আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ৭:২০

এতিমখানার কাগজে সবাই এতিম, বাস্তবে বরাদ্দের টাকা লুট

এতিম শিশু নেই, তবু চলছে এতিমখানা। বরগুনায় এতিমখানার নামে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। চিহ্নিত ওই প্রতারক চক্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের এ মচ্ছব বন্ধ করতে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও পাঠিয়েছে তারা।

জানা যায়, বরগুনা শহরের মাদরাসা সড়কে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নেছারিয়া শিশু সদন। কাগজপত্র আর সাইনবোর্ডে এ এতিমখানাটির অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। পাশাপাশি অবস্থিত বরগুনা দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদরাসার আবাসিক ছাত্র হোস্টেলটিকে দেখানো হয়েছে নেছারিয়া শিশু সদন হিসেবে। এমনকি মাদরাসার হোস্টেলে থাকা ছাত্রদের এতিম বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নেছারিয়া শিশু সদনের কাগজপত্রে ৮৪ জন এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। সরকারি নিয়মানুযায়ী মোট এতিম শিক্ষার্থীর অর্ধেক অর্থাৎ ৪২ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্য জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে হিসাবে ৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রতি মাসে ৮৪ হাজার টাকা এবং বছরে ১০ লাখেরও বেশি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এই পুরো টাকাই আত্মসাৎ করছে একটি প্রতারক চক্র। অথচ বাস্তবে কোনো এতিম শিক্ষার্থীও খুঁজে পাওয়া যায়নি এখানে।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে শিশু সদনের দায়িত্বে থাকা বরগুনা নেছারিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বলেন, আমার এখানে ৪০ থেকে ৪২ জনের মতো এতিম আছে। বাকিরা দুস্থ ও গরিব। তাই তারাও এখানে থাকছে। আর এতিমখানার জন্য আলাদা কোনো ভবন নেই। তাই মাদরাসার ভবনেই রাখা হচ্ছে তাদের।

কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি এতিমখানায় ৪০ জন বরাদ্দ পেলে এতিম থাকতে হবে তার দ্বিগুণ, এমন প্রশ্নে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান।

আর বরাদ্দ বাতিল করা হবে জানিয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, যেসব শিশু সদনে এতিম নেই, তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে। মা-বাবার ডিজিটাল মৃত্যু সনদ দেখে প্রকৃত এতিম শিশু বাছাই করা গেলে রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের এ মচ্ছব বন্ধ করা যাবে। এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, জেলার সর্বোচ্চ ইসলামি বিদ্যাপীঠ বরগুনা নেছারিয়া কামিল মাদরাসা। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্র হোস্টেলকে শিশু সদন বলে চালিয়ে দিয়েছে এবং এতিম না থাকলেও লাখ লাখ টাকার অনুদান নিচ্ছে। সরকারের উচিত প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারি শিশু সদন নির্মাণ করা। তাহলে সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হলে দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না।

বরগুনা জেলায় সরকারের তালিকাভুক্ত সর্বমোট ১২৪টি এতিমখানা রয়েছে। এসব এতিমখানায় এতিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৩৮৮ জন। কিন্তু বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। এসব এতিমখানার নামে নানা কৌশলে প্রতি মাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্র।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা এতিমখানাগুলো ঘুরে দেখছি। যে এতিমখানায় যে কয়জন প্রকৃত এতিম আছে, তাদের নাম উল্লেখ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এতিম নেই, অথচ ক্যাপিটেশন গ্রান্ট (মাথাপিছু অনুদান) পাচ্ছে, এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত