যশোর সদরের চুড়ামনকাটির চয়ন দাস (১৭) নামে এক কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়ার বিষয় নিয়ে গোলযোগের জের ধরে তাকে এলোপাতাড়ি মারপিটের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ হত্যা রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত হৃদয় কুমার দাস (১৯) ও প্রদীপ দাস (২৩) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
হৃদয় শানতলা দাসপাড়ার পরিতোষ কুমারের ছেলে ও প্রদীপ দাস একই গ্রামের নির্মল দাসের ছেলে। প্রদীপ দাসকে ২৫ ফেব্রুযারি যশোর সদরের বসুন্দিয়া বাজারস্থ জনৈক জয়’র সেলুনের দোকান থেকে এবং হৃদয় কুমার দাসকে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডের দিকনগর গ্রামে জনৈক খোকন দাসের বসতবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআইয়ের একটি চৌকস দল। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন।
পিবিআই জানিয়েছে, যশোর সদরের শানতলা পেপসি কোম্পানির ১ নং গেটের সামনে ২৫ ফেব্রুয়ারি চয়ন দাসকে হত্যা করে রাস্তার উপর ফেলে রাখে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আশিক ও রাজু নামে দুই বন্ধু চয়নকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার অবহিত হলে যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিনকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর রেশমা শারমিনের নেতৃত্বে এসআই রেজোয়ান হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেন।
ছায়া তদন্তকালে পিবিআই জানতে পারে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টার দিকে চুড়ামনকাটি কুন্ডুপাড়ায় নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়ার বিষয় নিয়ে চুড়ামনকাটির দাসপাড়ার কয়েকজনের সাথে শানতলা দাসপাড়ার কয়েক তরুণের গোলযোগ হয়। বিষয়টি স্থানীয়রা মিমাংসা করে দেয়। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিকরগাছার মল্লিকপুর নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে যান আগের দিন গোলযোগে যুক্ত চুড়ামনকাটি দাসপাড়া এবং শানতলার দাসপাড়ার সেই যুবকরাই। সেখানে উভয়ের মধ্যে ফের মারামারি হয়। একপর্যায়ে চয়নের বন্ধু জবীন দাস, স্বাধীন দাসকে চাকু দিয়ে আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে। তাদের চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চয়ন তার বন্ধুদের দেখার জন্য হাসপাতালে যায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে শানতলা পেপসি কোম্পানির সামনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হৃদয় ও প্রদীপসহ শানতালা দাসপাড়ার ১৫/২০ জন চয়ন দাসসহ অন্যদের পথরোধ করে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এতে চুড়ামনকাটির কয়েকজন জখম প্রাপ্ত হয়। তারা চয়নকে গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রাখে।
জড়িতদের গ্রেফতাররের জন্য পিবিআই পরিদর্শক তৈয়বুর রহমান, এসআই রেজোয়ান, এসআই গোলাম আলীসহ একটি চৌকস দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনাকালে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি প্রদীপ দাসকে বসুন্দিয়া এবং অপর আসামি হৃদয় কুমার দাসবে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডের দিকনগর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাদেরকে সোমবার যশোরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।