আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১০:৪০

গরুর চামড়া ৪০-৪৫ টাকা, খাসির ১৫-১৭

এ বছর কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকাতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা আর ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা দর নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে প্রতি বর্গ ফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরীর চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব অনুযায়ী এ দর নির্ধারণ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বৈঠকে এ দর নির্ধারণ করা হয়।

নির্ধারিত দর বাস্তবায়নের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোরবানির সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধ জড়িত। চামড়ার সঙ্গে মাদ্রাসা, মসজিদেও স্বার্থ জড়িত। এছাড়া চামড়ার টাকা গরিব মানুষের স্বার্থে যাবে। সেহেতু চামড়া যেন নায্য দামে বিক্রি হয় এবং কোথাও চামড়া নষ্ট না হয় সরকার তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে অভিজ্ঞতা নির্ধারিত দরে চামড়া বিক্রি হয়নি।

মন্ত্রী বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিতে আমরা খুব আনন্দবোধ করি না। কিন্তু যখন দেখি চামড়া দাম পাচ্ছে না তখন এসব ভাবতে হয়। এছাড়া গত অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ভালো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় দেশের পরিস্থিতি ও সরকারের মনোভাব বুঝবে।

প্রথমে বাণিজ্য সটিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে চামড়ার দাম কমেছে। কিন্তু বাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে সিইটিপি প্রস্তুত। সিইটিপি প্রস্তুত না থাকায় এতদিন সমস্যার কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন। এবার তা বলার সুযোগ নেই। রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থাৎ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনায় এবছর কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সেই দাম এবার নির্ধারণ করা হচ্ছে।

বাণিজ্য সচিব ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা আর ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। আর সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা আর বকরীর চামড়ার দও ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য সচিবের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দাম নির্ধারণ করা হলে ট্যানারিগুলো চামড়া কিনতে পারবে না। তিনি গত বছরের চেয়ে বর্গফুটে ৫ টাকা বেশি মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। উল্লেখ্য, গত বছর ঢাকাতে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, আর ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা তর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই দামে চামড়া বিক্রি হয়নি। অনেক জায়গায় চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে।

চামড়া খাতের আরেক ব্যবসায়ী নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, বাস্তবতার ভিত্তিতে গত বছরের তুলনায় দাম কম হওয়া উচিত। ব্যাংক ঋণ দিলেও তার সুদ আছে। তিনিও গরুর চামড়া গত বছরের তুলনায় ৫ টাকা বেশি দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, এভাবে দাম নির্ধারণ ঠিক হবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণের সুযোগ নেই। সবশেষে গত বছরের চেয়ে ৫ টাকা বেশি নির্ধারনের সুপারিশ করেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব্যবসায়ীদের মতামত শুনে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত দাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা (ব্যবসায়ীরা) যেটা বললেন, সেটা মানলাম। আল্লাহর ওয়াস্তে এই দামটা নিশ্চিত করবেন।’

আরো সংবাদ