আজ - বৃহস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ১২:৪৭

প্রকাশ্যে এলো গোয়েন্দা নথির বঙ্গবন্ধু

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংকলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে ১৪ খণ্ডের এ সংকলনের প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।

১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করত পাকিস্তানের ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি)। সেই প্রতিবেদন খণ্ড আকারে প্রকাশ শুরু করেছে হাক্কানী পাবলিশার্স।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাক্কানী পাবলিশার্সের প্রকাশক গোলাম মোস্তফা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা ও তার নাতি রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই প্রকাশনায় অমূল্য তথ্য ভাণ্ডার রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট সবই জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ রিপোর্ট তারপরও কেন আমরা প্রকাশ করলাম, এটা অনেকের মনে আসতে পারে?’

‘আমি জানি না পৃথিবীতে কোথাও কোনো দেশে কেউ কখনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট হলে সেটা প্রকাশ করেছে কি না? আমার মনে হয় আজ পর্যন্ত বোধহয় কেউ করেনি। কিন্তু আমার আগ্রহ এ কারণেই এই রিপোর্টের মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতিটি কর্মকাণ্ড, তিনি কী করেছেন, কোন মিটিং করেছেন। কোন মিটিংয়ে কী বক্ততা দিয়েছেন, তার অনেক তথ্য সেখানে আছে।’

বইটির প্রকাশনা হাক্কানী পাবলিশার্সের গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এই বইটি পড়ার সময় কেউ চোখের জল আটকিয়ে রাখতে পারবেন না।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেন। পাকিস্তান ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আই বি) প্রতিষ্ঠান প্রতিমুহূর্তে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট পাঠাত। এরই ভিত্তিতে বিনা বিচারে আটক, মামলাসহ নানামুখী নির্যাতন চলত।

১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নামে স্পেশাল ব্রাঞ্চে খোলা ব্যক্তিগত ফাইলে সংরক্ষিত সংকলন করা হয়েছে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অমূল্য এ ডকুমেন্ট দেশ-জাতি ও বহির্বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খণ্ডে প্রকাশিত হবে।

এর আগে ৭ জুলাই গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার অনুষ্ঠানে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ তথ্য জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি) ৪৭টি রিপোর্টের ফাইল থেকে ১৪ খণ্ডের বই প্রকাশের কাজ চলছে।’

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের একটি খবর দিচ্ছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে কী আছে তা দেখতে চাইলাম। তখনকার ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি) এখন এসবি (স্পেশাল সিকিউরিটি ব্রাঞ্চ) আমি এসবির ওখান থেকে আইবি রিপোর্ট ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার বিরুদ্ধে কী কী রিপোর্ট দিয়েছিল, সমস্ত ফাইল নিয়ে আসি। ৪৭টি ফাইল মাত্র একজন নেতার নামে। আরও অনেক নেতার ফাইল আমি ঘেঁটেছি। ওই একটা পাতলা ফাইল ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু একজনের বিরুদ্ধে অর্থাৎ জাতির পিতার বিরুদ্ধে ৪৭ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত যত রিপোর্ট ওখানে রয়ে গেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই রিপোর্টগুলো কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে লেখা। এর মাধ্যমেই কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও রিপোর্ট আছে। আমি সেই রিপোর্টও এটা শেষ হলে আনবো। এ তথ্যগুলো আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে জানতে পারবেন, কত কষ্ট করে এই সংগঠন করা আর কত কষ্ট করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’

আরো সংবাদ