আজ - বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - সকাল ১১:৩৫

চৌগাছায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শামীম প্রতিপক্ষের হামলায় সঙ্কটাপন্ন।

স্টাফ রিপোর্টার।।  চৌগাছা তথা যশোরের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী শামিম প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হ‌য়ে‌ছেন। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রোববার রাত ১১টার দি‌কে শামি‌মের নেতৃ‌ত্বে এক‌টি সন্ত্রাসী বা‌হিনী আওয়ামী লী‌গের উপ‌জেলা ক‌মি‌টির সদস্য জ‌সিম উদ্দিনের ব্য‌ক্তিগত কা‌রে চেপে চৌগাছা পৌরসভার কু‌টিপাড়া মো‌ড়ে আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মমিনের ওপর হামলা করতে যায়। শামিম-মমিন একসময় হরিহর আত্মা ছিল। তাদের দুইজনের নেতৃত্বাধীন বাহিনী এলাকায় খুন-খারাবি থেকে শুরু করে বহু অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিল। পরে দুইজনের বিচ্ছেদ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শামিম বাহিনীর হামলা সফলভাবেই রুখে দেয় ম‌মি‌নের অনুসারীরা। ঘটনাস্থলে শামিম ছাড়াও ম‌মি‌নের প‌ক্ষের কু‌টিপাড়া এলাকার আজানুর রহমা‌নের ছে‌লে মিলন নামে একজন আহত হন। তা‌দের দুইজন‌কেই প্রথমে চৌগাছা হাসপাতা‌লে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ডাক্তাররা তাদের য‌শোর জেনা‌রেল হাসপাতা‌লে স্থানান্তর করেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক তন্ময় সাহা জানান, শামিমের মাথা ও মুখমণ্ডলে আঘাত লেগেছে। সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। রিপোর্ট খুবএকটা খারাপ না।
তবে যেহেতু মাথায় ইনজুরি তাই ৭২ ঘণ্টা পার না হলে কিছু বলা যাবে না মন্তব্য করে ডা. তন্ময় জানান, শামিমকে মডেল ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালে শামিমকে আনার পর সেখানে জড়ো হন তার অনুসারী ৫০-৬০ জন। তারা জানান, সন্ত্রাসী মমিনের লোকজন শামিমের ওপর হামলা করেছে।

চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রা‌জিব ব‌লেন, ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে।

সং‌শ্লিষ্ট সূত্রগু‌লো জানায়, ১৯৯৬ সা‌লে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শামিম কবীর ওর‌ফে শামি‌মের নেতৃ‌ত্বে বিশাল এক ক্যাডার বা‌হিনী গ‌ড়ে ওঠে চৌগাছায়। শামিমের প্রধান সহযোগী ছিল মমিন। নতুন নতুন নৃশংসতার নজির সৃষ্টি করে এই বাহিনী বিশাল এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে। তা‌দের অত্যাচা‌রে মানুষ দি‌শেহারা হ‌য়ে প‌ড়ে।

১৯৯৯ সা‌লের ২০ ফেব্রুয়ারি দি‌নের বেলা প্রকা‌শ্যে চৌগাছা উপ‌জেলা বিএন‌পির সহ-সভাপ‌তি মকবুল মেম্বার‌কে কু‌পি‌য়ে হত্যা ক‌রে তা‌দের বা‌ড়ি-ঘ‌রে আগুন ধ‌রি‌য়ে দেয় এই বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, একই বছরের ১১ এপ্রিল বেড়‌গো‌বিন্দপুর বাঁও‌ড়ের গার্ড শ‌হিদুল ইসলাম‌কে অনেকটা খেলার ছ‌লে হত্যা ক‌রে শামিম বাহিনী। শ‌হিদুল ইসলাম‌কে হত্যা ক‌রেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা, লাশ থে‌কে না‌ড়িভুঁ‌ড়ি আলাদা ক‌রে বাঁও‌ড়ের পা‌নি‌তে ভা‌সি‌য়ে দেয়। ২০১২ সা‌লে মুক্তিপণের দাবি‌তে গরিবপু‌রের স্বপন সাহার চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে সৌরভ‌কে অপহরণেও অভিযুক্ত এই বাহিনী। সৌর‌ভের বাবা মুক্তিপণ না দেওয়ায় নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা ক‌রে পাষণ্ডরা।

২০১৩ সা‌লের ২৬ সে‌প্টেম্বর শামিমের নেতৃ‌ত্বে সব‌চে‌য়ে আ‌লো‌চিত হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। সেই দিন তারা সিংহঝু‌লি ইউ‌নিয়ন প‌রিষ‌দের চেয়ারম্যান, য‌শোর জেলা ছাত্রলী‌গের সা‌বেক সভাপ‌তি জিল্লুর রহমান মিন্টু‌কে দি‌নের বেলা বহু মানু‌ষের সাম‌নে গু‌লি ক‌রে হত্যা করে তারই ইউনিয়ন পরিষদের আঙিনায়। এঘটনায় মমিনের সঙ্গে বেনা‌পো‌লের সন্ত্রাসী আ‌মিরুল ইসলাম, য‌শোর সদ‌রের নান্নুসহ আ‌রো ক‌য়েকজ‌নের না‌মে মামলা হয়। মামলা‌টি বর্তমা‌নে য‌শোর আদাল‌তে বিচারাধীন আ‌ছে।
এর আ‌গে র‌্যাব সদ্যস্যরা অস্ত্রসহ আটক ক‌রেছিল দুর্ধর্ষ শামিমকে। সে মামলায় য‌শোরের আদাল‌ত তাকে ১৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়। কিন্তু আপিলের পর বর্তমা‌নে মামলা‌টি উচ্চ আদাল‌তে বিচারাধীন আ‌ছে।

শামিমের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা এবং নানা লোমহর্ষক খুন-খারাবি করেও পার পেয়ে যাওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার আশীর্বাদ রয়েছে। প্রভাবশালী এক নেতাদের সঙ্গে তার দৃষ্টিকটু সখ্যও সর্বজনবিদিত। আজ আহত এই সন্ত্রাসীকে দেখতে রাতেই যারা যশোর জেনারেল হাসপাতালে আসেন, তাদের মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামও ছিলেন। তবে তিনি সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।

আরো সংবাদ