- এক গডফাদারের গল্প
খানজাহান আলী নিউজ: শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। দেশজুড়েই তার পরিচিতি। গণমাধ্যমে বারবারই হয়েছেন খবরের শিরোনাম। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি ‘গডফাদার’ উপাধিও পেয়েছেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনায়ও তিনি বিতর্কিত হন। এরও আগে ত্বকী হত্যা মামলায় তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত বলে জোরালো অভিযোগ ওঠে। তবে এসব অভিযোগ ছাপিয়ে এলাকার অনেকেই বলেন, পুরো নারায়ণগঞ্জ চলে শামীম ওসমানের অদৃশ্য ইশারায়। তার ইচ্ছার বাইরে নারায়ণগঞ্জে কোনো কিছুই ঘটে না।
তবে গণমাধ্যমে নেতিবাচক ইমেজ থাকলেও শামীম ওসমানের জনসভা মানেই লাখো মানুষের জমায়েত। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নারায়ণগঞ্জের মাটিতে সাধারণ মানুষের কাছে শামীম ওসমানের জনপ্রিয়তা অনেকটাই আকাশচুম্বী। তার সমর্থকদের দাবি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে তিনি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করতে সক্ষম হন। এবার উন্নয়নের সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যাবে।
রাজধানীর উপকণ্ঠে শিল্পসমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ এ জনপদে শামীম ওসমানের একমাত্র এবং সবচেয়ে বড় সমালোচক সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। মেয়র নির্বাচনের আগে প্রতিটি বাকযুদ্ধে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে হেন কোনো অভিযোগ নেই যা তিনি করেননি। প্রকাশ্যে শামীম ওসমানকে ‘গডফাদার’ও বলেন। শামীম-আইভির মধ্যে এ সাপে-নেউলে সম্পর্কের কথা টিভি টকশো থেকে শুরু করে দেশজুড়েই ব্যাপক আলোচিত। তবে অজ্ঞাত কারণে প্রতিবাদমুখর সেই আইভীও এখন নীরব। স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও আইভীর সেই জনপ্রিয়তা এখন অনেকটাই ভাটার দিকে। এর অন্যতম কারণ, আইভীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির জোরালো অভিযোগ। তাছাড়া শামীম ওসমানও নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মাঠের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এর ফলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগকে একত্রিত ও শক্তিশালী করতে অনেকটাই সক্ষম হন।
নেতিবাচক ইমেজের নেপথ্যে : স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ’৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে শামীম ওসমান অনেকটা রাতারাতি পলিটিক্যাল হিরো বনে যান। আওয়ামী লীগের সম্মুখভাগে দাপুটে কোনো নেতা বলতেই তার নামটি আগে চলে আসত। এর পটভূমি ছিল যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। এর পরপরই তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার লং মার্চ নারায়ণগঞ্জে আটকে দেয়ার মতো বড় রাজনৈতিক ক্ষমতার শো-ডাউন দেখান শামীম ওসমান। খালেদা জিয়ার লং মার্চ থামিয়ে দিতে শত শত ক্যাডার নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন স্বয়ং শামীম ওসমান নিজেই। এরপর প্রায় ২ দশক ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এক অপ্রতিরোধ্য দাপুটে রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি পান একেএম শামীম ওসমান, যা এখনও বহাল আছে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার ওই লং মার্চে সহিংস ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল একটি চক্র। বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবাহনের বহর ঢাকা থেকে ফেনী এলাকায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বোমা মেরে তিনটি বাস উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এজন্য লং মার্চের বহরে থাকা তিনটি বাসকে ভিন্ন ভাবে চিহ্নিত করাও হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস তিনটিতে নির্মাণ শ্রমিক ও দৈনিক মজুরিতে ভাড়া করা নিম্ন আয়ের কয়েকশ’ মানুষ বোঝাই করা হয়। নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য ‘অ্যাকশন টাইমও’ নির্ধারণ করে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু এ পরিকল্পনার আগাম খবর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছলে সরকার বিচলিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ততক্ষণে বিএনপির লং মার্চ যাত্রাবাড়ী এলাকা ছাড়িয়ে যায়। এ সময় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে নারায়ণগঞ্জ এলাকার দাপুটে নেতা হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি পাওয়া শামীম ওসমানকে এ হত্যাকাণ্ড রোধে ‘কিছু একটা’ করার অনুরোধ জানানো হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা খানজাহান আলী 24.com কে বলেন, দলীয় হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর শামীম ওসমান বিএনপির লং মার্চ বহর নারায়ণগঞ্জে আটকে রাখতে সক্ষম হন। এতে করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বহরটি অন্তত ৩ ঘণ্টা আটকে থাকে। এরপর নানা নাটকীয়তার একপর্যায়ে বিকালের দিকে শামীম ওসমানের সমর্থকরা সরে গেলে লং মার্চ আবার যাত্রা শুরু করে। এ ঘটনা দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে। দেশের ভেতর তো বটেই দেশের বাইরেও স্থানীয় নেতা শামীম ওসমানের নেতিবাচক ইমেজ ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পর দেশের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম তাকে ‘গডফাদার’ হিসেবে উপস্থাপন করে।
এর কিছুদিন পরই শামীম ওসমান আবারও ক্ষমতার শো-ডাউন দেখান ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। তৎকালীন দাপুটে ও ক্ষমতাধর জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শামীম ওসমান। পরপর এ দুটি বড় রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনার তুঙ্গে উঠে আসেন শামীম ওসমান। একই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী রাজনীতিকদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হন তিনি। এরই জেরে ২০০১ সালের ১৬ জুন শামীম ওসমানের ওপর এক নৃশংস বোমা হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ২০টি তাজা প্রাণ চিরতরে নিভে যায়। চির পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও অনেকে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আজমেরী ওসমানের নাম উঠে এলে ফের আলোচনায় আসেন শামীম ওসমান। এছাড়া চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনায়ও শামীম ওসমান বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেননি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মাদক সম্রাট নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে গেলে তার নেতিবাচক ইমেজের আগুনে ঘি ঢালার অবস্থা তৈরি হয়। তবে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, নেতিবাচক ইমেজ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন দেশের অন্যতম দাপুটে এ সংসদ সদস্য। প্রতিটি ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে আবার সবকিছু শুরুর চেষ্টাও করছেন তিনি। এর অন্যতম নজির শামীম ওসমানের একটি চিঠি। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার বা ওসমান পরিবারের নামে কেউ চাঁদা দাবি করলে তাৎক্ষণিকভাবে যেন তাকে জানানো হয়। শুধু চিঠিই নয়, চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যক্তিগত অর্থে জেলার বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বরসহ ৫ লাখ পোস্টার ছাপিয়ে শহরের ওলি-গলিতে ছড়িয়ে দেন তিনি। শামীম ওসমানের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়।
নেতিবাচক ইমেজ ও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান খানজাহান আলী24.com কে বলেন, তিন পুরুষ ধরে তারা নারায়ণগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ফলে কিছু মানুষ তাদের সমালোচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক। ত্বকী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম ১৭ দিন ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বি তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। কিন্তু কিছুদিন পর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের জড়িয়ে নানা কথাবার্তা বলা শুরু হয়। সে কারণেই আমরা এ হত্যাকাণ্ডের একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আসছি।
সাত খুনের ঘটনায় নূর হোসেনকে ‘শেল্টার’ দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আমিই প্রথম বলেছিলাম এ হত্যাকাণ্ডে র্যাব-১১ এর কয়েকজন কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। র্যাব সদর দফতরকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ব্যক্তিস্বার্থে কতিপয় বিপথগামী অফিসার এ ঘটনা ঘটায়। প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের দিনই ঘটনার সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতার কথা প্রধানমন্ত্রীসহ র্যাবের উচ্চপর্যায়কেও আমি অবহিত করেছিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নূর হোসেনের কাছ থেকে র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা নিতেন। খুনের দায়ে এ তিন কর্মকর্তা এখন বিচারের মুখোমুখি। নূর হোসেনকেও বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তাই নূর হোসেনকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগ মোটেও বাস্তবসম্মত নয়।’
নেতিবাচক ইমেজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে নেতিবাচক ইমেজ দিয়েছে দেশের একটি বিশেষ পত্রিকা। এর কারণ, নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি নিষিদ্ধপল্লী তুলে দিয়ে আমি সেখানকার অন্তত ৩ হাজার নারীকে পুনর্বাসিত করেছি। কিন্তু এতে করে ওই পত্রিকার শীর্ষ পর্যায় ক্ষুব্ধ হয়। কারণ, তুলে দেয়া নিষিদ্ধ পল্লীতে এনজিও খুলে ব্যবসা করতেন পত্রিকাটির শীর্ষ কর্ণধারের স্ত্রী। সেজন্য তারা তাদের পত্রিকার প্রচার সংখ্যা কাজে লাগিয়ে আমাকে দেশজুড়ে গডফাদার হিসেবে পরিচিত করে তোলে।’ শামীম ওসমান বলেন, “এ বিষয়ে আমি বিভিন্ন সময় পত্রিকাটিতে প্রতিবাদ পাঠিয়েছি। মামলাও করেছি। কিন্তু তারা একটি প্রতিবাদপত্রের জবাবও দেয়নি। একপর্যায়ে ওই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করি। আমাকে গডফাদার হিসেবে পরিচিত করে তোলার কারণ জানতে চাই। আমার এ প্রশ্ন শুনে পত্রিকার শীর্ষ ব্যক্তিটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। কুৎসিত হাসির সঙ্গে বলতে থাকেন, ‘এসব তোমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে তোমার বোনের হাত কেটে দেয়া হচ্ছে।’ সম্পাদকের এ কথায় আমি অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করি, আমার দুটো বোন দু’জনেই বিদেশে থাকেন। তারা রাজনীতিও করে না। তারা কেন আপনার টার্গেটে পরিণত হচ্ছে? এর উত্তরে আমাকে বলা হয়, তোমার হাসিনা বোনের অন্যতম শক্তি হচ্ছো তুমি। তাই তোমাকে সাইজ করা হচ্ছে।” শামীম ওসমান বলেন, একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকের এ জঘন্য পরিকল্পনা শোনার পর আমি অবাক হই। নেত্রীর কাছে গিয়ে সব খুলে বলি। নেত্রী আমাকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘তুমি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাক। কেউ তোমার কিছুই করতে পারবে না।’
একটা দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাকে দেশ ছাড়তে হয়। যেমন গত ১/১১ সরকারের সময় ভারতে চলে যাওয়ার কিছুদিন পরই তখনকার দাপুটে সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার বারী আমাকে ফোন করেন। বারী বলেন, আপনি ভালো লোক। দেশে চলে আসুন। কোনো অসুবিধা হবে না। শুধু আমাদের হয়ে আপনাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।’ ব্রিগেডিয়ার বারীর ঘৃণ্য এক শর্ত ছিল। তা হল, স্বীকারোক্তির মোড়কে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে সাজানো কুৎসার নাট্যচিত্র আমাকে পড়তে হবে। কিন্তু ঘৃণাভরে তার এই প্রস্তাব আমি প্রত্যাখ্যান করি। এতে ব্রিগেডিয়ার বারী ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনাকে আর বাঁচানো গেল না।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতি আমার এক ধরনের অন্ধ ও গভীর আবেগ রয়েছে। তাই যখনই শেখ হাসিনা আক্রান্ত হন তখন আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আবেগের বসে অনেক কর্মকাণ্ড করে ফেলি। ১৯৭৫ সালের আগস্টে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানাতে বাইসাইকেলে চেপে হাতে লেখা পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে প্রথম পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। শুধু আমি নই আমার বড় ভাইও বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর পেয়ে বিয়ের আসর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন’। তিনি বলেন, “এ অন্ধ আবেগের জন্য আমাকে কঠিন মূল্যও দিতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের রাতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়, ‘আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে আপনি সরে দাঁড়ান।’ এ নির্দেশে আমি মর্মাহত হই। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ আবেগ থেকে আমি বুকে কষ্ট চেপে এ নির্দেশও মেনে নিয়েছিলাম।” শামীম ওসমান বলেন, ‘শুধু তাই নয়, একটি গোপন কথা অনেকেরই জানা নেই। নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে আমার কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আইভীর পক্ষে ভোট দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলাম। আইভী মেয়র নির্বাচিত হলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রকাশ্যে আইভীকে অভিনন্দন জানাতে বলা হয়। বুকে কষ্ট চেপে রেখে আমি সে কাজটিও করি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ’৭৫-এর পর রাজনীতি করছি তারা অনেকটাই আবেগ ও হৃদয় দিয়ে রাজনীতি করতে শিখেছি। আমাদের একটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য- বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়া। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির মাঠে আমরা অনেকটাই বেমানান। কারণ এখন আবেগের রাজনীতি অচল।
এখন রাজনীতি মানেই মস্তিষ্কের খেলা। কিন্তু এখনও আমরা একেবারেই নিরাশ হয়ে যাইনি। কারণ যার কাছে আমরা আবেগ ও জনগণকে ভালোবাসার রাজনীতি শিখেছি সেই মাতৃতুল্য শেখ হাসিনা যতদিন রাজনীতিতে আছেন ততদিন আমরা আবেগের রাজনীতিতে আছি। আর শেখ হাসিনা যেদিন থাকবেন না সেদিন শামীম ওসমানের মতো আবেগী রাজনীতিকদের অনেকেই আর মাঠে থাকবে না।’