করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর যশোরে নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। চারদিকে উৎসবের আমেজ। মঙ্গল শোভাযাত্রার শোভাবর্ধনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিল্পীরা।
বাংলা নববর্ষ বরণে যশোরের ঐতিহ্য প্রায় অর্ধশতাব্দীর। করোনার কারণে গত দুই বছর নববর্ষের উৎসব ছিল ঘরবন্দী। এ বছর সেই বাধা দূর হওয়ায় যেন প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে সংস্কৃতির পীঠস্থান যশোরে।
যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, মহামারির কারণে নববর্ষের গেল দুই বছর কোনও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবার বর্ষবরণে সেই প্রতিবন্ধকতা নেই। তাই ঐতিহ্যকে মননে রেখে বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া যেহেতু পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা সূচনা যশোর থেকে, সেহেতু আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য আয়োজন করতে চাই। সেই হিসেবে পহেলা বৈশাখে সকাল ৯টায় যশোর টাউন হল মাঠ থেকে সব সংগঠনের অংশগ্রহণে বের হবে শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাকে বর্ণাঢ্য করতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নানান সামগ্রী।
উদীচী যশোর ৪৮ বছর ধরে পৌর উদ্যানে নববর্ষের প্রথম প্রভাতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। যশোর শহরের শত শত মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে নতুন পোশাকে, নতুন সাজে সেই আয়োজনে শামিল হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব জানান, এ বছরও বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি তাদের। সকাল ৭টায় পৌর উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।
এছাড়া ‘পুনশ্চ যশোর’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুসলিম অ্যাকাডেমি চত্বরে, ‘তীর্যক যশোরের’ অনুষ্ঠান হবে আব্দুর রাজ্জাক কলেজের মাঠে, ‘বিবর্তন যশোর’ নিজস্ব মঞ্চে, ‘সুরবিতান’ টাউন হল মাঠে ও ‘সুরধুনী’ সংগঠন চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
বর্ষবরণের প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা হয় ১৯৮৫ সালে যশোরে। সেই সময়ে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহবুব জামাল শামীম আরও দুই সহপাঠীকে নিয়ে যশোরে প্রতিষ্ঠা করেন চারুকলার প্রতিষ্ঠান চারুপীঠ। এই প্রতিষ্ঠানই মঙ্গল শোভাযাত্রার সূতিকাগার।
মাহবুব জামাল শামীম বর্তমানে চারুপীঠ যশোরের অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘প্রথম যখন শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিলাম তখন এর অভূতপূর্ব সাড়া দেখে আমরা মুগ্ধ হই। এরপর যখন ঢাকায় চারুকলায় এ আয়োজন করি, তখন তার ব্যাপ্তি বেড়ে যায়।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি সুকুমার দাস জানান, পবিত্র রমজান মাসের কারণে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের সব কর্মসূচি দিনের মধ্যে শেষ করবে। পুরনো বছরের ঝঞ্ঝা দূর করে নতুন বছর ১৪২৯-কে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছে যশোরবাসী।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনে যশোরে বর্ষবরণ উৎসব পর্ষদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুকুমার দাস।
সোমবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সুরধুনী সঙ্গীত অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়।
কমিটির অন্য সদস্য হলেন-যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ ও দীপঙ্কর দাস রতন।
বর্ষবরণ মঙ্গল শোভাযাত্রায় সেরা অংশগ্রহণকারীর পুরস্কার নির্বাচনের জন্য যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, চিত্রশিল্পী মফিজুর রহমান রুননু ও শামীম ইকবাল লিপনকে নিয়ে বিচারক উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।