নিজস্ব প্রতিনিধি: জেলে যাওয়ার আগেও বিএনপি নেতাদের ধারণা ছিল, বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ দু-চার দিন কারাগারে থাকতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন পুরো বিপরীত।
দিন যতই যাচ্ছে, বিএনপি নেতাদের সেই বিশ্বাসে চির ধরছে। এখন দলের অধিকাংশ নেতাই বলছেন, বেগম জিয়ার কারাবাস ‘দীর্ঘায়িত’ হতে পারে। এটা তারা ভাবতেই পারেননি। এ অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হতে পারে। সেইসঙ্গে বিএনপি ও ২০-দলীয় জোট নেতাদের বড় একটি অংশকে নিয়েই নির্বাচনের পথে হাঁটতে চায় সরকার।
বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন করে দল ও জোট ভাঙার তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিএনপি ও জোটের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল ভাঙার অপচেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বিএনপির অনেক নেতার সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছে একটি মহল। কিন্তু নেতাদের টলাতে পারেনি। সমানতালে ২০-দলীয় জোটের নেতাদেরও নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি ভয়ও দেখানো হচ্ছে তাদের। খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনে যাওয়ার বার্তা পাঠানো হয়েছে জোটের প্রায় সব দলের কাছেই। তবে কোনো দলই তাদের মনোভাব স্পষ্ট করেননি। জোটের একাধিক দল পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও জানা গেছে।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, কিছুদিন আগেও লেবার পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দুই ভাগে বিভক্ত হয়। সেখানেও ষড়যন্ত্র হয়েছে। ছোট ছোট অন্য দলেও ভাঙনের চেষ্টা চলছে। তবে ভগ্নাংশ দুই দলই একে অন্যকে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ আনছে। অবশ্য কয়েক দিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘সরকার ২০-দলীয় জোট ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের জোট অটুট রয়েছে। জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র কখনই সফল হবে না।
বিএনপি সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগে ও পরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় দলীয় ঐক্য। বিশেষ করে বিএনপি-প্রধানের অনুপস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। সর্বশেষ সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের বৈঠকেও এ বিষয়টি নিয়ে একাধিক নেতা বক্তব্য দেন। একইসঙ্গে এই দুঃসময়ে জোটের মধ্যেও সব ভুল বোঝাবুঝি দূর করে একতাবদ্ধ হয়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তও হয়। বৈঠকে আন্দোলনের নতুন কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়। জোটের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্বও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, বিএনপি চেয়ারপারসনের কারামুক্তি দীর্ঘায়িত করতে সরকার তৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। এ নিয়ে সোমবার সিনিয়র নেতাদের বৈঠক হয়েছে, এটা তেমন কিছু নয়। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ জোটের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে এ মুহূর্তে ‘নরম’ না ‘গরম’ কর্মসূচি দেওয়া হবে তা নিয়েও নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীর বড় অংশই চায় কঠোর কর্মসূচি। তারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে অন্তত খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা চান, রাজপথে শান্তিপূর্ণ ‘নরম’ কর্মসূচি। একইসঙ্গে শীর্ষ নেতারা এও বলছেন, এ মুহূর্তে বড় কোনো কর্মসূচি দেওয়া মানেই সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া। এ বিষয়টি জেলে যাওয়ার আগেই বেগম জিয়া বলে গেছেন বলে উল্লেখ করেন ওইসব নেতা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ঘিরে বিএনপি এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। সম্মিলিতভাবে আমরা রাজপথের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। একইসঙ্গে আইনি লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা বেগম জিয়াকে মুক্ত করব। বিএনপি বা জোট ভাঙবে— তা আমরা বিশ্বাস করি না। সরকার ও তার বিভিন্ন সংস্থার অপপ্রচার এগুলো।
সূত্র: সিএনএন বিডি