আজ - বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ৮:২৭

যে কারণে ছাত্রলীগের ওপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসার কথাও চিন্তাভাবনা চলছে। গণভবনে ছাত্রলীগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

জানা যায়, ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নানা কর্মকান্ডে বিরক্তি প্রকাশ করে কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্ষোভ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশ দিয়েছেন। তবে বিষয়টি বাস্তবে কার্যকর না-ও হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তাদের কর্মকাে  যে ক্ষুব্ধ তা বৈঠকে স্পষ্ট হয়েছে। জানা যায়, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে, তার মধ্যে রয়েছে- বিতর্কিতদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া, দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি। সূত্র জানায়, গত শনিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ তুলে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠে না। দলীয় সভানেত্রীর এমন বক্তব্যের পর বৈঠকে অংশ নেওয়া মনোনয়ন  বোর্ডের অন্য সদস্যরাও ছাত্রলীগের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকা  তুলে ধরেন। তারা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য। ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পৌঁছে গেলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তার পরে উপস্থিত হন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদকে প্রধান অতিথি করে আয়োজন করা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানেও দেরিতে উপস্থিত হন শোভন-রাব্বানী। জানা যায়, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সামনে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে কথা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি দিতে না পারা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করার ক্ষেত্রে অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ, বিবাহিত ও জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কথা হয়।

শোভনকে বিদায় জানাতে বিমানের দরজায় কর্মী-সমর্থকরা : গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘ভিআইপি লাউঞ্জে’ হঠাৎ করে কয়েকশ তরুণ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে বিদায় জানাতে ঢুকে যান। শোভন সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। একপর্যায়ে এই নেতা-কর্মীদের অনেকেই চলে যান টার্মাকে। সেখানে উড়োজাহাজটির দরজায় গিয়েও তারা নেতাকে বিদায় জানান এবং সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি কোনো জনপ্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ব্যক্তি (সিআইপি) নন। তাই তিনি ভিআইপি লাউঞ্জের সুবিধা পেতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বলে জানা গেছে। এর আগে সিলেট সার্কিট হাউসে দুটি ভিআইপি কক্ষ ব্যবহার করেন। তখন সার্কিট হাউসে নেতা-কর্মীরা গিয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করেন।

শোভন-রাব্বানীর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বসে থাকলেন দুই ঘণ্টা : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে    শোভন-রাব্বানীর জন্য টানা দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে। ছাত্রলীগের এই দুই নেতা নিজেদের দেরি হওয়ার বিষয়টি আগে থেকে অবহিত করেননি। অনুষ্ঠানস্থলে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রী। গত ২০ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান উদ্বোধনের জন্য বসে থাকতে হয়েছে তাকে। ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ছাত্রলীগের কর্মকা  নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যাপারে তো থাকতেই পারেন। যেমন-  আমাদের ইলেকশনে যারা বিদ্রোহী ছিলেন, আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে, নেতাদের মধ্যে, এসব ব্যাপারে তো ক্ষোভ প্রকাশ হয়। কাজেই ছাত্রলীগেরও বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু কিছু ব্যাপার আছে, সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনসার্ন থাকতেই পারেন। এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে কোনো স্পেসিফিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি জানি না, কারণ ওই ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার বিষয় আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো কোনো প্রসঙ্গে  ক্ষোভের প্রকাশও হতে পারে বা কারও কারও রিঅ্যাকশনও আসতে পারে। কিন্তু অ্যাজ এ জেনারেল সেক্রেটারি অব দ্য পার্টি আমার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা এ মুহূর্তে ঠিক হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা ইমপ্লিমেন্টেশন প্রসেসে যায়। এখানে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটতে পারে, প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত আকারে কিছু হয়নি।’ ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদী আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এভাবে এক বছর চলার পর চলতি বছরের ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এ কমিটিতে স্থান পাননি বেশ কিছু সক্রিয় নেতা-কর্মী

আরো সংবাদ