খানজাহান আলী নিউজ ডেস্ক: তাঁরা এখন আওয়ামী লীগে নেই। কিন্তু তাঁদের রক্তে মিশে আছে আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে তাঁদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। কিন্তু নানা ঘটনার দুর্বিপাকে তাঁরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কহীন। এখন তাঁরা দলে ফেরার অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে তাঁদের। এরকম অন্তত তিনজনের আওয়ামী লীগে ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এরা হলেন বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, তাঁর বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এই তিনজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন ২০০০ সালে। এরপর তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দলও গঠন করেন। দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বিরোধ ছিল। শেখ রেহানা দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেন। গত ১৫ আগস্ট বিকেলে দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ওই দেখায় এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরপর কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। সরকারি উদ্যোগে তাঁর যাবতীয় চিকিৎসা চলছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে তাঁর সঙ্গে ওবায়দুল কাদের সাক্ষাৎ করেন। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের আদর্শিক দূরত্ব কখনোই ছিল না। এটা ছিল ভাইবোনের মান অভিমান। এখন বরফ গলছে। নির্বাচনের আগেই কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন তা নিশ্চিত।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই। প্রবীণ রাজনীতিবিদ। সব সময় আলোচিত থাকলেও ৭৫ এবং ২০১১ এর আওয়ামী লীগের সংকটকালীন সময়ে তিনি দলের আদর্শকে ধারন করেন। ৭৫ এ জাতির পিতা হত্যার প্রতিবাদ যুদ্ধে তিনি সৈনিক ছিলেন। আর ২০১১ তে সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে যাঁরা শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম তিনি।
২০১৪ সালে নিউইয়র্কে তাঁর বক্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মন্ত্রিত্ব হারান। দল থেকেও তাঁকে বহিস্কার করা হয়। এরপর তিনি নিভৃত জীবন যাপন করছেন। তবে গত কয়েকমাস ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক শীর্ষ নেতা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চিত হয়েছে যে, নিউইয়র্কে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য একটি মহল খণ্ডিত এবং আংশিকভাবে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে। সিদ্দিকী পরিবার জাতির পিতা রক্তের ধারা – এই চিন্তা থেকেই তাঁকে আবার দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ চলছে।
আওয়ামী লীগে গবেষক ও চিন্তাবিদ হিসেবেই সুখ্যাতি ছিল অধ্যাপক আবু সাইয়িদের। সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাঁর ছিল ঘনিষ্টতা। কিন্তু ওয়ান ইলেভেন সবকিছু তছনছ করে দেয়। ওয়ান ইলেভেনের ‘নাটের গুরু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় অধ্যাপক সাইয়িদকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিয়ে তাঁর পাণ্ডিত্য এবং জ্ঞান আওয়ামী লীগের প্রয়োজন এই উপলব্ধি আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলের।
কিছুদিন আগে অধ্যাপক সাইয়িদ বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। গত ৬মাস ধরেই আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁর সঙ্গে দুদফা বৈঠক করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারও অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে।
শুধু এই তিনজনই নন। বিভিন্ন সময়ে মান অভিমান ভুল বোঝাবুঝিতে নিষ্ক্রিয় হওয়া বা দল থেকে সরে যাওয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যেগের মূল লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।