আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১১:১০

শাহীন চাকলাদারকে-নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একটি মহল!

স্টাফ রিপোর্টার : যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদারকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি মহল। আগামী সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ আসনে শাহীন চাকলাদার শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ায় ওই চক্রটি তার ভাবমূর্তি নষ্টের চক্রান্ত শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে চাকলাদার পরিবার নিয়ে আক্রোশমূলক ও মানহানিকর তথ্য সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করছে। শনিবার প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

গত ৪ এপ্রিল প্রথম আলো পত্রিকায় ‘যশোরে চাকলাদাররাই সব’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী রায়হান।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, শাহীন চাকলাদার ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। ১৯৯৭ সালে শহর আওয়ামী লীগের সদস্য, ১৯৯৮ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ২০০২ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোনীত হন। এরপর তৃণমূলের সরাসরি ভোটে শাহীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ফলে মাত্র ১৩ বছর আওয়ামী লীগের সক্রিয় থাকা শুধুই হাস্যকর। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, মনগড়া খবরে বলা হয়েছে ২০০৯ সালের পর প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছে। আর এর অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, শহরের কাঁঠালতলার বাড়ি, রাজধানীর কলাবাগান ও মহাখালী ডিওএইচএস’র বাড়ি। অথচ কাঁঠালতলার বাড়ি কেনা ২০০৩ সালে। আর ১৯৯৮ সালে কলাবাগান এবং ০৬ জুন ৯৭ তারিখে মহাখালী ডিওএইচএস’র বাড়ি কেনা হয়েছে। দলিল দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

‘যশোরে চাকলাদাররাই সব’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়

ঘুুরুলিয়া গ্রামের জমি দখলের দাবি করা হলেও সংবাদে তার কোনো তথ্যসূত্র বা অভিযোগ নেই। আর ঘুরুলিয়ায় ৯৯ শতক নয়, ৮৯ শতক মাঠের জমি ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই দলিল মূলে ১৪ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। দখলের অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল চাকলাদার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত পাকিস্তান আমল থেকেই। বড় চাচা আব্দুল কাদের চাকলাদার ১৯৬১-৬৩ সাল পর্যন্ত বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আব্দুস সালাম চাকলাদারসহ পরিবারের ৭ জন মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, শহরের চিত্রা সিনেমা হলের মূল মালিকদের কাছ থেকে ২০১৪ সালের ১৮ জুন রেজিস্ট্রি দলিল মূলে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ জমি ১ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয়। একইসঙ্গে ওই জমিতে অবস্থানকারী ৬ ব্যবসায়ীর পাওনা অর্ধকোটি টাকাও মিটিয়ে দেয়া হয়। এরপর আগেই বন্ধ হওয়া চিত্রা সিনেমা হল অপসারণ করে সেখানকার জিনিসপত্র জমির মালিকরা নিয়ে বিক্রি করেছেন। আর নির্মাণাধীন ভবনে অর্থায়ন করছে জনতা ব্যাংক জেস টাওয়ার শাখা। চিত্রা মোড়ের নবনির্মিত হোটেল ভবন নিয়ে চটকদার তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে কয়েক কোটি টাকার জায়গা ৯ লাখ বায়না করে দখল করা হয়েছে। এবং বুনো আসাদ নামে এক সন্ত্রাসীর বক্তব্য দিয়ে তা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। যা নিতান্তই হাস্যকর।

সংবাদে বলা হয়েছে, নব্বই দশকের শেষের দিকেও শাহীন চাকলাদার পারিবারিক ওষুধের দোকানে বসতেন। তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘জামান ফার্মেসি’ প্রতিষ্ঠিত ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি। এটি খুলনা বিভাগের অন্যতম শীর্ষ ওষুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর মিডফোর্ড মার্কেটসহ দেশের শীর্ষ ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রেতারা যশোরের জামান ফার্মেসিকে একনামে চেনে। চাকলাদার পরিবারের আরেকটি বহুল পরিচিত প্রতিষ্ঠান ‘চাকলাদার পরিবহন’ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। নিজস্ব অর্থায়নে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ সালে চাকলাদার টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করে। দু’টি স্টোন ক্র্যাশিং ফিল্ড’র মধ্যে নওয়াপাড়ারটি ১৯৯৯ সালে ও ঢাকারটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২০০৫ সালে চাকলাদার ফিলিং স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। এসব মিলিয়ে চাকলাদার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বহু বছর আগে থেকেই।

তার আরেক ভাই আব্দুল হামিদ ইদুল চাকলাদার এরশাদের শাসনামলে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির নেতা ছিল। ১৯৮৮ সময় যশোরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অংশ নিয়ে ডিটেনশনে ২১ মাস কারাভোগও করেন। ১৯৯৬ সালে জেলা যুবলীগের কমিটিতে তিনি ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেলা ফুটবল দলের প্রাক্তন সদস্য ইদুল চাকলাদার যশোরের বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাঙ্গে জড়িত বহু বছর ধরে। শত বছরের পুরানো প্রতিষ্ঠান যশোর ইনস্টিটিউটেও তিনি বহুবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে।

চাচতো ভাই জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুও বহু বছর ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার পর ১৯৯৬ সালে জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক ও ২০০৩ সালের সম্মেলনে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সদস্য এবং এখনও তিনি সেই পদে আছেন। পাশাপাশি ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে রেন্টু চাকলাদার বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।

ছোটভাই শামীম চাকলাদার চাকলাদার কনস্ট্রাকশনের কাজ দেখাশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আর ই-টেন্ডার, অনলাইনে দরপত্র দাখিলসহ ডিজিটাল নানা পদ্ধতির কারণে এখন আর টেন্ডারবাজির সুযোগ নেই, সেটি সকলেই জানেন।

চাচাতো ভাই ফন্টু চাকলাদারের নামে রায়পাড়ার জামতলায় তিনবিঘা জমি দখলের তথ্য শতভাগ অসত্য। সেখানে গড়ে তোলা টাইলস কারখানার প্রাচীরের মধ্যে ২৪ শতক জমি রয়েছে। যেটি আবদুন নূরের ভাইয়ের জমি এবং জমির মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করা। সেখানে ওই ব্যবসায়ী আবদুন নূরের জমিও রয়েছে। তবে তা ফন্টুর সীমানার বাইরে এবং তা স্থানীয় কয়েকটি পরিবার ৬০ বছর ধরে দখল করে রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ওই এলাকার মিজান গংদের সঙ্গে ওই জমি নিয়ে আবদুন নূরের আদালতে মামলা রয়েছে। শহরের নীলগঞ্জ এলাকার যে দোকানঘরগুলোর কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে ৩টি দোকান ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বণিকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ইজারা নেয়া। যার স্মারক নং-জেপ/ রাজস্ব/ ২১৯(২০১২) (১৩)-৮৪।
তাই সংসদ নির্বাচনের আগে যশোরে চাকলাদার পরিবার নিয়ে মিথ্যাচার একটি চক্রকে সুবিধার আসনে বসানো ছাড়া কিছুই নয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাড. জহুর আহম্মেদ, মোফাজ্জেল হোসেন খসরু, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আফজাল, আশরাফুল আলম লিটন, জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর জাহান ইসলাম নীরা, জেলা যুবমহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী, সাধারণ সম্পাদক রোকেয়া পারভীন ডলি, জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সাধারণ আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাধারণ সম্পাদক সালসাবিল আহমেদ জিসানসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

আরো সংবাদ