আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৭:২৬

নভেম্বরের মধ্যে হতে যাচ্ছে বাঘারপাড়া উপজেলা আ-লীগের সম্মেলন

নাঈম সাব্বির, (স্পেশাল করসপন্ডেন্ট পলিটিক্স) : গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ভুলে যশোরের আওয়ামী লীগ নেতাদের একযোগে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। গত দুই দিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষ বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এই নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা না মানলে আসছে নির্বাচনে দলীয় টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আগামী নভেম্বরের মধ্যে যশোর সদর, বাঘারপাড়া উপজেলা ও যশোর শহর কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করার তাগাদা দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য উপজেলা কমিটিগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিবদমান গ্রুপের নেতাদের সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। তবে পরিস্থিতি যেখানে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক, সেখানে এই নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে খোদ জেলা নেতাদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।

যশোরে আওয়ামী লীগের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। কিন্তু তা গত কিছুদিন যাবত নগ্নভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এই কোন্দল ঢাকা পর্যন্ত গড়ায়। আবার যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুই উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে। সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামও নিজ নামে স্লোগান দেওয়ানোর মাধ্যমে তার শক্তি প্রদর্শনের কোশেশ করেছেন ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিন।

এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত আগামী নির্বাচনে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় নেতাদের। সে কারণে তারা দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ঢাকায় ডাকেন। গত ২০ ও ২১ জুলাই রাজধানীতে সিরিজ বৈঠক হয়।

দলীয় নেতারা জানান, বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল উপস্থিত ছিলেন। ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় সংকটের কারণ এবং কীভাবে তা সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে জানতে চান। পরে তারা গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে দল পরিচালনার নির্দেশনা দেন।

নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী নভেম্বরের মধ্যে তিনটি ইউনিটের সম্মেলন করতে হবে। ইউনিট তিনটি হলো, যশোর সদর উপজেলা, বাঘারপাড়া উপজেলা ও যশোর শহর কমিটি।

জানতে চাইলে যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিতকুমার নাথ বলেন, ‘নেত্রী নির্দেশনা দিলে সম্মেলনের জন্যে প্রস্তুত আছি। তার নির্দেশের বাইরে কিছু হবে না।’

অন্যদিকে, উপজেলা মর্যাদার অন্য ইউনিটগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে পুনর্গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এক্ষেত্রে বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টির তাগাদা দেওয়া হয়েছে। পুনর্গঠিতব্য কমিটিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে শূন্যতা রয়েছে।

তবে কীভাবে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে, তা স্পষ্ট নয়। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। জাতীয় দিবস ও কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করে দুই গ্রুপ। তাদের অনুসারীরা উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটেও দ্বিধাবিভক্ত। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি সংঘাতময়। নানা স্থানে মারপিট হচ্ছে প্রায়ই। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাজপথে দাঁড়িয়ে দলীয় কর্মসূচিতে বিষোদ্গার করছেন। গত দুই দিনের বৈঠকের নির্দেশনা বাস্তবায়নের কৌশল জানতে চাইলে চাইলে একাধিক নেতা কোনো জবাব দেননি। কীভাবে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন তারা।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সকলকে একসাথে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সমন্বয় করে কাজ করলে এক সময় কোনো কোন্দল থাকবে না।’

গত ১০ জুলাই দীর্ঘদিন দিন বাদে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়ে গেল। ওই সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের কোন্দল আরো মাথাচাড়া দিয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন যে দুই নেতা, তারা আওয়ামী লীগ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। একই গ্রুপ থেকে ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্ব আসায় বেজায় ক্ষিপ্ত হন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও তার অনুসারীরা। তারা ছাত্রলীগের নয়া সভাপতির বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ নিয়ে হাজির হন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নির্বাচিত নেতৃত্বকে বহাল রাখতে শাহীন চাকলাদার ও তার অনুসারীরাও ছোটেন ঢাকায় এবং সফলতা নিয়ে যশোর ফেরেন।

এই পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব ভুলে কীভাবে একযোগে কাজ করা সম্ভব, তা ভাবিয়ে তুলছে নেতৃত্বকে। যদিও গত দুই দিনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টিকারীদের আগামী নির্বাচনে দলীয় টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলছেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। সেখানে অনেক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তিনটি কমিটির কাউন্সিল নভেম্বরের মধ্যেই হবে। বাকিগুলো কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের নির্দেশনায় জেলার সভাপতি-সেক্রেটারি সমন্বয় করে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

আরো সংবাদ