আজ - সোমবার, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ২:২৭

ইমন খুনে উত্তাল যশোর -মাদকের বিরোধিতার জের!


মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে সমাজকে বাঁচাতে –  জীবন বিনিময় করলেন  “মনোয়ার হোসেন ইমন”নামক আপোসহীন এক তাঁজা প্রাণ! বন্ধ হবে তো মাদক? ধরা পড়বে তো খুনি?

নাঈম সাব্বির (স্পেশাল করসপন্ডেন্ট পলিটিক্স): 

দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে নিহত যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন ইমনকে (৩২) বেদনা বিধুর পরিবেশে চিরবিদায় দিয়েছেন তার স্বজন ও রাজপথের সহকর্মীরা। রোববার বিকেলে বেজপাড়া তালতলায় জানাজা শেষে বেজপাড়া কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে খুনিদের আটক ও বিচার দাবিতে শহরের দড়াটানার ভৈরব চত্বরে আলোচনা সভা শেষে মিছিল করা হয় জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে। মিছিলটি বেজপাড়া তালতলা গিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল, শহর প্রদক্ষিণ করে

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কাউকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি মামলাও হয়নি কোতোয়ালি থানায়। ওসি অবশ্য বলছেন, থানায় এজাহার দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। আর আসামি আটক ও খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন ইমনের বাবা আনোয়ার হোসেন।

নিহত ইমন বেজপাড়ার আজিমাবাদ কলোনীর আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি যশোর জেলা ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। রাজপথের পরিশ্রমী এই ছাত্রনেতা ব্যক্তি জীবনে ছিলেন সৎ ও বিনয়ী। স্থানীয় মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধের সাথে মৃত্যুর আগ দিন পর্যন্ত কোন আপোষ করেননি। এ কারণেই শনিবার রাত ১১ টায় তাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিল বলে এলাকার মানুষের মধ্যে আলাপ আলোচনা চলছে।

ইমনের জানাজার দৃশ্য

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের বেজপাড়া গোলগোল্লার মোড়, বুনোপাড়া এবং আজিমাবাদ (বিহারী) কলোনী মাদক প্রবণ এলাকা। ওই এলাকাটিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতো প্রায়ই। ছাত্রলীগের রাজনীতির হাতেখড়ি হওয়ার পর থেকেই তিনি সন্ত্রাসী, মাদক বেচাকেনা ও সেবনকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও এবং শান্তিশৃংখলা কমিটির ব্যানারে ইমনের নেতৃত্বে ওই এলাকায় একাধিকবার মাদকবিরোধী সমাবেশ হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় মাদকবিক্রেতাদের সাথে তার বিরোধের সৃষ্টি হয়। ওই সকল সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা এবং সেবীদের পক্ষে অবস্থান নেন মোহিত কুমার নাথ। আর মোহিত কুমার নাথের রয়েছে আরো কয়েকডজন সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় রেলস্টেশন এলাকার মেহেবুব আলম ম্যানসেল এবং দক্ষিণবঙ্গের শীর্ষ সন্ত্রাসী আনিছুর রহমান ফিঙে লিটনের ভাই সাইদুর রহমান ডিম রিপন। ইমনের সাথে এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরোধের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে তাকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ইমনের যোগাযোগ ও অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হতো। শনিবার রাতে বেজপাড়া গোলগুল্লার মোড়ে লুডু খেলছিলেন ইমন। এসময় ম্যানসেল, ডিম রিপন, ভাইপো রাকিব, শিশির ঘোষ, শুভ, হিটার নয়ন, রবিউল, পেচো, রেলগেটের রমজান, পিচ্চি ইয়াছিন ও বারান্দীপাড়ার মোমিনসহ অন্তত ডজনখানেক সন্ত্রাসী ইমনের গতিবিধি লক্ষ্য করে। রাতে এই সন্ত্রাসীরা লুডু খেলার স্পটের আশপাশেই ছিল। এরমধ্যে দুই/তিন জন কাছ থেকে গুলি করে। পাশে ছিল অন্যরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন মাটিতে পড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

নিহত ইমন

এসময় কেউ কেউ ওই সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে আতংক সৃষ্টি করে পালিয়ে চলে যায়।
যশোর জেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল জানান, মনোয়ার হোসেন ইমন তার কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি এ হত্যার জন্য যশোর সদরের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত নাথকে দায়ী করে বলেন, স্থানীয় মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীরা এই দুই নেতার ছত্রছায়ায় থাকতো। ইমন ওই সকল অপকর্মের বিরোধিতা করায় এই দুই নেতার পরিকল্পনায় শনিবার রাত ১১ টায় ইমনকে গুলি করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক কাজল মল্লিক মৃত ঘোষণা করেন। রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নেয়া হয় নিহতের বাসভবন বেজপাড়া আজিমাবাদ (বিহারী) কলোনীতে। এদিন বাদ আসর বেজপাড়া তালতলা মোড়ে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে বেজপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খয়রাত হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপু, সদস্য মশিয়ার রহমান সাগর, ইমাম হাসান লাল, শাহারুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, সাবেক সহ-সভাপতি নিয়ামত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাধারণ সম্পাদক ছালছাবিল আহম্মেদ জিসান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস প্রমুখ। নিহতের বাড়িতে যেয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন জেলা যুবমহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর শেখ রোকেয়া পারভীন ডলিসহ নারী নেতৃবৃন্দ।

খুনিদের আটক ও শাস্তির দাবি জেলা ছাত্রলীগের।

এদিকে খুনিদের আটক ও বিচারের দাবিতে শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বর থেকে মিছিল বের করে বেজপাড়া তালতলা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে দড়াটানায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিয়ামত উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, বর্তমান সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাধারণ সম্পাদক ছালছাবিল আহম্মেদ জিসান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সুব্রত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ। বক্তারা খুনিদের দ্রুত আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

অন্যদিকে, শাহীন চাকলাদার নিহতের বাড়ি গিয়ে স্বজনদের স্বান্ত্বনা দেন। তিনি নিহতের পিতা আনোয়ার হোসেন ও দাদার সাথে কথা বলেন এবং খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য তার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

আরো সংবাদ