লেখক: বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ।। জন্মদিন সবসময়ই আনন্দের উপলক্ষ। এটি সময়ের অববাহিকায় তারুণ্যের আশা ও চমত্কারিত্ব এবং স্বপ্ন পূরণ ও অপূর্ণতা স্মরণের সময়। আমাদের আশা ও প্রত্যাশা এবং সেগুলোর বাস্তবায়নের মধ্যে কোনো সরল রৈখিক সম্পর্ক নেই। কালের পরিক্রমায় জীবনের প্রতিবন্ধকতা ও সুযোগ আমাদেরকে অপ্রত্যাশিত সব জায়গায় নিয়ে যায় এবং আমরা যা চিন্তা করতে পারি না এমন সমস্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে।
আজকে, ৪ জুলাই তেমনই একটি জন্মদিন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্মদিন। যুক্তরাষ্ট্রের এই জন্ম ছিল যেকোনো প্রাণের জন্মের মতোই বেদনাদায়ক এবং বিশৃঙ্খল। তখন আশার সাথে সাথে ভীতিও কাজ করত। তখন এমন একটা সময় যখন ১৩টি উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে মীমাংসায় রত, এক অনন্য পরীক্ষায় উপনীত, যা এ জাতির নিজস্ব ইতিহাসের গতিপথ রচনা করবে এবং সারা বিশ্বের সামনে আলোক-বর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। এই পরীক্ষার গতি-প্রকৃতি ১৭৭৬ সাল থেকেই উন্মোচিত হচ্ছিল। এটি ছিল এমন এক পরীক্ষা যা চিরকালই পরিপূর্ণতার সন্ধানে রত। এর কারণ, যখন জীবন ও সময় প্রকৃতি ও মানব-সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়, তখন একটি দেশকে সেই প্রতিবন্ধকতার সমাধান বের করতে হয়। একটি সরকার যা গঠিত হয় মানুষের ‘অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অধিকার’ রক্ষার জন্য, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘জীবন, স্বাধীনতা ও সুখের সন্ধান’ তখন সেই সরকারকে অবশ্যই সময়ের সাথে মানিয়ে চলতে হয় এবং এমন সব পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয় যা স্বাধীনতা, সুখ ও এমনকি জীবনকেও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
আমাদের এই ২৪১তম জন্মদিনে আমরা আনন্দের সাথে আমাদের মূল নীতিমালা ভাগ করে নিতে চাই যা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পথ দেখায়—প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার, ক্ষমতার বিভাজন, ভারসাম্য, ব্যক্তি অধিকার ও আইনের শাসন—যার সব কিছুই সন্নিবেশিত রয়েছে আমাদের সংবিধানে।
ছেচল্লিশ বছর আগে যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, এ দেশের নতুন সরকার তখন একটু হলেও আমেরিকার উদাহরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। সকল নাগরিকের মানবাধিকার, সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আপনারা গণতান্ত্রিক পথ বেছে নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে যেমনটি হয়েছে, স্বাধীনতার এই পথ কখনোই সরল রেখায় চলেনি। তবে নিশ্চিত থাকুন এই পথে যুক্তরাষ্ট্র অদম্য বন্ধু হিসেবে আপনাদের পাশে থাকবে, আপনাদের স্বাধীনতার সমর্থন করবে, আপনাদের অর্জন উদযাপন করবে, এবং আপনাদের উন্নয়নের প্রসারে সাহায্য করবে। আমাদের উভয় দেশই সম্মান করে বৈচিত্র্য, সহনশীলতা এবং প্রবৃদ্ধি। আসুন আমার সাথে যোগ দিন একটি পরীক্ষার জন্ম উদযাপন উপলক্ষে যা ২৪১ বছর আগেকার মতোই এখনো জীবন্ত রয়েছে, যা উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিদিনই এবং এই বিশ্বের শুভ বুদ্ধির নারী-পুরুষকে একত্রিত করে চলেছে।