আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ৩:৪৯

বন্ধু সৌমেন বসুর চোখে মাশরাফি!

দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ার শেষে ১৯ বছরে পা দিয়েছেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। নড়াইলের সেই দুরন্তপনা কৌশিক এখন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গোটা বিশ্ব ক্রিকেটে ‘মাশরাফি’ হয়ে উঠেছেন। এই মাশরাফি হয়ে উঠাতে কতই না কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

দুই পায়ে সাতবার অস্ত্রোপচারের পরও থেমে যাননি, বরং ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বারবার। দেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লাল-সবুজ জার্সির কলার উঁচিয়ে।

এসবের সাক্ষী গোটা দেশ, গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। গত ১৮ বছর ধরে তাকে জানলেও তার ক্রিকেটে উঠে আসার অনেক অজানা কথাই জানা নেই অনেকের।

একজন বন্ধুর চোখে মাশরাফি। লিখেছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের কাছের বন্ধুদের একজন সৌমেন বসু।
নড়াইল বয়েজ স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছে। বন্ধুদের মধ্যে সে ছিল সবার চেয়ে একটু আলাদা,সবার কাছে জনপ্রিয়,ডানপিটে একটি ছেলে।একদিন সে বলল, ‘আমার জাতীয় দলে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তোরা দোয়া করিস।’

এর আগে স্কুল টুর্নামেন্ট, সর্বকনিষ্ঠ নড়াইল জেলা টিমের খেলোয়াড় হিসাবে ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে সবখানেই তার দুর্দান্ত পারফর্মেন্স।বিভাগীয় খেলায় সফলতার পরিচয় রেখেছে।

তারপর সত্যি সত্যি ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর বাড়ির সাদা-কালো টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশের খেলা দেখতে বসে দেখলাম বোলিংয়ে আমাদের সেই স্কুলের বন্ধু,যে বলেছিল তোরা দোয়া করিস,আমার জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা আছে।তার সেই কথা তো বাস্তবে রূপ নিয়েছে,বল হাতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে আমাদের কৌশিক,সকলের প্রিয় মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা।সেদিন বোলিংয়ের আগে সে কেঁদেছিল স্বপ্ন পূরণের আনন্দে।

একদিন সে উপাধি পেলো ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। তার এই উপাধি সারাবিশ্বের কাছে নড়াইলকে পরিচয় করিয়ে দিলো এক নিমিষে, যে নড়াইলকে দেশের বেশির ভাগ মানুষই চিনত না। আমাদের সেই ছোট্ট বন্ধুটি নড়াইলকে শুধু বাংলায় নয়, পরিচয় করিয়ে দিলো সারা পৃথিবীর কাছে।

২০০১ সালের ৮ নভেম্বর থেকে আজ ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর,আঠারো বছরের সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের আজ ১৯ বছরে পদার্পণ করেছে। সফলতার হাজারো গল্প আছে তার, কলার উঁচিয়ে যে একটির পর একটি সফলতার গল্প লিখেছে,তেমনি ইনজুরির কাছে হেরে যেতে যেতে আবার উঠে দাঁড়ানোর সব ঘটনা এখন ঘুরে দাঁড়াতে চাওয়া সকলের কাছে এক বড় অনুপ্রেরণা।

ক্রিকেটার থেকে ক্রিকেট মাঠের অধিনায়ক, ক্রিকেট মাঠের সফল নেতা। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট কোথা থেকে আজকের এই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে তা সকলেরই জানা।

ক্রিকেট পাগল মানুষটি ক্রিকেট মাঠের নেতা থেকে হয়ে গেছেন জনগণের নেতা। হাল ধরেছে নিজ জেলার। যে নড়াইল জেলায় সে নিজে জিম করতে পারিনি। মাঠে কিংবা রাস্তায় মাইলের পর মাইল দৌড়িয়েছে, আজ সেই নড়াইলে তার প্রচেষ্টায় সরকার অত্যাধুনিক দুটি জিমনেশিয়াম তৈরি করে দিচ্ছে।

যে জেলায় ছোটবেলায় নিজের ইনজুরির ভালো চিকিৎসা করাতে পারেনি, সেখানে জন নেত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যার মডেল হাসপাতাল করে দিচ্ছেন, যার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যে জেলা হতে নিজে ভালো প্রশিক্ষণের পরিবেশ পাননি, আজ সেখানে নিজ অর্থায়নে করেছেন ক্রিকেট-ফুটবলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

তার মতো একজন সন্তানকে পেয়ে নড়াইল ধন্য হয়েছে। নড়াইল বাসীর প্রাণের মাশরাফি, আমাদের মাশরাফি যেভাবে ক্রিকেট মাঠে নিজের প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে,তেমনি রাজনীতির মাঠেও নড়াইলবাসীর স্বপ্ন পূরণ হবে তার হাত ধরেই।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে জাতীয় দলে ১৯ বছরে পদার্পণের এইদিনে শুধু এটুকুই বলবো,আমাদের কৌশিক ভালো থাকুক সবসময়,সে ভালো থাকলে আমরা নড়াইল বাসী ভালো থাকবো।

কোটি কোটি মানুষের আবেগ-ভালবাসার নাম,বাংলার ক্রিকেটের মুকুট হীন সম্রাট,জাতীয় সংসদ সদস্য, কিংবদন্তী প্রিয় বন্ধু কৌশিকের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত