আজ - বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - বিকাল ৪:২১

ঝিকরগাছার ইউএনও ভূপালী সরকার কেনো এতো আলোচনায়।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ভূপালী সরকার কর্মগুনে মাত্র ২৪ দিনে জয় করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়। রীতিমত তিনি প্রশংসায় ভাসছেন। এরমধ্যে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে একটি সংবাদ ভাইরাল হয়েছে। ‘ইউএনও চলেন ঘড়ির কাটায়’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি এখন টক অব দ্য টাউন।

ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ৮টা ৫০ মিনিট। শিক্ষার্থীসহ অন্যদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ছে না। কিন্তু এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পৌঁছে যান ইউএনও ভূপালী সরকার। সকাল ৯টায় ওই বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা, সেখানে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি।

ওই বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরেকটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে নির্মাণাধীন সেতু তাঁকে বাধসাধে। সেখানেই গাড়ি রেখে যথাসময়ে গন্তব্যে হাজির হতে চেপে বসেন ভ্যানে। ঠিক সময়ে সেই বিদ্যালয়ে পৌঁছেও যান। সেখানে অনুষ্ঠান সেরে নিজ কার্যালয়ে ফিরে আরেকটি নির্ধারিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

এ গল্প চাউর হয় সেইদিনই। কারণ, যথাসময়ে কোনো কাজ শুরু ও শেষ করার প্রবণতা জাতি হিসেবে আমাদের নেই। সময় জ্ঞান নেই বললেই চলে। কোনো অনুষ্ঠান বিকেল ৪টায় ঘোষণা করা হলে মানুষ ধরেই নেন শুরু হতে ৬টা বাজবে। সেইভাবে মানুষও দেরিতে অনুষ্ঠানে আসেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠিকঠাক সময়ে হয়-ই না। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও একটু দেরি করে অনুষ্ঠানে যোগ দেন, যাতে অন্যান্য অতিথিসহ আমন্ত্রিতদের এসেই তিনি দেখতে পান। খালি মঞ্চ দেখার শঙ্কা থেকে এই মানুষিকতা অধিকাংশ ধারণ ও লালন করেন।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ইউএনও ভূপালী সরকার। সময় মেনে চলার জন্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এই নির্বাহী কর্মকর্তার খ্যাতি সর্বমহলে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ তিনি এখানে যোগদান করেন গত ১০ সেপ্টেম্বর। এতদিন যেসব নিয়ম চলে আসছে-তার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হলে নয়া কর্মকর্তা যোগদান করলে বিভিন্ন মহল তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আসেন। এই শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় পর্ব শেষ হতে কেটে যায় মাস। কিন্তু ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভূপালী সরকারের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায়নি। তিনি যোগদান করেই নেমে পড়েছেন কাজে।

জানা যায়-ভূপালী সরকারের জন্ম সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে। বাবা নিমাই সরকার পেশায় কৃষক এবং মা প্রমীলা সরকার গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর জনতা ব্যাংকে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন।

৩৫তম বিসিএস ক্যাডারে (প্রশাসন) ২০১৭ সালে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আইসিটি, এলএও এবং আরডিসি শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এলএও এবং আরডিসি পদে যোগ দেন। এরপর খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পান।

মাটির মানুষ হিসেবে ইতিমধ্যে উপজেলায় পরিচিতি পেয়েছেন ভূপালী সরকার। কর্মকর্তা হিসেবে নয়, তিনি পরিচিতি পেয়েছেন কাজের মানুষ হিসেবে। ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্রসন্তানের জননী ভূপালী সরকার। স্বামী তপন কুমার সরকার কলেজশিক্ষক।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত