আজ - রবিবার, ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৬:৫২

চেয়ারম্যান দিলুর বিরূদ্ধে হত্যা মামলা- পুরুষশূণ্য হুলিহট্ট!

“বাঘারপাড়ায় উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে”

উল্লেখ্য এ পর্যন্ত দিলু পাটোয়ারি সহ তার ইউনিয়নের ২৮২ জনের বিরূদ্ধে এমপি রণজিত কর্তৃক এরকম বানোয়াট মামলার সংখ্যা ১৯টি, এবং দিলুর বিরূদ্ধে একক ভাবে ৬ টি মামলা রয়েছে। মাহিদুল হত্যা মামলা দিয়ে দিলুর বিরূদ্ধে মামলা সংখ্যা দাঁড়ালো মোট ৭ টি। ৬টিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিনও নিয়েছেন দিলু। তবে ৭ নাম্বারটি নিয়ে এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তিনি।

বিশেষ প্রতিনিধি : গেল শুক্রবার সকালে বাঘারপাড়ার হুলিহট্ট গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান ও তার ভাবি তাইজুল ইসলামের স্ত্রী নাসিমা বেগমের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় মিজানুরের ধাক্কায় নাসিমা আহত হয়। তাৎক্ষনিক নাসিমাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে ভর্তি করে নেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন অর্থাৎ শনিবার ভোরে সাড়ে ৪টার দিকে নাসিমার ভাই মোস্তফা কাজি ও তার ছেলে মহিদুল সহ ১৫/১৬ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল মিজানুরের বাড়িতে হামলা চালালে মিজানুরের একটি চোখ উপড়ে যায়। এসময় মিজানুরের অত্মচিৎকারে এলাকবাসী ছুঁটে এসে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ অনেক মানুষ দেখে ডাকাত মনে করে তাদের ধাওয়া দিলে ধরা পড়ে মহিদুল বাকীরা পালিয়ে গেলেও আরও তিনজন পাশের গ্রামে ধরা পড়লে জনৈক আবুল কালামের বাড়ি রাখা হয়। এ সময় তাদের কাছে রাম দা, কুড়াল ও হাতুড়ি সহ দেশীয় অস্ত্র ছিলো। আবুল কালামের কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে আনতে গেলে আবুল কালাম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে গ্রামবাসীদের বলেন চেয়ারম্যান,মেম্বার আসলে তোমারা বিচারে বসো- মারামারি হানাহানি দরকার নেই। ততক্ষণ এরা আমার হেফাজতে থাকবে। এদিকে গণপিটুনে মহিদুলের অবস্থা আসঙ্কাজনক হয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মাসুদুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মহিদুল কে উদ্ধার করে দ্রুত যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে শনিবার রাতে মহিদুলের মৃত্যু হয়।

অপরদিকে আহত মিজানুর রহমানকে ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত মহিদুলের পিতা মোস্তফা কাজি বাদি হয়ে বাঘারপাড়া একটি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারিকে প্রধান আসামী করে আরো ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই দিলু’র নিকট আত্মীয়।

মামলার বাদি মোস্তফা কাজী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার বোন নাসিমা বেগমকে তার দেবর মিজানুর রহমান মারপিট করে আহত করে। উক্ত ঘটনা মিমাংসার জন্য মিজানুরের বাড়িতে আমারা সকলে সকাল ৯টার দিকে একত্রিত হই। আসামীদের সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে মহিদুলকে মারপিট করে রাক্তাক্ত জখম করা হয়।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারি জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি যশোর শহরে কাঁঠাল তলার ভাড়ার বাসায় অবস্থান করছিলেন সকাল ১০টা পর্যন্ত তার মোবইল ফোন বন্ধ ছিলো। ১০ টার পর দিলু তার ফোন খুলে মিসডকল এলার্ট দেখে একে একে কলব্যাক শুরু করেন, এসময় তার ভাগ্নেকে ফোন দিলে তার ভাগ্নে তাকে ভোরের মারামারি ও মামলা সম্পর্কে জানায়। এমপি রণজিতের ইশারায় তাকে উদ্দেশ্যপ্রণদিত ভাবে তাকে পূর্বের মত আসামী করা হয়েছে। বলে দাবি করেছেন দিলু পাটোয়ারি।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঘটনা সংগঘঠিত হবার সময় ভোর সাড়ে চারটা থেকে ৫ টার মধ্যে। এবং হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী আহত মিজানুর কে হাসপাতালে আনা হয় সকাল সাড়ে ৭ টায়। এবং শুক্রবার দেবরের আঘাতে আহত নাসিমা ঘটনার দিন অর্থাৎ শনিবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ হন। তাহলে সালিস করতে গেল কে বা কারা? প্রশ্ন স্থানীয়দের। তাদের দাবি একটি সালিস হলে স্থানীয় জনতা জানত, চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকতো, কিন্তু এরকম কিছু আমরা জানিনা। সালিস টা তাহলে কখন হলো? সকালে গ্রামে ডাকাত পড়েছিলো আমরা ধরে গণধোলাই দিয়েছি- পরে শুণেছি ডাকতরা নাকি নাসিমার ভাই হয়। পারিবারিক সমস্যা এতঅস্ত্রসস্ত্র নিয়ে কেউ আসে! তাও ওত ভোরে!!

এদিকে চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারি বিরূদ্ধে মামলা হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিজানুরের পরিবারের সদস্যরা। একই এলাকার ২২ জনের বিরূদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বর্তমানে পুরুষশূণ্য হুলিহট্টগ্রাম।

আরো সংবাদ