আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - দুপুর ১:৫২

ছাত্রনেতা রাসেলের লাশ নিয়ে শহরে মিছিল – সন্ত্রাসী শহীদের ফাঁসির দাবি।

“আমার ভাই মরল কেন এমপি নাবিল জবাব দাও” – “খুনি শহীদের ফাঁসি চাই”- “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবোনা “

মুনতাসির মামুন।। দুপুর আড়াইটা। কাঁধে রাসেলের লাশ। যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে মিছিলের গন্তব্য রাজপথ। দাবি এমপি নাবিল জবাব দাও। খুনি শহীদের ফাঁসি চাই। বলছিলাম সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের বালিয়া ভেকুটিয়ায় অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীদের নৃশংস হামলায় নিহত সাব্বির আহমেদ রাসেলের কথা।

বালিয়া ভেকুটিয়ার শ্মশান পাড়ার আবু ছালেক মৃধার ছেলে সাব্বির আহমেদ রাসেল (২৫) এর মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেয়ার জের ধরে জন্ম হয় শত্রুর। সেই পূর্ব শত্রুতার সূত্র ধরে গতকাল (বুধবার) রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাসেল হত্যার মিশনে যায় সদর ৩ আসনের সাংসদ নাবিল আহমেদের লালিত মাদক ব্যবসায়ী শহীদুজ্জামান শহীদ ও তার গং।

রাসেলের জানাজার দৃশ্য

এ সময় রাসেলের নিজ বাসভবনের সামনে রাসেলের বড় ভাই আল আমিন (২৬) কে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে এবং রাসেলকে জবেহ করে দেয় সন্ত্রাসীরা।

সেই মিশনে অংশ নেয় যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুজ্জামান শহীদ, শামিরুল, পিচ্চি বাবু, আজাদ, শান্ত, সোহাগ, আমির, সেলিম, জনি, মতিয়ার মেম্বার, শহীদুজ্জামান শহীদের ভাই শামিম সহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জন।

জানাজায় জনতার ঢল নামে

নিহত রাসেলের বাবা আবু ছালেক মৃধা খানজাহান আলী 24/7 নিউজকে বলেন, অভিযুক্তরা প্রায়ই মাদকদ্রব্য নিয়ে তাঁদের বাড়ীর সামনে দিয়ে অবাধ যাতায়াত করে। হাঁস মুরগি মেরে ফেলে৷ তাঁরা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না৷ ঘটনার দিন রাতে রাসেলরা তাঁদের বাড়ীর সামনে অবস্থান করছিলেন এবং হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণের তালিকা করছিলেন৷ এসময় হটাৎ ঝড়ের গতিতে একটি মটর সাইকেল তাঁদের বাঁধিয়ে ফেলে দেয়ার উপক্রম করে অতিক্রম করে। বিষয়টি খারাপ লাগায় রাসেল বলে ” হে ভাই তোমরা কারা! এত গুলো মানুষের ভেতর দিয়ে এভাবে যেতে হয়? ” হটাৎ ব্রেক করে মটর সাইকেল টি। দু জন ব্যক্তি নেমে এসে ( শামিরুর ও পিচ্চি বাবু) রাসেলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ওরা নিজেদের মুখে মোবাইলের আলো ফেলে বলে তুই কাকে কী বলছিস? চিনতিসিস নে? আমি শামিরুল তুই কিডা? এই কার সাথে কথা কচ্ছিস? এসময় বাকবিতন্ডা এড়ানোর জন্য রাসেলের বাবা ছালেক মৃধা এগিয়ে আসেন বলেন, বাবা আমার ছেলে যদি অন্যায় কথা বলে থাকে মাফ করে দাও তোমরা চলে যাও বাবা৷ এ সময় শামিরুল তার মটর সাইকেলের তেলের ট্যাঙ্কিতে থাবা মেরে বলেন, ওরে ( রাসেল) আজকে মেরে ফেলাবো নইতো আমি বিষ খাবো৷ বলে চলে যায় শামিরুল ও পিচ্চি বাবু।

জবেহ করার পর নিহত রাসেল।

এরপর মতিয়ার মেম্বারের আম বাগানে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে হত্যা পরিকল্পনা। সেখানে শহীদুজ্জামান শহীদ, মতিয়ার মেম্বার ও শহীদের ভাই শামিম শামিরুল ও পিচ্চি বাবু দের নির্দেশনা দেয়। সে নির্দেশনা মোতাবেক রাত সাড়ে নয়টার পর খবরের শিরোনাম হয়ে যান বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের সাধারন সম্পাদক সাব্বির আহমেদ রাসেল ও তার ভাই আল আমিন। আল আমিনের অবস্থাও বিপজ্জনক। সে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর রাসেল আজ বৃহস্পতিবার আছর বাদ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন।

এ প্রসঙ্গে আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম বলেন কয়েকদিন আগে অভিযুক্ত হত্যাকারীদের নাম আমি নিজে তালিকা করে আমার ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএসবি কর্মকর্তার কাছে দিয়েছি। থানার ওসিকে অনুরোধ করেছি। তদন্ত করে এই ছেলে গুলোর বিরুদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। সে পক্রিয়া চলমান তাঁর মধ্যেই এই হত্যাকান্ড। আমি আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর এই প্রথমবার মানুষ হত্যাকান্ড দেখলো৷ এটা একটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এ হত্যার দ্বায় সাংসদ নাবিল আহমেদ কোন ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেননা। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকরীদের আশ্রয়দাতা শহীদ নাবিল আহমেদের ছত্রছায়ায় থেকে মাদক সন্ত্রাস শেষমেষ এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। শাহারুল ইসলাম দুঃখ করে বলেন, যে লোকটি ( ছালেক) ভ্যান চালিয়ে ৪০ টি বছর এই দলের পেছনে শ্রম সময় অর্থ বিসর্জন দিয়েছেন আজ আমরা তাঁর সন্তানের লাশ উপহার দিলাম। এই কী ছিল দলের কাছে ছালেকের চাওয়া? আমি এই হত্যাকান্ডে জড়িত ও মদদ দাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে রাসেলের ময়নাতদন্ত শেষে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আক্তার হোসেন ও আরবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ডিএম তারেক হাসান দিপুর নেতৃত্বে লাশ নিয়ে শহরে মিছিল বের করেন। পরে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামানের অনুরোধে মিছিলটি বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে এসে শেষ হয়। এরপর এ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় রাসেলের বাড়ী বালিয়া ভেকুটিয়ার শশ্মান পাড়ায়। সেখানে আছরের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাব্বির আহমেদ রাসেলকে।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত