আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৮:২৮

আমার ছোট আপা


ডা.নুজহাত চৌধুরি : তাঁকে আপা বলি কিন্তু তাঁর কাছ থেকে পাই মায়ের মত স্নেহ। মাতৃস্নেহ দিয়ে তিনি আমাকে জয় করে নিয়েছেন আমূলে। নিজে ডেকে কাছে টেনে নিয়েছেন, স্নেহ ও ভালবাসায় অভিভূত করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের ছোট মেয়ে – শেখ রেহানা। নিভৃতচারী এই মানুষটি নিজ জীবনে পোড় খেয়েছেন অনেক, বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েছেন খুব ছোট বয়সেই। তাই সচেতনভাবেই নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন দুর্ভেদ্য এক দেয়ালে। আমার ধারণা তাই হয়ত, তাঁকে ভুল বুঝে বেশি মানুষ, চেনে খুব কমই। অথচ যাকে তিনি কাছে যেতে দেন, তারা দেখে তাঁর এক ভিন্ন রূপ যাকে ভাল না বেসে পারা যায় না। যারা তাঁর ভিতরের সেই প্রকৃত রূপটি দেখার সুযোগ পেয়েছেন, গর্ব করে বলি, সেই সৌভাগ্যবানদের একজন আমি।  তাই তাঁর জন্য আমার আজ কলম তুলে নেয়া। আমি তাঁকে যেমন দেখি—সেটা একটু জানাতে চাই সবাইকে। ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন  ছিল। তাঁকে আমার দেবার কিছু নেই, তিনি কিছু নেনও না। তাঁর জন্য এটা আমার জন্মদিনের উপহার।

আমার প্রথম থেকেই কখনও তাঁর সাথে মিশতে, কথা বলতে কোন দ্বিধা বা জড়তা কাজ করেনি। তাঁর সাবলীল, আন্তরিক, সহজ ব্যবহার জড়তা তৈরিই হতে দেয়নি। তাঁর সামনে আমার নিজের মত থাকতে, যা খুশি বলতে তাঁর কাছ থেকে ছিল সীমাহীন প্রশ্রয়, তাই হয়ত আমার কোনো সংকোচ কাজ করেনি কখনও। যে মানুষটা বেশিরভাগ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রাখেন নিজেকে, কাছে ভিড়তে দেন খুব কম মানুষকে তাঁর কাছ থেকে আমার মত সাধারণ একজনের জন্য কেন এত ভালবাসা, কেন এত প্রশ্রয়? এ আমার কাছে এক অপরিসীম বিস্ময়। জিজ্ঞেস করলাম একবার। উত্তরটা আমাকে জড়ালো আরো কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসার বন্ধনে। তিনি নিজ জীবনে প্রচণ্ড বিরুদ্ধ স্রোতের বিরুদ্ধে একা লড়াই করে জয়ী হয়েছেন। কারো সাহায্য কখনও নেননি, পানওনি। তিনি নিজে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়া মানুষ। তাই তেমন মানুষদেরই পছন্দ করেন, যারা ভেঙে পড়েনি, কারো সাহায্যের আশায় বসে থাকেনি। আমার মার প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা। একটি বৈবাহিক সূত্রে তাদের পরিবারের সাথে আমাদের পারিবারিক বন্ধন থাকায় আমার বাবা-মাকে তাঁরা মামা-মামী ডাকেন। শ্যামলী মামীর কথা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন।  তার এক বিশেষ দিক হল তার প্রখর স্মৃতিশক্তি। এতোটাই প্রখর যে তিনি কোনো নাম, কোনো ঘটনা ভুলে যেতে পারেন—তা নিজেও বোধকরি বিশ্বাস করেন না। এই একই কথা আমরা শুনতে পাই বঙ্গবন্ধুর সম্বন্ধেও। যারা বঙ্গবন্ধুকে চিনতেন তাঁরা বলেন, তিনি যে কোনো কর্মীকে একবার দেখলেই মনে রাখতে পারতেন এবং পরেরবার দেখা হলে অনায়াসে বলতেন, তুই অমুক না? সেই কর্মী সারাজীবনের জন্য তার ভক্ত হয়ে যেত। এমনটাই শুনেছি বঙ্গবন্ধু সম্বন্ধে। আর ঠিক তাই দেখি ছোট আপার ভিতর। বোধকরি বড় আপাও তেমনই হবেন।
আর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য তার রসবোধ। তার কথায় হাস্যরস থাকে, স্যাটায়ার থাকে। স্যাটায়ার কিন্তু সব মানুষ বোঝে না। এটা বড় আপারও আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনেক কথা ভুলভাবে ব্যাখ্যা পায় মানুষের স্যাটায়ার বুঝতে পারার অক্ষমতার জন্য। ছোট আপার ক্ষেত্রে দেখেছি, নিজেকেও বাদ দেন না, বরং নিজেকে নিয়েই তিনি নিরন্তন হাসিঠাট্টা করে যান। নিজেকে এতো সাধারণভাবে দেখতে তাঁদের এতো বড় মানুষকে আমি খুব কম দেখেছি। আবার অনেক হূদয় ভাঙা কথা, দুঃখের কথা অনেক সময় হাসির ছলে বলে দেন। হাসিটা মুখে থাকে, অন্তরের বেদনাটা বুঝে নিতে হয়। তাঁর প্রশ্রয়ে, আদরে তাঁর সাথে গল্প করি বন্ধুর মত। তিনি খুব রসিয়ে, জমিয়ে গল্প করেন। আর সেই আড্ডা দিয়ে আমি দারুণ আনন্দ পাই। এক দিনের কথা বলি। দিনটা শুরু থেকেই ভাল যাচ্ছিল না। সকাল থেকেই অফিসে ঝামেলা, কলিগদের খ্যাচ খ্যাচ, অপারেশন করতে বসেছি তাতেও জটিলতা। একেবারে বিরক্ত, সব শক্তি নিঃশেষিত অবস্থায় বিকেলবেলা গাড়িতে বসে ফোনটা খুলে দেখি ছোট্ট একটি ম্যাসেজ: “আসামি হাজির”। আমার দিনটাই উজ্জ্বল হয়ে গেল। বলছিলাম না, তাঁর রসবোধের কথা? আমি একা একাই কিছুক্ষণ হাসলাম। তারপর ফোন করে দীর্ঘ জ্যামের পথ গল্প করতে করতে কখন বাড়ি পৌঁছে গেলাম, বুঝতেই পারিনি। তাঁর কাছে বসে চোখের দিকে তাকালে যে জিনিসটা আমার ভিতর সবচেয়ে দাগ কাটে, তা তাঁর হূদয়ের নিরন্তন রক্তক্ষরণ। বাবার প্রচণ্ড আদরের ছোট্ট মেয়েটা এক রাতে সব হারিয়ে হঠাত্ মাটিতে পড়ে গেল। সে সময় তাঁর বয়স কত হবে? ১৯? ২০? একমাত্র বড় বোনটি ছাড়া তাঁর তো আর কেউ ছিল না। নিজের স্বামী-সংসার তো তখনো হয়নি যে তারা সহায় হবেন। তারপর কি দীর্ঘ এক ঘুরে দাঁড়ানোর, একা লড়াই করার ইতিহাস। কত লোকের কত বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী। লন্ডনে প্রথমদিকে তার টিকে থাকার সংগ্রাম শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। কিভাবে পারলো ওইটুকু ছোট মেয়েটা? এতো মায়া লাগে তখন।
কিন্তু তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, উঠে দাঁড়িয়েছেন। নির্লোভ, সহজ, সাধারণ জীবনের মধ্যদিয়ে অসাধারণ অর্জন করেছেন। তাঁর পুত্র-কন্যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তাঁর কন্যা টিউলিপ নিজের রাজনৈতিক জীবনের সাফল্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব বিদেশের মাটিতেও প্রমাণ করেছেন। বস্তুত, কর্মফলই সত্যের বৈধতা প্রকাশ করে দেয়। বঙ্গবন্ধুর খুনীর ছেলে আজ যে দেশে আইন ভঙ্গকারী, সেই দেশেই একজন সম্মানিত সাংসদ ও আইনপ্রণেতা বঙ্গবন্ধুর পৌত্রী। একেই হয়ত বলে ‘ন্যাচারাল জাস্টিস’। এই বিজয় ছোট আপার রক্ত পানি করা পরিশ্রমের ফসল। শুধু তাঁর তিনটি সন্তানই নয়, বড় আপার দু’জনও যেন তারই সন্তান। তেমনভাবেই কথা বলেন তিনি। তিন নয়, বলেন আমার পাঁচটি সন্তান। এর পিছনেও আছে দীর্ঘ সংগ্রামের ও নীরব আত্মত্যাগের কাহিনী, যা রয়েই গেল লোকচক্ষুর আড়ালে।  একজন সংগ্রামী শেখ হাসিনাকে পাবার জন্য, একজন শেখ রেহানাকে পাঁচটি বাচ্চার মা’র দায়িত্ব নিতে হয়েছে। দেশের জন্য বড় আপা নিজেকে উত্সর্গ যখন করে এদেশে ফিরে আসেন তখন বড় আপার বয়সই মাত্র ৩২। আমরা কেউ কখনও ভেবে দেখি না, কি বিশাল তাঁর ব্যক্তিজীবনের ত্যাগ। একজন মা হিসেবে অনুভব করতে পারি,  কি অপরিসীম কষ্ট বুকে চেপে সেই ৩২ বছর বয়সী মা বাচ্চাগুলোকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিশ্চিত জীবনের আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। আর পিছনে ফেলে আসা বড় আপার দুই সন্তানসহ, নিজের তিনজনকে নিয়ে, জীবনের উত্তাল ঝড়ে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। ভীষণ বিপদের দিনেও ছোট্ট বাসায় নিজের চাকরির স্বল্প আয়ে, কড়া শাসন আর বুকভরা ভালবাসা দিয়ে তাদের এমনভাবে বড় করেছেন তিনি যে আজ সমগ্র বাংলাদেশ তাঁদের অর্জনে গর্বিত হয়। তবে আমি মনে করি, কর্মক্ষেত্রের সাফল্যের চেয়েও বড় সাফল্য নিহিত রয়েছে, মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্ম যেভাবে গড়ে উঠেছেন সেটায়। তাঁদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ যাদের হয়েছে তাঁরা জানেন যে, কি অমায়িক, কি বিনয়ী এই মানুষগুলো। এই যে অসাধারণ হয়েও অত্যন্ত সাধারণ জীবন ও আচরণ – এটা যেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের, রক্তের একটি বিশেষ গুণ। আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের কথা শুনি তখন বার বার একই কথা উচ্চারিত হয় – কি অসাধারণ হয়েও ব্যবহারে, জীবনাচরণে কি সাধারণ, কি সিম্পল, কি মাটির কাছাকাছি ছিলেন তাঁরা। আজ যখন দিন অনেক অন্যরকম, এখনও যদি নিরাপত্তার বলয়ের কৃত্রিম দূরত্ব ভেদ করে, কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া যায় – তখন সেই একই সাধারণ, সহজ, অমায়িক মানুষ চোখে পড়ে তাঁর  জয়, পুতুল, ববি, টিউলিপ এমন কি ছোট্ট রুপন্তির ভিতর। রাজনীতির জগতের আরেক পরিবারে আমরা যখন দেখি রাজকীয় জীবনধারা, দম্ভ, অসদাচরণ – সেখানে বিদেশের মাটিতে বড় হওয়া মানুষগুলোকে এতটা মাটির কাছাকাছি দেখে অবাক লাগে। এই বিরল অর্জন নিশ্চয়ই রক্তের ধারা। কিন্তু তারপরও নিজে একজন মা হিসেবে বুঝি, এই বিরল অর্জনের পিছনে আছে দুটি বুদ্ধিমতী মায়ের অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার এই ব্যক্তিজীবনের অর্জন হয়ত এই দেশকে সুফল দেবে আরও কয়েক প্রজন্ম।
আজও এই সুদিনেও, ছোট আপা তাঁর নিজের সহজ, সাধারণ জীবনে কোনো পরিবর্তন আনেননি। একজন মহান রাষ্ট্রনায়কের কন্যা, একজন প্রধানমন্ত্রীর বোন, একজন ব্রিটিশ সাংসদের মা অথচ এখনও থাকেন একটা সেমি-ডিটাচড বাড়িতে, এখনও টিউবেই যাতায়াত করেন, বাড়িতে গেলে নিজে হাতে রেঁধে খাওয়ান। প্রথম যেদিন তাঁর লন্ডনের বাসায় গেলাম, রাতের খাবার পর, খুব সাধারণ একটি গাড়িতে করে তাঁর ছোট মেয়ে রুপন্তি নিজেই নামিয়ে দিয়ে আসলো টিউব স্টেশনে। আমার মনটা খুব খারাপ হলো। খালি মনে হলো, এতো ভালো মানুষগুলোরও কত শত্রু, কত নিন্দুক কত কথাই না বলে! মনে হলো, একবার যদি নিন্দুকেরা দেখতে পারতো কি সাধারণ তাঁদের জীবন, তবে এই পরিবারটি নিয়ে কেউ কখনও মিথ্যা অপবাদ দিতে পারতো না। তাঁর এই আতিথেয়তার গুণাবলি নাকি তাঁর মায়ের মত। বঙ্গমাতার বাড়িতে গিয়ে কেউ না খেয়ে ফেরত আসেনি বলেই শুনেছি। মায়ের মতই তিনি অতিথিপরায়ণ, অনেক আদর-যত্ন করে খাওয়ান, সাথে মজার গল্প করেন। আমি তাঁর কাছ থেকে উপহার পেয়ে ধন্য। আমার সবচেয়ে সুন্দর জামদানীর কয়েকটাই তাঁর দেয়া। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যাবার সৌভাগ্য যখন হয়, অনেক সময়ই আমি তাঁর দেয়া শাড়ি পরেই যাই। কিন্তু তিনি নিজে কিছু নেন না। একবার আমি খুব চেপে ধরলাম, কিছু একটা আমি তাঁকে উপহার দেবোই দেবো। তিনি নিরুপায় হয়ে শেষে বললেন: “আচ্ছা ঠিক  আছে তাহলে তুমি আমাকে বই দিও। এমন বই যা পড়ে আমি কয়েকদিন আচ্ছন্ন থাকবো”। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কি রুচিশীল মানুষটা। তিনি অনেক বই পড়েন, গান শিখতেন এক সময়, এখনও অনেক গান শোনেন, গান গাইতেও পারেন, গুণ গুণ করে নিজের মনে গান আর সুরে মগ্ন থাকেন।
এই দীর্ঘ সংগ্রাম, দীর্ঘ পথ চলা যে তার ক্ষতচিহ্ন রেখে যায়নি – তা কিন্তু নয়। এই কষ্ট তাঁর ভিতর গভীর ক্ষত রেখে গেছে – এতোটাই গভীর সে ক্ষত যে, এখনও তা তাঁকে প্রায়শই নিদ্রাহীন রাখে। আমি জানি না অন্যরা দেখতে পায় কিনা, কিন্তু আমি তাঁর চোখের দিকে তাকালেই সেই গভীর ক্ষত, তীব্র বেদনা আমার চোখে পড়ে। হয়তো আমি নিজেও আরেক পিতৃহীন মেয়ে বলে তা আমার চোখে পড়ে, বা সে কারণেই হয়ত তিনি আমাকে সেটা দেখতে সুযোগ দেন। অথবা হয়তো যার যায় শুধু সেই বোঝে হারানোর ব্যথা। সেই ভয়াল সময়ের অনেক স্মৃতিচারণ তিনি করেন। তিনি বলে যান, শুনতে শুনতে আমার হাত-পা হিম হয়ে আসে। তাঁর বেদনা পরিমাপ আমিই বা কি করে করি? আমি তো পুরো পরিবার হারাইনি। আর যে বয়সে বাবাকে হারিয়েছি, পৃথিবীর কঠিন রূপ বোঝার বয়স তখনো আমার হয়নি। সব ঝড় গেছে আমার মা’র উপর দিয়ে। কিন্তু তিনি তো শুধু বাবা হারাননি, ভাই-ভাবি, ছোট্ট রাসেল, মা— কাকে তিনি হারাননি সেদিন, বড় বোনটি ছাড়া? আর এরপর শুরু হয় মানুষের রঙ পাল্টানোর বিচিত্র খেলা। বিশ্বাসঘাতকতা, লাঞ্ছনা আর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে যাবার এক দীর্ঘ করুণ অধ্যায়। ওই কোমল বয়সে এতো বড় আঘাত আর পৃথিবীর এই ক্রুরতা। অতটুকু মেয়ে, একা এই কঠিন পথ পাড়ি দিলো কত কষ্টে কে তার হিসেব রেখেছে? সেই পথের পরেও আরও যত পথ তিনি পাড়ি দিয়েছেন, আমার মনে হয়েছে, জীবন যেন কখনই কোমল ছিল না তার প্রতি। অথচ বাবা-মায়ের কি আদরেরই না ছিল ছোট মেয়েটি। তিনি গল্পের ছলে বলে যান তাঁর কথা কিন্তু বোঝা যায় ভিতরের গভীর  ক্ষত থেকে এখনও হচ্ছে নিরন্তন রক্তক্ষরণ।
অসম্ভব এক লড়াকু মানুষ তিনি। স্মৃতি তাঁকে যতই ক্ষত-বিক্ষত করুক, তিনি এগিয়েই যান। সব শোককে তিনি শক্তিতে পরিণত করছেন। অভিমান, রাগ, ক্ষোভ নিশ্চয়ই আছে কিন্তু তিনি তা ছাপিয়ে দেশকে, মানুষকে ভালবাসতে পারেন অনায়াসেই। দেশের মানুষের মঙ্গল চিন্তায় আকুল থাকেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব পত্রিকা পড়েন। মমতাময়ী মা যেমন দূরে থেকেও সন্তানের উপর ছায়ার মত থাকেন, তেমনি দূরে থেকেও তার সজাগ দৃষ্টি, সযত্ন ভালবাসা থাকে দেশের উপর। তিনি বলেন, “কারো উপকার করতে না পারি, আমার দ্বারা কারো যেন কোনো ক্ষতি না হয়”। নিভৃতে, নীরবে তিনি দিয়েছেন অনেক, দিচ্ছেন অনেক, নিজেকে আড়ালে রেখেই।
আজ তাঁর জীবনের অনেক পরিণত সময়।  তাঁর নিজের সন্তানের সন্তান হয়েছে। এরা তাঁর নয়নের মণি। তিনি যেন নিমগ্ন তাঁদের ভিতর। এখনও নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। আমার ভাবতে ভাল লাগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একা নন, তাঁর পেছনে ছায়া হয়ে রয়েছেন ছোট আপা। আমাদের দেশের কী পরম সৌভাগ্য যে, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই ভয়াল রাতে সব হারানোর ক্ষণে, এই বোন দুটো বিদেশে ছিলেন, বেঁচে গেলেন। আজ তাঁদের হাত ধরে বেঁচে আছে বাংলাদেশ। তাঁদের জন্য আমাদের করার কিছুই  নেই। শুধু সর্বান্তকরণে দোয়া করি তাঁরা দীর্ঘজীবী হোন। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারদের বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে। ছোট আপার জন্মদিনে তাঁর  সুস্থ, সুন্দর, শান্তিময় দীর্ঘ জীবন কামনা করি। 

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত