নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা অভিযোগ করেছেন, ‘আমাকে হত্যার চেষ্টা চলছে। প্রতিনিয়ত আমার নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে আমার সাত-আটজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘গতকাল শুক্রবারও এমপি একরামের বাড়িতে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছে। আমার প্রত্যেক নেতা-কর্মীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিবি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের পরিবারের লোকজনকে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এখানে সবকিছু একতরফা হচ্ছে। প্রশাসনও আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে।’
নিজে নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগলেও নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত কাদের মির্জা। এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি নিজে নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগলেও আমার নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ বিষয়ে প্রশাসন ও সরকার কী ব্যবস্থা নেবে, তা তারা জানে। আমার শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকা অবস্থায় আমি এখান থেকে নড়ব না।’বিজ্ঞাপন
সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আলাউদ্দিন হত্যার ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দীকে দেওয়ার দাবি জানান আবদুল কাদের মির্জা। বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইকে দিয়ে ঘটনা তদন্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তিনি। কাদের মির্জা বলেন, ‘তদন্তে যদি আমি বা আমার কোনো কর্মীর অপরাধ প্রমাণিত হয়, যে শাস্তি দেবেন, তা আমরা মাথা পেতে নেব।’
সংবাদ সম্মেলন করার সময় কাদের মির্জার সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু কর্মী উপস্থিত ছিলেন। পৌরসভা কার্যালয়ের আশপাশেও পুলিশের পাহারা দেখা গেছে।
এদিকে বসুরহাট পৌরসভার পরিস্থিতি এখনো থমথমে। শহরজুড়ে পাহারা দিচ্ছে তিন শতাধিক পুলিশ (পালাক্রমে ১০০ জন করে)। টহল দিচ্ছে র্যাবের একাধিক দল। বসুরহাটে অবস্থান করছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন পুলিশ সুপারসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁরা সার্বক্ষণিক বসুরহাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
আজ সকাল নয়টার দিকে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা পৌরসভা কার্যালয় থেকে বের হয়ে বসুরহাট বাজারে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন দলীয় নেতা-কর্মী ও তাঁর অনুসারী ছিলেন।
সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে বসুরহাট পৌরসভা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুজন মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী। এ নিয়ে বসুরহাট ও চাপরাশিরহাটে সাম্প্রতিক সহিংসতা ঘটনায় ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাঁদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল রয়েছেন।
আজ শনিবার সকালে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব ব্যবসায়ী নানাভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের অনেকেই গ্রেপ্তার–আতঙ্কের কারণে দোকানপাট খুলছেন না। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের রুপালি চত্বর, বঙ্গবন্ধু চত্বর, পৌরসভা গেট, উপজেলা পরিষদ গেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।বিজ্ঞাপন
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি প্রথম আলোকে বলেন, বসুরহাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন আছে। র্যাব সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট বাজারে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি মারা যান। ৯ মার্চ রাত নয়টার দিকে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবলীগের কর্মী আলাউদ্দিন (৩২)।