আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৪:৫২

প্রধানমন্ত্রী ঘুমায় কখন !?

খানজাহান আলী নিউজ ডেস্ক: ঘড়িতে রাত ১১ টা ১০ মিনিট। অঙ্গ সংগঠনের জনা দশেক কর্মীর সঙ্গে বৈঠক শেষ করলেন। বললেন, ‘অনেক রাত হয়েছে, এখন যাও, আর পারছি না।‘ কর্মীদের মধ্যে যিনি নেতা বললেন, ‘এই চলো আপা ঘুমাতে যাবে।‘ কথাটা তার কানে পৌঁছালো। টিপ্পনী কেটে বললেন, ‘এত সুখ তোমরা আমাকে দিয়েছ। এখন যেয়ে ফাইল নিয়ে বসতে হবে। অনেক ফাইল জমা আছে।‘ কর্মীরা নিজেরাই যেন লজ্জা পেলেন। গণভবনের রাস্তার দুপাশে গাছ, ফুল। ফুলেরাও যেন ঘুমিয়ে গেছে। পুকুরটা শান্ত। প্রকৃতি যেন বিশ্রামে। হয়তো সেটা দেখেই একজন কর্মী তার নেতাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা আপা ঘুমায় কখন?’ এই প্রশ্নে সবাই যেন চমকে উঠলেন।

যাকে নিয়ে এই চর্চা তাঁর নাম শেখ হাসিনা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সভাপতি। একজন আদর্শ মা। একজন স্নেহময়ী নানী। দারুণ দাদী। শেখ হাসিনার চারপাশে যারা থাকেন, তারা তাঁর অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে নিজেরাই অবাক হয়ে যান। একে একে সবাই ক্লান্ত হয়ে যান, তখনও শেখ হাসিনা যেন ক্লান্তহীন এক কর্মময় মানুষ। কেউ বলেন, ‘উনি পারেন কীভাবে।‘ আর সবচেয়ে বেশি যেটা বলা হয়, ‘শেখ হাসিনা ঘুমান কখন?’ নাকি তিনি জেগে থেকেই পাহারা দেন বাংলাদেশকে সব অমঙ্গল থেকে।

এসএসএফের একজন সদস্য বলছিলেন, ‘ওনাকে কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি।‘ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক নীলুফার আহমেদের মতে, ‘ সারাক্ষণ একটা মানুষ শুধু জনগণের চিন্তা করেন। নিজের জন্য যেন তাঁর এক মুহূর্ত সময় নেই।‘

শেখ হাসিনার দিন শুরু হয় সুবেহ সাদিকের আগে। উঠেই তিনি তাহাজ্জুতের নামাজ পড়েন। তার পর ফজর। এরপর এক কাপ চায়ের সাথে রবীন্দ্র সংগীত আর সংবাদপত্র। পত্রিকা থেকে প্রয়োজনীয় খবরগুলো আগেই জেনে নেন। নাস্তার টেবিলে টেলিভিশনে চোখ বুলিয়ে নেন। সাধারণত, নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যেই তিনি বেরিয়ে পড়েন। হয় কোনো অনুষ্ঠানে অথবা মন্ত্রিসভা কিংবা একনেকের সভার জন্য। আর কোনো দিন কোনো কর্মসূচি না থাকলে ফাইল নিয়ে বসেন । বৈঠক, অনুষ্ঠানে, দপ্তরেই সেরে নেন হালকা দুপুরের খাবার। সাধারণতঃ দুইটা থেকে তিনিটা পর্যন্ত কোনো কর্মসূচী রাখেন না শেখ হাসিনা। এসময় একটু বিশ্রাম। এরপর আবার মিটিং, কাজ। সন্ধ্যায় দলের নেতা, প্রশাসনের পদস্থরা আসেন। কারও অ্যাপয়নমেন্ট থাকে। কেউ চলে আসেন এমনিই। শিক্ষক আসেন, আইনজীবী আসেন। সবার শুধু চাওয়া আর চাওয়া। অসীম ধৈর্যশীল এই মানুষটি শুধু শোনেন না, পরামর্শও দেন। এভাবে চলে প্রায় মধ্যরাত। সবাই চলে যায়। শেখ হাসিনা রাতের খাবার খেয়েছেন কিনা- জিজ্ঞেস করবে কে? মাঝে মাঝে না খেয়েই হয়তো কাজে ডুবে যান আরও কিছুটা সময়।

মাঝে মাঝে অবশ্য এর ব্যতিক্রম হয়। মেয়ে পুতুল আর তার বাচ্চারা এলে। জয় এর পরিবার এলে। ছোট বোন রেহানা এলে। তখন গণভবনের দোতালায় একাকীত্ব ঘোচে। হৈ চৈ হয়। রান্নায় হাত লাগান খোদ প্রধানমন্ত্রী। খাবার টেবিল ভরে থাকে। আনন্দ উৎসবের মধ্যে হঠাৎ করে উঁকি দেয় অতীত। বাবার কথা, মায়ের কথা, ভাইদের কথা উঠে আসে। আচমকা আনন্দময় পরিবেশ যেন ভারী হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা। তারপর আবার সব ঠিক হয়ে যায়। এভাবেই চলে ব্যস্ত কিন্তু নিয়ত নিঃসঙ্গতার এক ছুটে চলা। যে ছুটে চলার মধ্যেই এদেশের উন্নয়ন, এদেশের মানুষের ভাগ্য।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ছিলেন, এখন মুখ্য সমন্বয়কারী, আবুল কালাম আজাদ বলছিলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রতিটি ফাইল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। মন্তব্য লেখেন। তাঁর মতো এত গভীরভাবে ফাইল আমি কাউকে দেখতে দেখিনি।‘ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শিষ্য যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী জানাচ্ছিলেন, ‘তৃণমূলের ছোট্ট কর্মীটিরও নাম জানেন শেখ হাসিনা। প্রত্যেকের সুখ দুঃখের খবর রাখেন। শেখ হাসিনা যত কর্মীর নাম জানেন তার অর্ধেক নামও কোনো আওয়ামী লীগ নেতা বলতে পারবেন না।‘

তাইতো দেশের সব ভার তো তাঁরই ওপর, দলের সব জঞ্জাল সরাতে হয় তাঁকেই। তাঁর কাছেই সবার চাওয়া, তাঁকে দেওয়ার তো কেউ নেই। এতো ভার নিয়ে তিনি ঘুমাবেন কীভাবে?

 

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত