আজ - শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৯:২৩

ফাঁসির আদেশ সই করে পাঠাতো জিয়া, ট্রাইব্যুনাল শুধু পড়ে শোনাতো’ : সিআরআই

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর লোক দেখানো ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ফাঁসির আদেশে সই করে পাঠাতেন। আর ট্রাইব্যুনালের কাজ ছিল তা পড়ে শোনানো। শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘ইতিহাসের অবরুদ্ধ অধ্যায়: ১৯৭৫-৯৬’ শীর্ষক আলোচনায় কথাগুলো বলা হয়।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ও পরবর্তী সময়ে সেনা বাহিনীর অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বলা হয়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অবরুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড

সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে স্থান করে দিতে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। এ সময় ১১ হাজার ৪৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। আরও সারে ৪ হাজার সেনা সদস্যের উপর নির্যাতন চালানো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের জন্য পায়ে বালির বস্তা বেঁধে ঝোলানো হতো। একই নামের দুইজনের একজন যাবজ্জীবন ও ওপর জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলেও দ্রুত কার্যকর করার জন্য দু’জনকেই ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।’

সাংবাদিক জাহিদুল হাসান পিন্টু বলেন, ‘আমার গবেষণায় পাওয়া তথ্যে কুমিল্লার এক জল্লাদ একাই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন ৯২ জনকে। এই ফাঁসি কার্যকরের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে জেনেছি, ফাঁসির রায়ে আগেই জিয়ার সই দেওয়া থাকত। তারা শুধু জিয়ার দেওয়া রায় পড়ে শোনাতো।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘খাবার টেবিলে বসে জিয়া একহাতে খাবার খেয়েছে ও অন্য হাতে ফাঁসির আদেশে সই করে গেছে। এমনকি ফাঁসির আদেশে সই করার জন্য তার সঙ্গে বিমানবন্দর পর্যন্ত গিয়েছে সেনা সদস্যরা।’

‘ফাঁসির আদেশ সই করে পাঠাতো জিয়া, ট্রাইব্যুনাল শুধু পড়ে শোনাতো’

বাবার হত্যাকারীদের নাম লেখা হতো না

বুদ্ধিজীবী সন্তান নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করে আমার বাবাকে হত্যা করা আত্ম-স্বীকৃত খুনি দৈনিক ইনকিলাবের মাওলানা এম এ মান্নানকে প্রতিমন্ত্রী করেন। আর এরশাদ তাকে পূর্ণ মন্ত্রী করেন।’ এ সময় তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কেন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে যুদ্ধাপরাধীদের পুন স্থাপন করেছিলেন জিয়া? কেন যুদ্ধ চলাকালে তাকে সেক্টর কমান্ডার পদ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন জেনারেল ওসমানি? সেকি আইএস-এর এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তান বানানোর এজেন্ডা হাতে নিয়েছিল? আমার মনে হয় এ প্রশ্নগুলো করার সময় এসেছে।’

আলোচকেরা জানান, জিয়ার সময় থেকে পরবর্তী ২১ বছর মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা পাকিস্তানি সৈন্য কথাগুলো ব্যবহার করেনি গণমাধ্যম। জিয়ার সময় শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগ নামই উচ্চারণ করেনি কেউ। আর এরশাদের আমলেও তাচ্ছিল্য করে লেখা হতো শুধু শেখ মুজিব। মুক্তিযুদ্ধকে বলা হতো স্বাধীনতা যুদ্ধ, পাকিস্তানি সৈন্যের বদলে বলা হতো হানাদার বাহিনী। এর মূল কারণ, ওই প্রজন্মের যেন পাকিস্তান বিরোধী চেতনা তৈরি না হয়।

সঠিক ইতিহাস চর্চার সময় এখনই

এ সময় বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস চর্চার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে ব্লগার ও কলামিস্ট মারুফ রসুল বলেন, ‘সরকারের এ বিষয়ে পৃথক একটি অধিদফতর খোলা প্রয়োজন। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে চলা প্রোপাগান্ডা মুকাবিলায় সরকারের প্রতিটি দফতরকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ সকল স্থানে সরকারি দফতরগুলোর অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।’

‘ফাঁসির আদেশ সই করে পাঠাতো জিয়া, ট্রাইব্যুনাল শুধু পড়ে শোনাতো’

গণমাধ্যমের ভূমিকা বাড়াতে হবে

প্রোপাগান্ডা মুকাবিলায় গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান। তিনি বলেন, ‘বিদেশে যে কোন গণমাধ্যমের প্রতিটি বিভাগ ভিত্তিক ফেসবুক ভেরিফাইড পেজ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমের তা নেই।’ তিনি একটি বেসরকারি টিভির নাম বলে জানান, ‘তাদের নামে ২০টির বেশি ফেসবুক পেজ রয়েছে যেগুলো থেকে মাঝে মধ্যে ভুল তথ্যও প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সবগুলো পেজ ঐ প্রতিষ্ঠানের নয়।’

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার জন্য ফান্ড প্রদান করা উচিত বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনো উইকিপিডিয়াতে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু ভুল তথ্য দেওয়া আছে যা রেফারেন্সের অভাবে ঠিক করা যাচ্ছে না। আর সে জন্য আমাদের প্রচুর গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রয়োজন।’

এ সময় আলোচকেরা জানান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের চেতনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেই চেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিগুলো। আর সে কারণেই এখনো ওই অশুভ শক্তি মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করে যাচ্ছে।

তরুণদের উপস্থিতিতে হওয়া এই আলোচনা সভার উপস্থাপনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।

আরো সংবাদ