ধ’র্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্ম’দ আব্দু’ল্লাহর মৃ’ত্যুর পর মন্ত্রণালয়টি এখন মন্ত্রীশূন্য। তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের মধ্যে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধু ধ’র্ম মন্ত্রণালয় নয়, আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়েও রদবদল হতে পারে।
বাজেট অধিবেশন শেষ হলে যেকোনো সময় মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা পূর্বের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘মন্ত্রী বানানো, নামানোর লোক একজনই; তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী।
কে মন্ত্রী হবেন, এটা উপরে আ’ল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ বলতে পারেন না। যিনি মন্ত্রী হবেন তিনিও বলতে পারেন না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব কোনো নেতাকে ফোন দিলে তখন তিনি বলতে পারবেন যে তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন।’
ক’রোনাভা’ইরাস সং’ক্রমণের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাত। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনায় সরকারের উচ্চ পর্যায় অ’সন্তুষ্ট।
সে কারণে এই মন্ত্রণালয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এর বাইরেও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে।
টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুজনের ঠাঁই হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান জাহিদ মালেক এবং প্রতিমন্ত্রী হন ডা. মুরাদ হাসান। পরে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দ্ব’ন্দ্ব দেখা দেয়। এর ফলে মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে স’রিয়ে দেওয়া হয়। তারপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আর নতুন করে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
ধ’র্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃ’ত্যুর পর এ মন্ত্রণালয় এখন মন্ত্রীশূন্য। সামনে হজ মৌসুম। সঙ্গত কারণেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ধ’র্ম মন্ত্রণালয়ের শূন্যস্থান পূরণে কাকে বসানো হবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ গুঞ্জন চলছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু নাম নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। চার নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, ঝালকাঠি-১ আসনের বজলুল হক হারুন, পটুয়াখালী- ৩ আসন থেকে নির্বাচিত আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি।
এর মধ্যে হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর সম্ভাবনা বেশি বলে অনেকে মনে করছেন। তিনি এখন পর্যন্ত দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। বর্তমানে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া ময়মনসিংহ জে’লা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ক্লিন ইমেজের বলে অনেকে জানিয়েছেন। বাকি তিনজনের নাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখে উচ্চারিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কিছু অ’ভিযোগও আছে।
নেতাকর্মীরা বলেন, ঝালকাঠি-১ আসনের বজলুল হক হারুন ধা’র্মিক লোক। তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারের গত মেয়াদে তিনি ধ’র্মবিষয়ক মন্ত্রণায় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি আরব সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন
এছাড়া ঝালকাঠি জে’লা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন এই সংসদ সদস্য। সংসদে মোনাজাতের বিষয় এলেই স্পিকার তাকে দায়িত্ব দেন। কেউ কেউ বলছেন, বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ঘটনায় দারুণভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এ কারণে দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই তার ওপর মনোক্ষুণ্ন।
পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আ’ন্দোলন-সং’গ্রামে তার যথেষ্ট অবদান আছে। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
১৯৯৮ সালে তিনি শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সংস্কারপন্থী হওয়ায় ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন। আলোচনায় থাকা সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। এখন পর্যন্ত তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারেরই সদস্য ছিলেন। পরে তিনি দলত্যা’গ করেন। ধ’র্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু ১৪ দলের শরিক থেকে এবার কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি, সে কারণে এবারও তার সম্ভাবনা কম।
গত ১৪ জুন (শনিবার) ক’রোনায় আ’ক্রান্ত হয়ে শেখ আব্দু’ল্লাহ মৃ’ত্যুবরণ করেন। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধ’র্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। তার মৃ’ত্যুর পর পদটি এখন শূন্য।
গত বছর ১৩ জুলাই সর্বশেষ মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হয়। ওইদিন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী হন। তারপর মন্ত্রিসভায় আর নতুন কেউ যুক্ত হননি। কোনো রদবদলও হয়নি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর গত বছরের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ওইদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী নিয়ে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে মন্ত্রিসভার সদস্য ৪৮।