আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ১১:০৪

বাড়ছে মশা! যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ যশোরবাসী

সালমান হাসান রাজিব : অনুকূল পরিবেশ ও আবহাওয়ায় মশার প্রজনন অনেকগুণ বেড়ে গেছে। ফলে যশোর শহরে মশার উৎপাত চরমে পৌঁছেছে। জানা গেছে, শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়ায় মশার আবাসস্থলে থাকা ডিম একযোগে ফুটছে। এতে মশার ঘনত্ব ক্রমশ বাড়ছে। তবে শহরে মশার উপদ্রব তীব্র হলেও এটি নিধনে সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি মশক নিধনে শিগগিরই যে অভিযান হবে তারও কোনো লক্ষণ নেই। ফলে দ্রুতই নিধন শুরু না হলে মশার এই ঘনত্ব বা পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, এখনই মশক নিধন অভিযানের সব চাইতে উপযুক্ত সময়। কারণ শীতকালে মশার প্রজনন বা বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রতিকূল সময়। শীতকালে মশার প্রজনন একপ্রকার বিরতি দশায় থাকলেও গরম পড়তে শুরু করলে পুনরায় শুরু হয়। তারা বলছেন, শীতের পর তাপমাত্রা এখন বাড়তে শুরু করেছে। ফলে শীতের প্রকৃতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা ডিমগুলো যেমন ফুটছে তেমন নতুন করেও মশারা ডিম পাড়ছে। কেননা চারপাশে এখন চাষাবাদ চলছে। সেখানে জমে থাকা পানিতে মশারা নতুন করে ডিম পাড়ছে। এতে করে সবমিলিয়ে মশার দ্বিগুণ বংশবিস্তার ঘটছে। যার জন্য হঠাৎ করে মশার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। তাই এখনই নিধনের উদ্যোগ না নিলে ঘনত্ব বহুগুণ বেড়ে যাবে।

এদিকে, পৌর নির্বাচন নিয়ে একটি জট চলছে। যার কারণে নির্বাচন থমকে আছে। এছাড়াও বর্তমান পৌর পরিষদও মশক নিধনে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে অন্যবারের মত এবছর গরমের শুরুতেই মশক নিধন শুরু করা যায়নি। তবে পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেছেন, মার্চের শুরুতে যাতে মশক নিধনে নামা যায় সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন।

এদিকে, মশা মারার ওষুধ ছিটালেই যে এর উপদ্রব কমে আসবে সেটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। জানা যায়, প্রতিবছরই মশক নিধন অভিযান হয়। কিন্তু তারপরও মশার উৎপাত থেকেই যায়। কারণ যখন ওষুধ ছিটানো হয় তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘ল্যাথাল ডোজ’ বা মারণ মাত্রার সঠিক প্রয়োগ হয় না। এতে না মরে মশারা উল্টো কীটনাশকে সহনশীল হয়ে যায়।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজে) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহসিন উদ্দীন জানান, শীত শেষে তাপমাত্রা একটু একটু করে বাড়ছে। এমন আবহাওয়ায় শীতকালে নিষ্ক্রিয় থাকা ডিমগুলো ফুটতে থাকবে। পাশাপাশি এখন চাষাবাদ মৌসুম চলছে। ফলে মাঠেও পানি জমে আছে। সেখানেও মশা ডিম পেড়ে বংশবৃদ্ধি করছে। আর তাই এই সময়টাই হলো মশা নিধনের উপযুক্ত সময়। এছাড়া ছাদ বাগানের দিকেও নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণিবিদ্যার এই শিক্ষক। তিনি বলেন, যশোরেও ছাদ বাগান বাড়ছে। ফলে সেখানকার টবে জমে থাকা পানিতে মশার বংশবিস্তার যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিভাগটির প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মদন কুমার সাহা জানান, দেশ এখন একটি মহামারি পরিস্থিতি অতিক্রান্ত করছে। আর তাই এমন সময়ে এডিস জাতীয় মশা থেকে ‘ডেঙ্গু’ ছড়িয়ে পড়লে নতুন করে আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই শহরের সবখানে একযোগে মশক নিধনে নামতে হবে। এছাড়া শহরের সব ড্রেনগুলোয় যাতে পানির প্রবাহ সচল থাকে সেদিকেও নজর রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, সাধারণত বদ্ধ পানিতে ডিম পেড়ে বংশবিস্তার ঘটায় মশা। তাই ড্রেনের পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে সেই সুযোগ কমে আসে।

শহরবাসী বলছেন, মশার উপদ্রব চরম আকার ধারণ করেছে। ঘরে বাইরে সবখানে মশার উৎপাত। রাতের মতো দিনেও মশারা ঘরবাড়ির মধ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে। শহরের রায়পাড়া এলাকার হেলেনা পারভীন নামে এক নারী জানান, ইদানিং মশার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। দরজা খুলে ঘরে ঢোকার আগেই এক ঝাঁক মশা ঢুকে পড়ে।
মশার উপদ্রব নিয়ে শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ হয়। তারা বলেন, রাতের মত দিনেও মশার সমান উৎপাত। সন্ধ্যার পরে ও রাতে জানালা-দরজা একটু খুললেই মশায় সারা ঘর ভরে যায়। তারা আরও জানান, মশার উপদ্রবের কারণে দিনের বেলাতেও মশার কয়েল জ¦ালিয়ে রাখতে হয়। তাতেও মশা যায় না।

ডালমিল এলাকার বাসিন্দা সিনথিয়া জামান বলেন, আমার বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। যার কারণে সমস্যা বেশি হচ্ছে। রাতের মত দিনেও মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়। তিনি বলেন, এখনকার মশারা এতটাই শক্তিশালী কয়েল জ্বালালে কিংবা ওষুধ স্প্রে করলেও মরে না। একটু পরে ঘুরে এসে উপদ্রব শুরু করে।

আরো সংবাদ