আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৬:২৭

না ফেরার দেশে চলে গেলেন যশোরের সাংস্কৃতিককর্মী রাফিয়া আফরোজ

চলেই গেলেন রাফিয়া আফরোজ তন্বী। প্রায় দু’দিন লাইফসাপোর্টে থাকার পর শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার দুপুর একটার পর ঢাকার বনানীতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন তিনি ও তার স্বামী সৈয়দ মামুনুর রহমান বাবলু। ওই দুর্ঘটনার পর বাবলু সুস্থ হলেও তন্বীকে আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালের লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। সেখান থেকে আর ফেরেননি তিনি, চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর।

রাফিয়া আফরোজ তন্বী যশোরের এক সময়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অভিভাবক ও উদীচী যশোরের সভাপতি প্রয়াত রুহুল হক খোকার বড় মেয়ে। দু’বোনের আর একজন লুবনা আফরোজ পাপ্পুও সাংস্কৃতিক কর্মী। স্বামী সৈয়দ মাসুদুর রহমান বাবলু বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা। তার ছেলে সৈয়দ নাইয়ার রহমান মুগ্ধ ঢাকার গ্লোরি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ও মেয়ে সৈয়দা রায়সা রহমান শহীদ আনোয়ার স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

রাফিয়া আফরোজ তন্বীর স্বজনেরা জানান, শুক্রবার দুপুরে পাপ্পুও দু’সন্তানকে বিমানে তুলে দেয়ার জন্য তারা নিজেদের গাড়িতে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। দুপুর একটায় পাপ্পুদের যশোরের ফ্লাইট ছিল। বোন ও সন্তানরা বিমানে উড়াল দেয়ার পর স্বামীর সাথে তিনি বাড়িতে ফিরে আসছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন স্বামী বাবলু। বনানীতে পৌঁছানের পর গাড়ির ব্রেক ফেইল করে ট্রাফিক আইল্যান্ডের সাথে ধাক্কা খায়। সেখানে গুরুতর আহত হন তন্বী। তিনি বুকে ও মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান। এ দুর্ঘটনায় তার স্বামী আহত হলেও তা গুরুতর ছিল না। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর সেখান থেকে পরের দিন তাকে আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে তন্বীকে মৃত ঘোষণা করেন। রোববার জোহরের নামাজের পর ইব্রাহিমপুর বড় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রাফিয়া আফরোজ তন্বী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৪ সালে ১৭ মে যশোরের পোস্ট অফিস পাড়ায়। তিনি নিজেও ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ বা এমএম কলেজ শাখা উদীচীর প্রথম সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পরে সংগঠনের যশোর জেলা সংসদের সম্পাদকমন্ডলীতে বিভিন্ন শাখায় দীর্ঘদিন সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন উদীচী যশোর পরিচালিত অক্ষর শিশু শিক্ষালয়ের শিক্ষকও। ২০০০ সালে বিয়ের পর ঢাকার ইব্রাহিমপুরে স্বামীর সংসারে চলে যান। তার পিতা প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রুহুল হক খোকা ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মারা যান। মা তাদের সাথে থাকেন। এদিকে, রাফিয়া আফরোজ তন্বীর মৃত্যুতে শোকে ভাসছে যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। ভোর রাত থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মীদের শোকগাথায় ভারী ওঠে ওঠে ফেসবুক। দেশ ও বিদেশে অবস্থানকারী বন্ধু, পরিচিতজন, সাংস্কৃতিক কর্মীরা নিজেদের ওয়ালে একের পর এক পোস্ট দিয়ে শোক প্রকাশ করছেন।

উদীচী যশোরের শোক কর্মসূচি:
রাফিয়া আফরোজ তন্বীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে উদীচী যশোর। সেইসাথে দু’দিনব্যাপী শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। রোববার দুপুরে উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংগঠনের এমএম কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জেলা সংসদের সম্পাদকমন্ডলীর সাবেক সদস্য ও অক্ষর শিশু শিক্ষালয়ের সাবেক শিক্ষক রাফিয়া আফরোজ তন্বীর মৃত্যুতে দু’দিনবব্যাপী শোক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সংগঠন কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, সাংগঠনিক পতাকা অর্ধনমিত রাখা, উদীচী যশোর ও অক্ষর শিশু শিক্ষালয়ের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখা এবং ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সংগঠন কার্যালয়ে তন্বীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার আত্মার শান্তি কামনায় মোমবাতি প্রজ্জ্বালন।

আরো সংবাদ