আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১০:৫৩

​বগুড়ায় ইন্টার্নদের তান্ডব-পিতা-পুত্রকে বেধড়ক মারপিট : রোগীর মৃত্যু

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি : বার বার পার পাওয়ায় বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেপরোয়া হয়ে  উঠেছেন। সিরাজগঞ্জের রোগির এ্যাটেনডেন্টকে পেটানোর ৮ মাস পর এবার জয়পুরহাটের এ্যাটেনডেন্ট পিতা- পুত্রকে বেধড়ক পিটানো হয়েছে। এতে পিতা মারাত্বক জখম হয়েছেন আর পুত্রের মাথা ফেটে দেওয়া হয়েছে। ইন্টার্নদের রক্ষায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ্যাটেনডেন্টদের দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ হেন আচরণে ক্ষুব্ধ রোগির স্বজন। জয়পুরহাটের পুরানপৈল এলাকার পুনট গ্রামের মৃত বজলুর রহমানের স্ত্রী মাহেলা বেওয়া(৭৫) শ^াসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি হন। তিনি মেডিসিন বিভাগে  ১০ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডের ১ নম্বর ইউনিটের ৫ নম্বর বেডে (অতিরিক্ত) চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোগির এ্যাটেনডেন্ট ছিলেন, ছেলে গাজিউর রহমান। বৃহস্পতিবার রাতে রোগির নাতি রুম্মান রহমান শান্ত দাদিকে হাসপাতালে দেখতে আসেন। এসময় রোগির শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছিল। রোগীর শরীরে রক্ত দেয়া বন্ধ হলে নিডলটি খুলে দেয়ার কথা বলার অপরাধে রোগির স্বজনদের বেধড়ক মারপিট করেছে কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডাক্তার, নার্স এবং তাদের লোকজন।

শুধু তাই নয় তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় গভীর রাতে হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে সেখান থেকে বের করে সিএনজিতে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে তুলে দেয়া হয়। জয়পুরহাট     জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত রোগি মাহেলার নাতী শান্ত জানান, কয়েক দিন আগে তার দাদীকে অসুস্থ অবস্থায় জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৩ অক্টোবর তাকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শজিমেক হাসপাতালে  তার চিকিৎসা চলছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন মাহেলা বেওয়াকে রক্ত দেওয়া হচ্ছিল। রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে শান্ত রোগির দেহে রক্ত দেওয়া শেষ হলে শরীরের রক্তের সঞ্চালন লাইনটি বন্ধ করে দিতে বলেন কর্তব্যরত নার্সকে। ২০-২৫ মিনিট পার হয়ে গেলেও নিডিলটি না খোলায় ঐ লাইনে শরীর থেকে রক্ত বের হতে শুরু করলে সে দৌড়ে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার নার্সকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে দাদীর কাছে ফেরার মুহূর্তে ইন্টার্নরা দৌড়ে এসে তার কলার ধরে টানতে টানতে একটি ঘরে নিয়ে যান। এ সময় শান্ত‘র পিতা গাজিউর হক দ্রুত সেখানে গেলে তাকেও একটি ঘরে আটকে রাখেন। এরপর দুইজনকেই বেদম মারপিট করে রক্তাক্ত করা হয়। এ সময় ইন্টার্নদের আহবানে বাইরে থেকে লোকজন এসে মারপিটে অংশ নেয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে গেলেও তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ফিরে যায়। রাত আনুমানিক ২টার দিকে ডাক্তাররা রক্তাক্ত     অবস্থায় তাকে ও তার পিতাকে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে তাদের জয়পুরহাট পাঠিয়ে দেয়। সকালে তাদেরকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে। এসময় ওই ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মিরা হাসপাতালে গেলে তাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরে সিনিয়র চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। তারা রোগির আহত ২ স্বজনকে উদ্ধার করেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলেন। এদিকে অসুস্থ মাহেলা বেওয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে তাকে শজিমেক হাসপাতালের  নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে রোগির লোকেরা মাহেলা বেওয়াকে  জয়পুরহাটে নেয়ার জন্য রওনা হন। মাহেলা বেওয়ার আত্মীয় সুলতান গিয়াস উদ্দিন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাড়িতে ফিরিয়ে আনার আগেই বৃদ্ধা মাহেলার মৃত্যু হয়। রোগির আত্মীয়-স্বজন অভিযোগ করেন রোগির মৃত্যু হওয়ার পর তাকে জীবীত দেখিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগির দুই স্বজনকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারপিটের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, রোগীর স্বজন(এ্যাটেনডেন্ট) এক মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় অন্যান্য লোকজন তাদের(এ্যাটেনডেন্টদের) মারধর করে।

অপরদিকে শুক্রবার মেডিসিন মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে রাতের বিষয়ে জানতে চাইলে অন্যান্য রোগি ও এ্যাটেনডেন্টরা মুখ খুলতে রাজী হননি। তবে ১০ নং ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগি জানান, তিনি দেখেছেন রোগির সঙ্গে থাকা ১ জনকে মারপিট করে প্রথমে ঘরে আটকে রাখা হয়। রোগির ২ স্বজনকে মারপিটের বিষয়ে শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী বরাবরের মত সাংবাদিকদের জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কোন মারপিট করেনি। রোগির স্বজনরা প্রথমে কর্তব্যরত এক মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে অশালীন ভাবে কথা ও অশালীন আচরণ করেন এবং পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৩ ইন্টার্ন চিকিৎসক আহত হন। তবে তিনি আহত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের  নাম বলতে পারেননি। তিনি আরও দাবি করেন, চিকিৎসকদের ওপর হামলা হওয়ার কারণে আশেপাশের লোকজন রোগির ওই দুই স্বজনকে মারপিট করে। গণমাধ্যম কর্মিদের ঘটনার পর হাসপাতালে প্রবেশ করতে না দেয়ার প্রসঙ্গে জানান, বহিরাগতরা যেন পরিস্থিতির  সুযোগ নিতে না পারে সে জন্য রাতে এব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো।

এদিকে রাতের ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম রসুল চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে উপপরিচালক সংবাদ কর্মিদের জানিয়েছেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা সহ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন এড়ানো যায় সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গেও বৈঠক হয় বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি  সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কোনাগাতি গ্রামের আলাউদ্দিন সরকার হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে তার ছেলে আবদুর রউফ শজিমেক হাসপাতালে আনেন।

সেও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারপিটের শিকার হয়। তখনও ওই ঘটনায় নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে অশালীন আচরণের কথা বলা হয়। ওই ঘটনার পর আলাউদ্দিনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আমাদের জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকের হামলায় গুরুতর আহত শান্ত জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাত আনুমানিক ২টার দিকে ডাক্তাররা রক্তাক্ত শান্ত ও তার পিতাকে শজিমেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না দিয়ে একটি সিএনজি যোগে তাদের জয়পুরহাট পাঠিয়ে দেয়। সকালে পিতা পুত্রকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জয়পুরহাটের কর্তব্যরত ডাক্তার জানান গুরুতর আহত তারা দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত