আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৪৪

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নানামুখী উন্নয়ন কার্যক্রম চলেছে

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতৃভূমি গোপালগঞ্জে সড়ক বিভাগের আওতায় নানামুূখী উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সড়ক সংস্কার, চলমান প্রকল্প গুণগতমান বজায় রেখে বাস্তবায়ন এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলমান সড়ক উন্নয়নের ফলে ক্রমশ বদলে যাচ্ছে জেলার দৃশ্যপট। জেলার ৫টি উপজেলায় সড়ক সংস্কার, প্রশস্তকরন ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হতে চলছে। এর ফলে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে চলছে। প্রশস্ত সড়কে অনায়াসে চলাচল করছে গোপালগঞ্জবাসী। দ্রুততার সাথে খুব অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌছাচ্ছে। জেলার গুরুত্বপূর্র্ণ সড়কের মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে সিগনালবাতিও।
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, বিগত দুই অর্থ বছরে ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশ, টুঙ্গিপাড়া-ঘোনাপাড়া মহাসড়ক, চাপাইল-কালিয়া মহাসড়ক, গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া-পয়সার হাট মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পর্যাপ্ত দিক নির্দেশক, রোড স্টিট লাইট, গাইড পোষ্ট, সাইন সিগনাল স্থাপন করা হয়েছে। সড়কের ইন্টারসেকশন উন্নয়নের জন্য জেলার মহাসড়ক সমূহ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিজয়পাশা, ফুকরা, রামদিয়ায় ইন্টারসেকশনের কাজ চলছে। ৩০০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পটহোলস ফ্রি রয়েছে। সড়ক ভবনের দৃষ্টিনন্দন ফটক, বাগান নির্মাণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয়েছে। সড়ক বিভাগের আবাসিক এলাকায় পুকুর সংস্কার, ঘাটলা ও বসার স্থান নির্মাণ, পুকুরের চারপাশে হাটারপথ তৈরী, কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ৬তলা ভবন নির্মাণ কাজ, উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের কোয়ার্টার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর বাসভবন নির্মাণসহ খেলার মাঠ তৈরী কাজ চলমান রয়েছে।

টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ষের জেলা সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ৬’শ ১২ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে  সড়কটির বর্তমান প্রশস্ততা ১৮ ফুট হতে প্রায় ৩৬ ফুটে উন্নীতকরণ করা হবে। আগামী ৩০ জুন’২০২৪ এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ প্রকল্প’র আওতায় চলমান রয়েছে  ফুকরা লঞ্চাঘাট-রামদিয়া সড়ক, রামদিয়া সেতু নির্মাণসহ রামদিয়া-বাইপাস, বিজয়পাশা-তালারহাট-জয়নগরঘাট সড়ক, গেড়াখোলা-কাশিয়ানী সড়কের নির্মাণ কাজ। আগামী ৩০ জুন’২০২২ চলমান প্রকল্পের এসব কাজ সম্পন্ন হবে।
গোপালগঞ্জ টেকেরহাট সড়কের বানিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা বিনয় মল্লিক বলেন, টেকেরহাট গোপালগঞ্জ সড়কটি অপ্রশস্ত ও খানাখন্দরে ভরে ছিল। ইতোমধ্যে সড়ক বর্ধিতকরণ ও সংস্কার শুরু হয়েছে। এটির কাজ শেষ হলে আমরা স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারবো। সেই সাথে এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পরবো। ফলে কৃষক তার পণ্যের নায্যমূল্য পাবে।
ওই সড়কের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ শিশির মোহন্ত, অজয় রায়, পরিতোষ শাঁখারী, দীলিপ গাইন, সদানন্দ বিশ্বাস, কংকন বারুরী, তালুকদার, সুকুমার বাকচী, ঝর্ণা আক্তার, সীমা আক্তার,মোঃ লিটন খাঁন, মোঃ রুহুল আমীন, সহিদ শেখ, লিয়াকত আলী খান বলেন, আমরা বহুবছর ভাঙ্গা রাস্তায় চলাচল করেছি। এখন রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাটি ঠিক হলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল কলেজে যেতে সুবিধা হবে। সেইসাথে এলাকার উৎপাদিত ফসল সঠিক দামে বেচাবিক্রি হবে।  যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করায় সড়ক বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ট্রাক চালক মোঃ জসিম উদ্দিন শরীফ  বলেন, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশে বেশ কিছু মোড় বা বাজার রয়েছে। সেসব স্থান অন্ধকারাচ্ছন্ন। এসব এলাকায় প্রায়ই ঘটতো দুর্ঘটনা। বর্তমানে  রাস্তার ঝুকিপূর্র্ণ স্থানে লাইট ও নির্দেশনা লাগানো হয়েছে। এতে আমাদের দিনে বা রাতে গাড়ী চালাতে সুবিধা হচ্ছে।  আগের চেয়ে দুর্ঘটনাও কম হচ্ছে। এ উদ্যোগ আরো আগে নেয়া উচিৎ ছিল।
ইমাদ পরিবহনের চালক সাজ্জাদ শেখ বলেন, আমরা আগে বাস চালাতাম ভয়ে ভয়ে। কারন রাস্তায় কোন বাতি বা সিগনাল লাগানো  ছিলোনা। বর্তমানে সিগনালবাতি, রাস্তার মোড় গুলোতে বাতির ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের দুইপাশে ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে। এখন অনাসায়ে চলাচল করতে পারি। এ জন্য সরকার ও সড়ক বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া সড়কের  পাটগাতী এলাকার বাসিন্দা মোঃ রানা বলেন, বর্তমানে সড়কের অবস্থা খুবই ভালো। বাড়ি থেকে যে কোন স্থানে অনাসায়ে চলাচল করতে পারছি। কোন ধরনের সমস্য হচ্ছেনা। শুনেছি ঘোনাপাড়া থেকে পাটগাতি পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে হবে। এ এক্সপ্রেস ওয়ে নিমাণের পরে আর আমাদের এ রোডে কোন দুূর্ঘটনা ঘটবেনা বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রাইভেটকার চালক মেহেদী হাসান বলেন, এমন একদিন গেছে যাত্রীরা গাড়ী থেকে নেমে যেতে চেয়েছে। ভাঙ্গাচোরা রাস্তার জন্য ছোট গাড়ীতে উঠতোনা। এখন আর সেই সমস্যা নাই। ভাড়াও হচ্ছে বেশ। যাত্রীরাও স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সড়কের এ উন্নয়নকাজ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন চাহিদাও বাড়ছে। সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সর্বোপরি সড়ক উন্নয়ন বর্তমান সরকারের সুনজরের ফসল। সড়ক বিভাগ ভবিষ্যতের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। এতে গোপালগঞ্জবাসীর জীবনমান উন্নত হবে।

এ কর্মকর্তা আরো জানান, গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের সওজ নেটওয়ার্ক আদর্শে রুপান্তরিত করার লক্ষ্যে ৩-৫ বছর মেয়াদী বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে বিভিন্ন সড়কের পেভমেন্ট ডিজাইন, ব্রীজ/কালভার্ট ডিজাইন, জিওমেট্রিক ভেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ঘোনাপাড়া-টুঙ্গিপাড়া সড়কের ১০ কিলোমিটার ধীরগতির লেনসহ উন্নয়ন প্রকল্প, যথাযথ মান ও প্রসস্থতায় উন্নীত করা হবে টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া জেলা সড়ক, কোটালীপাড়া-রাজৈর জেলা সড়ক, বরইতলা-মুসকুদপুর জেলা সড়ক, বাজুনিয়া-গান্ধিয়াশুর জেলা সড়ক ও গোপালগঞ্জ-বর্নি-সিঙ্গিপাড়া জেলা সড়ক। এছাড়াও গৌরনদী-আগৈলঝাড়া-পয়সারহাট-কোটালীপাড়া-গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটি যথাযথ মান ও প্রসস্থতায় উন্নীতকরন এবং কোটালীপাড়া-রাধাগঞ্জ-দক্ষিণ ডাসার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (মাদারীপুর সড়ক বিভাগের সহিত একীভুত) হাতে নেওয়া হয়েছে। এভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়তি গোপালগঞ্জের মহাসড়ক সমূহে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল নিরাপদ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং তা অব্যহত থাকবে।
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সুরুজ মিয়া বলেন, সড়ক বিভাগের উন্নয়নের সুফল গোপালগঞ্জের জনগণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। এ এলাকার উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এসে অনাসায়ে কিনে নিচ্ছেন। স্থানীয়রা সাচ্ছন্দে গন্তব্যে যেতে পারছেন। ভবিষ্যতে আমাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে সেসব কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হলে গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ উন্নত দেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

আরো সংবাদ