রাকিব উদ্দীন, যশোর : ঝিনাইদহের এলজিইডি অফিসের গাড়ির চালক হাসনুজ্জামান ওরফে জগলুকে স্ত্রী তাহমিনা পারভীন তমা তার দুই বন্ধু মিলে চলন্ত গাড়িতে শ্বাস রোধে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। হত্যার পর তারা ছুরি গলা কেটে দেয়। পিবিআই এর কাছে এ ভাবে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন জগলুর স্ত্রী তমা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রেরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত শনিবার বিকেলে পিবিআই কার্যালয়ে তাহমিনা পারভীন তমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার রহস্য উদঘাটন করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এক পর্যায়ে জগলু হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে তাহমিনা পারভীন তমা জানান, ১৯৯৯ সালে এটিএম হাসানুজ্জামান ওরফে জগলুর সাথে তার বিয়ে হয়। তার সংসার জীবনে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে আছে। তারা কুষ্টিয়া শহরে থাকতো। ২০০৮ সালে জগলু সাসপেন্ড হওয়ার পর আর্থিক সংকট দেখা দেয় এবং পারিবারিক কলহের কারণে দাম্পত্য জীবনে বিপর্যয় ঘটে। এরপর তার ছেলেকে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি করে এবং তাকে ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকার একটি মেসে রাখে। মেয়েটি কুষ্টিয়া বাসায় থাকে। এরপর তার সাথে আলামিন ও মুরসালিন নামে দুই যুবকের সাথে বন্ধুত্ব হয়। যা নিয়ে জগলু প্রায় তাকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এরপর তাহমিনা পারভীন মুরসালিনের বৌ সেজে এবং আলামিনকে তার দেবর পরিচয় দিয়ে কেরানীগঞ্জে একটি বাসা ভাড়া থাকে। এসময় জগলুর কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে মুরসালিন ও আলামিনের পিছনে খরচ করে। বিষয়টি জানতে পেরে জগলু সেই টাকা প্রায় চাইতো। ‘জগলু আমার জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। আমার জন্য কিছু একটা করো’ এ কথা বলে গত ২৬ আগস্ট তাহমিনা পাভীন তমা মুরসালিন ও আলামিনকে ডাকেন। এসময় তারা জগলুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাতলা কাঁচের বোতলে চেতনানাশক ঔষুধ এবং ফাঁস দেয়ার জন্য দড়ি যোগাড় করে উবায়ের গাড়ি ডাকে। খুলনার ডুমুরিয়া এলাকার পরিচিত এক গাড়ির চালককে নিয়ে ২৭ আগস্ট ভোর ৫টায় পাটুরিয়া ঘাট পার হয়ে ঝিনাইদহ হয়ে যশোরে চলে আসে। সাড়ে ১১টার দিকে জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে যায়। সেখান থেকে উবায়ের গাড়ির চালক খুলনার ডুমুরিয়া যায়। সেখান থেকে তাহমিনা পারভীন তমা মোবাইল ফোনে তার স্বামী জগলুকে ফোন করে টাকা নেয়ার কথা জানায়। জগলু তাকে ঝিনাইদহ শামীমা ক্লিনিকের সামনে আসার কথা বলে। তারা ডুমুরিয়া থেকে যশোরে এসে সময় কাটানোর জন্য ঘোরাঘুরি করতে থাকে। সন্ধ্যার পর তারা ঝিনাইদহের শামীমা ক্লিনিকের সামনে যায় এবং রাত ১০টার দিকে জগলু ক্লিনিকের সামনে আসলে তাহমিনা তার স্বামীকে গাড়িতে উঠায়। এরপর জগলুকে পিছনের ছিটের মাঝখানে, তাহমিনা স্বামীর বাম পাশে এবং আল আমিন ডান পাশে এবং মুরসালিন গাড়ির সামনে ছিটে বসে। গাড়ি যশোরের দিকে রওনা দিলে তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাহমিনা জগলুর দুই হাত ধরে এবং আলামিন চেতনানাশক ঔষুধ তুলা ভিজিয়ে জগলুর নাকে চেপে ধরলে সে অসচেতন হয়ে যায়। এসময় আলামিন, মুরসালিন ও তাহমিনা রশি দিয়ে জগলুর গলা পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর ঝিনাইদহ যশোর মহাসড়কের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের অদূরে বালির গর্তের মধ্যে জগলুর মৃতদেহ ফেলে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে আলামিন ও মুরসালিন ছুরি দিয়ে গলা কেটে ফেলে । এরপর সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে মুন্সিগঞ্জে মুরসালিনের খালার বাসায় ওঠে। সেখানে গাড়ির চালক, আলামিন ও মুরসালিন মিলে গাড়ি ধুয়ে ফেলে এবং তাহমিনা পারভীনের পোষক পরিবর্তন করে ঢাকায় চলে আসে। পরদিন বুধবার (২৮ আগস্ট) ভোর ৬টায় স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে। ময়নাতদন্ত শেষে জগলুর বড় ভাই এটিএম হাকিমুজ্জামান অজ্ঞাত নামা আসামিদের নামে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শুরু করেন কোতয়ালি থানার এসআই গাজী মাহাবুর রহমান। তিনি পিবিআইয়ের সহযোগিতায় শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে তাহমিনা পারভীনকে গ্রেফতার করে। আজ রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) পুলিশ তাহমিনা পারভীনকে আদালতে সোপার্দ করেন।