আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - দুপুর ১:০১

বগুড়ায় বন্যায় দুই লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি ,এক মাসের ব্যবধানে দুই দফা বন্যায় বগুড়ার ৮ উপজেলায় রোপা আমন, আউশ, আমনের বীজতলা ও শাক-সবজিসহ মোট ৩৬ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ২ লাখেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, দুই দফা বন্যায় ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা টাকার অংকে ৪২৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত মাসে এবং এ মাসে বন্যায় বসত-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে শুরু বন্যায় জেলার ৩ উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটের ১৪ হাজার ৭২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় দুই সপ্তাহ স্থায়ী বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৯১০জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর গত ২৫ জুলাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তৈরী করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যায় ফসলহানির কারণে ১৫১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী প্রথম দফা বন্যায় বসত-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ওই তিন উপজেলার ২০ হাজার পরিবারের প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বগুড়া কৃষি অঞ্চলের কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, প্রথম দফার বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা যখন আমন আবাদে মনোযোগী হতে শুরু করেন তখনই  দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে যমুনা নদীর পানি আবার বাড়তে থাকে এবং ১১ আগস্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এক পর্যায়ে যমুনা বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করে। পাশাপাশি জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়। ফলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রপ নেয়। যমুনা নদী তীরবর্তী তিন উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটের পাশাপাশি শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, কাহালু এবং দুপচাঁচিয়া উপজেলা এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসল পানিতে ডুবে যায়। এতে রোপা আমন, আমনের বীজতলা, আউশ এবং শাক-সবজির ক্ষেত তলিয়ে যায়। প্রথম দফার মত দ্বিতীয় দফা বন্যাও প্রায় দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গত ২৪ আগস্ট বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ  বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে । তাতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার মোট  ২২ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ৯৭ হাজার ৫৯০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পৌনে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বানভাসী মানুষের সংখ্যাও আগের তুলনায় বেড়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার ৮ উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের ৫১১টি গ্রামের ১ লাখ ৬৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বগুড়া কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক  আতিয়ার রহমান জনান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯৭ হাজার কৃষক যাতে বিকল্প ফসল আবাদ করে ক্ষতি পূষিয়ে নিতে পারেন সেজন্য বিনা মূল্যে বীজ ও সার বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য পৃথকভাবে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কৃষি পুনর্বাসন প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষকদের  গম, সরিষা, ভুট্টা, বোরো ধান, আলু অথবা চিনা বাদাম আবাদের জন্য উৎসাহিত করা হবে। একজন কৃষককে এক বিঘা পরিমাণ জমিতে যে কোন একটি ফসল আবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও বীজ দেওয়া হবে।

আরো সংবাদ