কেশবপুরে মনোনয়ন পেলে দেশে ফিরবেন অতিথি পাখি ওয়াহিদ সাদিক ও নওরীণ সাদেক। ইসমাত আরা সাদেকের মেয়ে নওরীণ সাদেক ও চিত্রনায়িকা শাবানা’র স্বামী ওয়াহিদ সাদিক; দুজনেই নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশায় কেশবপুরে গণসংযোগ শুরু করেছেন। দুজনেই থাকেন আমেরিকায়। তাই শুরুতেই তারা বললেন, ‘মনোনয়ন পেলে দেশে ফিরবেন।’
স্টাফ রিপোর্টার : যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসন শূন্য হতে না হতেই মৌসুমী পাখির আগমন ঘটতে শুরু করেছে। মায়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই মাঠে নেমে পড়েছেন সদ্যপ্রয়াত সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি’র মেয়ে নওরীণ সাদেক। আর নওরীণের পর স্বামী ওয়াহিদ সাদিককে নিয়ে ময়দানে হাজির হয়েছেন চিত্রনায়িকা শাবানা ।
চারণায় নেমেই শাবানার স্বামী চলচ্চিত্র প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক দাবি করলেন, কেশবপুরে কোনো উন্নয়ন হয়নি।তবে এলাকায় আসা যাওয়া না থাকায় ভোটের আগে মনোনয়ন প্রত্যাশায় এমন আনাগোনাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তীর্যক দৃষ্টিতে দেখছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক। ২৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেক’র মৃত্যুর দশদিন পর তার মেয়ে নওরীণ সাদেক আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন। আর ৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন চিত্রনায়িকা শাবানা ও তার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক।শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের বাড়ি কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক’র বাড়িও বড়েঙ্গা গ্রামে। তিনি দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকও দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ইসমাত আরা সাদেক ও শাবানার শ্বশুরবাড়ি এক উঠানেরই দুই প্রান্তে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মঙ্গলবার কেশবপুরে এসে গণসংযোগ শুরু করেছেন চিত্রনায়িকা শাবানা ও তার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক। দুপুরে বড়েঙ্গা গ্রামের বাড়িতে তারা সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।চলচ্চিত্র প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক সাংদিকদের জানান, ‘গত নির্বাচনে পারিবারিক অনুরোধে আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয় ইসমাত আরা সাদেকের কারণে আমি নির্বাচন করিনি। কিন্তু তিনি এলাকার কোনো উন্নয়নই করেননি। গত ৪/৫ দিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে নির্বাচন করার অনুমতি নিয়ে আজ থেকে এলাকায় নির্বাচনী কাজ শুরু করছি। দলীয় মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।’তিনি উল্লেখ করেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমি আমেরিকা থেকে চলে আসবো। আমি ঢাকা গুলশান এলাকার ভোটার তবে দলীয় কোনো পদে নেই। আমেরিকার পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করবো।’ইসমাত আরা সাদেক কন্যা নওরীণ প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘নওরীণ তো আমেরিকায় থাকে। তার বয়স অল্প, ছোট বাচ্চা আছে।’
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও ওয়াহিদ সাদিক এলাকায় এসে এ ধরনের প্রচারণা শুরু করেছিলেন। সেসময় এলাকায় তাদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এসময় ওয়াহিদ সাদিকের বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশারও গুঞ্জন ছিল।
এদিকে, মায়ের মৃত্যুর দশদিন পর ৩১ জানুয়ারি নির্বাচনী তৎপরতায় নেমে পড়েন প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের মেয়ে নওরীণ সাদেক। এদিন মঙ্গলকোট ইউনিয়নে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। পরদিন কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মনোনয়ন প্রত্যাশায় গত কয়েকদিন ধরে তিনিও এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন।
মায়ের মৃত্যুর সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই নওরীণ সাদেকের নির্বাচনী মাঠে নামায় কেশবপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ‘মায়ের মৃত্যুশোকের চেয়ে ক্ষমতার স্থান অনেক উপরে।’ নওরীণও মতবিনিময়কালে বলেছেন, মনোনয়ন পেলে তিনি আমেরিকা থেকে চলে আসবেন।
নওরীণ সাদেকের পর চিত্রনায়িকা শাবানা’র স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের এই আগমনকেও সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তীর্যক দৃষ্টিতে দেখছেন। দুজনকেই ‘ভোটের মৌসুমে এলাকার অতিথি পাখি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’
কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ নওরীণ সাদেক ও ওয়াহিদ সাদিককে অতিথি পাখি হিসেবেই দেখছে। আওয়ামী লীগ তো দূরের কথা এলাকার কোনো মানুষের সাথেই তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। ভোটের মৌসুম হলে তারা এলাকায় ছুটোছুটি করেন। একজন তো মায়ের মৃত্যুর সপ্তাহ পার না হতেই মাঠে নেমেছেন। আরেকজন এর আগে ভোটের মৌসুমে একই ধান্দায় এসেছিলেন।
গাজী গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, এদের কারো সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। আর ওয়াহিদ সাদিক ও তার পরিবার তো বিএনপি ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত। আর এরা সবাই দলীয় সভানেত্রীর নাম ব্যবহার করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি অতিথি পাখির পরিবর্তে স্থানীয় যে কোনো নেতা নৌকার মনোনয়ন পাক, এ দাবি তুলে ধরেন।