বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ নেতা যশোরের বালিয়া ভেকুটিয়ার সাব্বির আহমেদ রাসেল হত্যা মামলায় আটক এড়িয়ে চলা তিন সন্ত্রাসী এবার হত্যার হুমকি দিচ্ছে নিহত রাসেলের বাবা সালেক মৃধাকে। হত্যা মিশন সদস্য সামিরুল ইসলামসহ ওই তিন সন্ত্রাসীর কারণে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন নিহতের পরিবার। এদিকে এই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করা ৯ আসামির মধ্যে ৩ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় যশোরের বালিয়া ভেকুটিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা সালেক মৃধার সামনেই তার ছেলে বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ রাসেলকে গলা কেটে হত্যা করে এলাকার চিহ্নিত সংঘবদ্ধ একটি সন্ত্রাসী চক্র। অপর ছেলে আল আমিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় ১৬ এপ্রিল রাতে বাবা আবু সালেক মৃধা এলাকার চিহ্নিত ২৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আসামি করা হয় বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মৃত শাহাদত হোসেনের ছেলে শহিদুজ্জামান শাহীন, মাঠপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলাম মসলের ছেলে সামিরুল ইসলাম (২৮), মাধঘোপপাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে পিচ্চি বাবু (২৪), বালিয়া ভেকুটিয়ার সিদ্দিকুর রহমান ওরফে শিয়াল সিদ্দিকের ছেলে শাহিন, শ্মশানপাড়ার শানু ফকিরের ছেলে সোহাগ, সাগর ও সোহেল, দ্বীনছে আলীর ছেলে জনি, মূত রুহুল আমিনের ছেলে সেলিম, ইদ্রিস আলী ওরফে মাদ্রাজের ছেলে আমির হোসেন, বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের স্মৃত শাহাদাতের ছেলে শামীম, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের রন্টু মিয়ার ছেলে শান্তি, দুলাল মিয়ার ছেলে। আজাদ, মোশারফ হোসেন ওরফে গুজুর ছেলে আশিক, চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ওমর আলী, বালিয়া ভেকুটিয়ার মিয়ারাজ মোড়লের ছেলে ইমদাদুল হক, বালিয়া ভেকুটিয়া মাধঘোপপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলী সেগুনের ছেলে খায়রুল ইসলাম, একই এলাকার আকরাম আলীর ছেলে হাসিব, আবু তাহের ড্রাইভারের ছেলে সবুজ হোসেন, মূত সলেমান মন্ডলের ছেলে রেজাল্টল ইসলাম, পাকদিয়া গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে আলমগীর হোসেন, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মোসলেম সরদারের ছেলে রমজান আলী সরদার, বড় ভেকুটিয়া গ্রামের ইনছার আলীর ছেলে এনামুল ও আবুল হোসেনের ছেলে মতিয়ার রহমান।
মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি ভদন্ত করে। এই দুটি ইউনিট একে একে মামলার ১২ আসামি আটক করে। আর আটক এড়িয়ে চলা শুরু করে ১২ আসামি। পুলিশি আটক অভিযানের এক পর্যায়ে মামলার আসামি গত ২২ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এরা হচ্ছে শহিদুজ্জামান শাহীদ, খাইরুল ইসলাম, সবুজ হোসেন, শামীম, সেলিম মিয়া, মোহাম্মদ আলমগীর, রমজান সরদার, আশিক হোসেন ও আজাদ। এদের ৫ দিনের রিমান্ড চান তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ইন্সপেক্টর মাসুম কাজী। ২৭ অক্টোবর রিমান্ড শুনানী শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দিন হোসাইন ৮ জনের মধ্যে সেলিম মিয়া, আশিক হোসেনও আজাদের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদের জামিন মঞ্জুর না করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেন।
নিহত রাসেলের বাবা সালেক মূধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিনি স্থানীয় না হওয়ায় তার মামলার ব্যাপারে কোন প্রকার সহায়তা পাননি। আওয়ামী লীগে দীর্ঘ ৪০ বছর সময় দিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে জানান, পুরস্কার হিসেবে খুন হলো এক ছেলে। আর এক ছেলে ঢাকায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
তিনি আরও বলেন, আটক হওয়াদের মধ্যে ৮ জনকে স্থানীয়দের সহযোগীতায় তিনি নিজে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন। আর পুলিশ ধরেছে মাত্র ৩ জনকে। তারা শুধু পিচ্চি বাবুকে ধরেছে। প্রধান আসামি শহিদ উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে যশোরে আসে বিমানে। বিমান বন্দর থেকে ৫০টি মটরসাইকেল ও ৩টি প্রাইভেটকারে মহড়া দিয়ে সে ভেকুটিয়ায় আসে। এমনকি তার বাড়ির সামনে গিয়ে করে গালিগালাজ। দিয়ে আসে নতুন করে হত্যার হুমকি। শহিদ জানিয়ে আসে একটি হত্যা করলেও যে শাস্তি, আরো দু একটি হত্যা করলেও একই শাস্তি হবে। এছাড়া আটক এড়িয়ে চলা মামিরুল সোহাগ ও জনি তাকে এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমমি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে মামলার ভদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর মাসুম কাজী বলেন, মামলার বেশিরভাগ আসামিই আইনের আওতায় এসেছে। বাকি কয়েক আসামি আটকে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এই আসামিরা আত্মগোপনে আছে। তাদের মোবাইল ট্রাকিং অব্যাহত রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই পলাতক আসামিদেরকেও ধরা হবে।