হৃদয় ইব্রাহিম : ছাত্রলীগের সম্মেলনের আড়াই মাস পর নেতা-কর্মীরা পায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক। এক বছর পর পেলো ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কিন্তু তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সোমবার পদবঞ্চিতদের ওপর পদপ্রাপ্তরা হামলা করেছেন।পদবঞ্চিতদের দাবি, বিবাহিত, অছাত্র, হত্যা ও মাদক মামলার আসামিদের জায়গা দেয়া হয়েছে নতুন কমিটিতে। ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের কমিটির অন্তত অর্ধশতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন সহ-সভাপতি হত্যা মামলার আসামি। ছাত্রলীগ করার নির্ধারিত বয়স ২৯ পার হওয়ার পরও পদ পেয়েছেন এমন অন্তত পাঁচজন রয়েছেন। অন্তত ৬ জন বিবাহিত রয়েছেন কমিটিতে।
জানা গেছে, পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী ছিল এমন অন্তত ১৩ জন রয়েছেন কমিটিতে। এদের মধ্যে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন এমন রয়েছেন অন্তত ৬ জন। অস্ত্র নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এমন একজন হয়েছেন সহসভাপতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত অন্তত ২০ জন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এছাড়া সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন এমনও আছেন কমিটিতে। কক্ষে মাদক রাখার অভিযোগে হলচ্যুত একজন দায়িত্ব পেয়েছেন।
ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক ও নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার বলেন, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক থেকে পদত্যাগ করেছি। এই পোস্টের পরিচয় নিয়ে লজ্জা পেতে চাইনা। অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবীদের দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি মানি না।
তিনি বলেন, যারা বিগত ৮-৯ মাস তাদের চামচামি করছে, যাদের কেউ চিনে না, আগে কোথাও কোনোদিন কোনো ইউনিটে ছিল না, তারাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পোস্ট পেয়েছেন। এদেরকে জয়েন্ট সেক্রেটারি, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকের মতো বড় পদবী দেয়া হয়েছে। এই কমিটি ভেঙে যোগ্য, সাংগঠনিক দক্ষ লোক যারা বিগত দিনে রাজপথে ছিল, তাদের দিয়ে কমিটি না করলে আমরা গণপদত্যাগের ঘোষণা দিব।
নতুন কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুন বলেন, গত কমিটিতে উপ-সম্পাদক ছিলাম। এই কমিটিতেও উপ-সম্পাদক রেখে অপমান করা হয়েছে। আমি পদত্যাগ করেছি। এই অপমান আমি নিতে পারছি না।
নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক ও সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি গত কমিটিতেও উপসম্পাদক ছিলাম। এবারও আমাকে উপ-সম্পাদক করা হয়েছে। আমি সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি সাধারণ ছাত্রদের ভোটে ডাকসুর সদস্য হয়েছি। অথচ নতুন কমিটিতে আমাকেও উপ-সম্পাদকই রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার চেয়ে রাজনীতিতে পাঁচ বছরের জুনিয়রও বড় পেয়েছে। এটা খুবই অপমানজনক। তাই আমি পদ থেকে পদত্যাগ করছি। তিনি আরও বলেন, আমাকে যোগ্য পদ দেয়া হয়নি। আমি ক্ষোভ জানাতেই পারি। তাই বলে আমার গায়ে হাত দেয়া হবে কেন? আমার মাথায় ক্রমাগত আঘাত করা হয়েছে। কাচের গ্লাস দিয়ে মাথায় মারা হয়েছে। আমি নেত্রীর কাছে এই ঘটনার বিচার চাই।
শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ডাকসু’র কেন্দ্রীয় সদস্য নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, ছাত্রলীগের যে কমিটি করা হয়েছে, এতে বিবাহিত, ছাত্রদল সদস্য ও অছাত্র রয়েছে। ত্যাগীদের এই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই কমিটি ভেঙে না দেওয়া হলে আমরা কমিটি থেকে গণপদত্যাগ করব, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ ও অনশন করবো।
পূর্বতন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক সাঈফ উদ্দিন বাবু আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা বঞ্চিত হয়েছে। যারা ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে কোনোদিন থাকেনি তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিবাহিত ও বয়স না থাকাদের পদ দেয়া হয়েছে। নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিল তাদের অধিকাংশকেই পদ দেয়া হয়নি। আমরা এই বিতর্কিত কমিটি মানি না। আমরা এই বিষয়ে নেত্রীর সুদৃষ্টি আশা করছি।
জসীম উদ্দিন হলের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এই কমিটি ছাত্রলীগের কমিটি নয়। শোভন-রাব্বানীদের নিজস্ব লোকের পকেট কমিটি। আমরা কোনো আওয়ামী লীগ নেতার আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে চাই না আর। কমিটি নিয়ে ডাকসু নির্বাচনের আগেও তারা আমাদের বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তিনি যে নির্দেশনা দেবেন আমরা তা মেনে নেব অন্য কোনো নেতার নয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ধরেননি। তবে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, এই কমিটি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী (শেখ হাসিনা) দিয়েছেন। যারা এই কমিটির বিরোধিতা করছেন তারা নেত্রীরই বিরোধিতা করছেন। সেখানে যারা যোগ্য তাদেরকেই পদ দেয়া হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সবাইকে সুযোগ দেয়া তো সম্ভব নয়। সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেই নাম দিয়েছেন তার থেকে সরাসরি ৯০ জনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাদ দেয়া হয়নি।
বিতর্কিতদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিবাহিতদের বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের বিষয়ে শৈথিল্য রয়েছে। অতীতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগবিরোধী অবস্থান কিংবা রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কেউ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।