শরীয়তপুর সদর উপজেলার বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৬) ভারতে পাচার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। নারী ও শিশু পাচার রোধে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা মঙ্গলবার (৮ জুন) যশোরের চাষাড়া এলাকা থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেছে। বর্তমানে ওই কিশোরী সংস্থাটির সেফহোমে রয়েছে।
বুধবার (৯ জুন) জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিবারের কাছে কিশোরীকে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুকে পরিচয় সূত্রে প্রেম। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে সোমবার (৭ জুন) গ্রামের বাড়ি থেকে যশোর নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার ভোরে তাকে পাচারের উদ্দেশ্যে যশোরের চাষাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বেসরকারি সংস্থা অপারেশন জেনারেশনের নারী কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে মহিলা অধিদফতর নিয়ে যায়।
পরে যশোর মহিলা অধিদফতর থেকে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জেলা প্রশাসন থেকে মঙ্গলবার বিকেলে ওই কিশোরীর পরিবারকে উদ্ধার হওয়ার খবর দেয়া হয়।
কিশোরীর পরিবার জানায়, সদর উপজেলার একটি গ্রামের ভ্যান চালকের মেয়ে ওই কিশোরী। তার মা প্রবাসে থাকায় বাবার সঙ্গেই মেয়েটি বসবাস করত। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ে। ছয় মাস আগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাজহারুল নামে এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেম করে বিয়ে করে। চার মাস সংসার করার পর প্রতারিত হয়েছে এমন ভেবে তাকে ছেড়ে চলে আসে।
এরপর এক মাস আগে ফেসবুকে যশোরের এমডি শিহাব খান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক হয়। রোববার ওই শিহাব খান কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে যশোর যেতে বলেন। কিশোরী সোমবার দুপুরে একটি মোটরসাইকেল ভাড়ায় নিয়ে রাত ৯টায় যশোর পৌঁছে। সেখানে অপেক্ষারত ওই যুবক তাকে মনিহার এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে যায়।
কিন্তু কিশোরী হোটেলে থাকতে অনীহা প্রকাশ করে। তখন তাকে শহরের একটি বস্তিতে এক নারীর কাছে রাখা হয়। রাতেই তার কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়।
এরপর ভোর ৪টার দিকে ওই কিশোরীকে নেয়া হয় চাষাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ওই বাসস্টান্ড থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বাস চলাচল করে।
সম্প্রতি ভারতে নারী পাচারের বিভিন্ন ঘটনা দেশে আলোচিত হচ্ছে। এ কারণে প্রশাসন, নারী ও শিশু পাচার রোধে কাজ করা এনজিওগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে সীমান্ত এলাকায় যাতায়াতের রুটগুলোতে। ওই কিশোরীকে পাচার করা হচ্ছে এমন সন্দেহ হয় যশোরের বেসরকারি সংস্থা অপারেশন জেনারেশনের মাঠ তদন্তকারী কর্মকর্তা সুনিতা সরকারের। তিনি তখন ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন। কিশোরী তাকে সব ঘটনা জানায়। ততক্ষণে ওই যুবক সেখান থেকে পালিয়ে যায়। কিশোরীকে উদ্ধার করে সকাল ১০টায় নেয়া হয় যশোর মহিলা অধিদফতর কার্যালয়ে।
ওই কিশোরী বলেন, ‘এক মাস আগে এমডি শিহাব খান নামের ফেসবুক আইডিতে পরিচয় হয়। প্রতিদিন কথা হতো। বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাই পালিয়ে যশোর এসেছি। আমি বুঝতে পারিনি আমাকে পাচারের জন্য ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পাতা হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি রক্ষা পেয়েছি।’
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, ছোট মেয়ে নিয়ে বাড়িতে থাকি। কীভাবে কী হয়েছে বুঝতে পারছি না। সোমবার দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি মেয়ে নেই। তাকে ফোন করলে ফোন বন্ধ পাই। তার সাবেক স্বামীকে ফোন দিয়ে জানতে পারি সেখানেও যায়নি। তখন খুব চিন্তায় পড়ে যাই। ডিসি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি পাচারকালে মেয়ে যশোরে উদ্ধার হয়েছে।’
বেসরকারি সংস্থা অপারেশন জেনারেশনের মাঠ তদন্ত কর্মকর্তা সুনিতা সরকার বলেন, ‘মেয়েটির ভাগ্য ভালো আমাদের নজরে পড়েছিল। তা না হলে ভারতে পাচার করা হত। যে চক্র তাকে যশোর এনেছিল তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।’
যশোর মহিলা অধিদফতরের উপ-পরিচালক সখিনা খাতুন বলেন, ‘ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পেতে কিশোরী মেয়েদের পাচারসহ নানা অপরাধে জড়ানো হচ্ছে। একটি এনজিওর তৎপরতায় শরীয়তপুরের কিশোরী রক্ষা পেয়েছে।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, ‘কিশোরী যশোরে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। তাকে উদ্ধার করার তথ্য তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। বুধবার আমরা ওই মেয়েকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করব।’