে যশোরের ঐতিহ্য খেজুরের গুড়-পাটালির সংকট তৈরি হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৈয়দ নাকীবের মাধ্যমে আমরা আজ এখানে চারা রোপণ করলাম। আগামীতে আমরা জেলার বিভিন্ন জায়গাতেও চারা রোপণের কর্মসূচি হাতে নিবো।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, ‘উন্নত জাতের এ চারা রোপণের মাধ্যমে মণিরামপুরে খেজুরের রসের যে ঐতিহ্য সেটা আবারও ফিরে আসবে।’
গবেষক সৈয়দ নাকীব মাহমুদ বলেন, ‘যশোরে খেজুরের গুড় ও পাটালিই নয় বরং একসময় চিনিও উৎপন্ন করা হতো। কিন্তু খেজুরের রস ও খেজুরগাছি কমে যাওয়ায় ইট ভাটা ও অন্যান্য জ্বালালি হিসেবে গাছ বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে খেজুরের রস ও গুড় কমে যায় এ অঞ্চলে, অন্যদিকে খেজুরের রস থেকে চিনি উৎপাদন হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।’ ‘এটা দেখে প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে আমার কষ্ট লাগে। তারপর আট বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে মোট আটটি জাতের খোঁজ পায় যেগুলো প্রচুর রসদিয়ে থাকে। বর্তমানে গাছগুলোতে ২-৩ লিটারের বেশি রস পাওয়া যায় না, কিন্তু এ জাতের গাছে ১২ থেকে ১৬ লিটার পর্যন্ত রস পাওয়া যায়।’
‘অতিরিক্ত রস পাওয়া যাওয়ায় গাছি’রা অধিক পরিমাণে রস সংগ্রহ করতে পারবেন এবং এটা থেকে খেজুরের গুড় বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে।’ গবেষক সৈয়দ নাকীব মাহমুদ আরও একটি আশাবাদের কথা জানালেন। তিনি বলেন, ‘গাছিরা সাধারণত দিনে ১৫ টির বেশি গাছে উঠতে পারে না কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমরা গাছে উঠার একটি যন্ত্র তৈরির শেষ প্রান্তে আছি, যার ফলে আমাদের গাছিদের গাছে উঠতে কষ্ট হবে না এবং আরও বেশি গাছে উঠতে পারবেন।’