নিজস্ব প্রতিনিধি।। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু নিজেদের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কেউ থাকলে তাঁদের মাধ্যমে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এখনো তদবির অব্যাহত রেখেছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসীম ধৈর্য্য নিয়ে এই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁদেরকে ভালোমতো বোঝাচ্ছেন। তদবির নিয়ে আসা লোকদের নানা রকম উদাহরণ দিয়েও খুশি করতে হচ্ছে তাঁকে। তদবিরের অসংখ্য অনুরোধ ঘিরে রেখেছে প্রধানমন্ত্রীকে।
শুধু আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ তদবিরই নয়, দলের বাইরে থেকে জাতীয় পার্টি এবং যুক্তফ্রন্টের তদবিরেও প্রধানমন্ত্রী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিকল্পধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান।
জানা গেছে, আসন ভাগাভাগি বিষয়ে তদবির করতেই গণভবনে গিয়েছিলেন তাঁরা। আগামী নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের এই তিন নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫টি পর্যন্ত আসন চেয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের জরিপ অনুযায়ী, ৫ থেকে ৭টির বেশি আসন যুক্তফ্রন্ট পায় না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী তাঁদেরকে আপ্যায়ন করেছেন এবং এ নির্বাচনের গুরুত্ব কতটুকু তা বুঝিয়ে বিদায় করেছেন।
সে রাতেই জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলটির একাধিক নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁরা নূন্যতম ৪০টি আসন দাবি করেন বলে জানা গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগে সর্বশেষ জরিপ ও বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী জাপার ৪০টি আসনে জয়লাভ করার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টির নেতাদের তদবিরও শুনেছেন এবং তাঁদেরকে সরকার গঠন ও নির্বাচনে জয়লাভের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন।
কেবল রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই মনোনয়ন ইস্যুতে তদবির করছে তা নয়, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের তদবিরও ধৈর্য্য সহকারে শুনতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা তাঁদেরকে তদবির করতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং স্বামীর মনোনয়নের ব্যপারে অনুরোধ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে সবার তদবিরই শুনছেন। সব চাপ মাথায় নিয়ে তিনি একলা প্রত্যেকের সঙ্গে শান্তভাবে কথা বলছেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মনোনয়ন নিয়ে মন কষাকষি ও আসন ভাগাভাগি নিয়ে অসন্তোষ সামাল দিচ্ছেন। একে প্রধানমন্ত্রীর চৌকস নেতৃত্বের আরেকটি অনন্য উদাহরণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।