স্টাফ রিপোর্টার।। দেড় ডজন মামলার আসামি ইমরান খান ছাপ্পানের (৪৫) লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে নড়াইলে দাফন করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার লাশ উত্তোলন করে যশোরে আনা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বলে নড়াইল পুলিশ দাবি করলেও ছাপ্পানের পরিবারের দাবি, যশোরের পুলিশ তাকে আটক করেছিল। আর পুলিশই পরিকল্পিতভাবে এই খুন করেছে। এ ঘটনায় তার সহযোগীরা আত্মগোপনে গেছে।
মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্র কারবারী ছাপ্পানের লাশ অজ্ঞাত হিসেবে ৩ মার্চ সকালে উদ্ধার হয় নড়াইলে। উপশহর বি ব্লক ১৪৮ নম্বর বাড়ির ছাপ্পানকে ২ মার্চ রাতে যশোর পুলিশের একটি টিম আটক করে বলে গুঞ্জন ওঠার পর ৩ মার্চ একটি লাশ উদ্ধার হয় নড়াইলে। লাশটি ছাপ্পানের হতে পারে বলে খোঁজ খবর নেয়া শুরু হয়। ওই দিন রাতে ছাপ্পানের পরিবারের সদস্যরা নড়াইলে গিয়ে লাশের ছবি দেখে শনাক্ত করেন। এর আগেই লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে নড়াইল আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম দাফন করে।
নড়াইল সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক যুবকের লাশ সীতারামপুর ব্রিজের পাশে পড়েছিল। পরে নড়াইল পুলিশ উদ্ধার করে। ৩ মার্চ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই লাশের কোনো দাবিদার না থাকায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের অনুমতি দেয়া হয় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামকে। আর লাশটি ওই দিন বিকেলে নড়াইলে দাফন করা হয়। পরে লাশটি ছাপ্পানের বলে যশোর উপশহর থেকে তার পরিবারের লোকজন এসে ছবি দেখে শনাক্ত করে। লাশটি তারা উত্তোলন করে যশোর নেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
গতকাল দুপুরে ছাপ্পানের উপশহরের বাড়িতে গেলে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম ববিতা, মেয়ে ফারজানা হক শারমিন ও বড় ভায়রা হাসান বলেন, এটা কোনো সড়ক দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে পুলিশ তাকে খুন করেছে। স্ত্রী ববিতা জানিয়েছেন, পুলিশ ২ মার্চ রাতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাড়ি ঘর তছনছ করেছে। বাড়ির ৩টি মোবাইল সেট নিয়ে গেছে। পরে বি ব্লক বাজারের নান্নুর দোকানের সামনে শ’ শ’ মানুষের সামনে থেকে আটক করে নিয়ে গেছে। আর নড়াইলে ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার হল। সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও এটা পুলিশি হত্যাকান্ড। পুলিশ তাকে হত্যার পর লাশ ক্ষত-বিক্ষত করেছে, যাতে চেনা না যায় সে পরিবেশটিও তারা করেছে। শেষমেশ বেওয়ারিশ বানানোর নাটক সাজিয়েছে। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত দাবি করেছেন।
নিহত ছাপ্পানের ছেলে লিমু ও বড় ভাই গহর আলী পাপ্পু জানিয়েছেন, তারা লাশ আনার জন্য ৪ মার্চ নড়াইলে যান। সেখানে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে নড়াইল জেলা প্রশাসকের কাছে লাশ উত্তোলন করে যশোর নেয়ার আবেদন দিয়েছেন। গতকাল আবেদন জমা দিলেও আইনী জটিলতায় লাশ পাননি। আজ বৃহস্পতিবার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে লাশটি যশোরে আনা হয়। বিকেলে লাশটি উপশহরে পুণরায় দাফন করা হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, ২ মার্চ রাতে অস্ত্র-গুলিসহ উপশহর এলাকা থেকে ইসমাইল নামে একজনকে আটক করা হয়। এছাড়া ছাপ্পানকে আটক করতে বাড়িতে ও ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। ৩ মার্চ রাতে তিনি তথ্য পান নড়াইলে এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। সে লাশটি নাকি যশোরের একাধিক মমলার আসামি ছাপ্পানের। এ ব্যাপারে যশোর পুলিশের পক্ষে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী যুবলীগের এমপি নাবিল ঘরাণার সাথে যুক্ত ছিল ছাপ্পান। সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি অস্ত্রবাজি, দকলবাজি, এমনকি বড় ধরনের মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনার সাথেও যুক্ত ছিল সে। তার চক্রে ডজন খানেক আলোচিত মাদক কারবারী চলাফেরা করে। ওই চক্র পরিচালনা ও ঢাকা কেন্দ্রিক মাদক কারবার পরিচালনা করে অর্থ বৈভবের মালিক বনে যায় ছাপ্পান। ২ মার্চ রাতে পুলিশের অভিযানে আটক হওয়া বিরামপুর ভাটাপাড়ার আয়নালের ভাড়াটিয়া ইসমাইল ওই ছাপ্পানের সহযোগী।