আজ - সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সন্ধ্যা ৭:৩৪

মায়ের সন্ধানে যশোরের রাস্তায় যুবক

এই মহিলা আমার মা, আমার মা আজ ২০ বছর যাবৎ হারিয়ে গেছে। আমার মায়ের বাড়ি যশোর জেলায়। আমার মাকে যদি কোনো স্ব-হৃদয়বান ব্যক্তি চিনে থাকেন, তাহলে আমাকে ফোন দিয়ে আমার মাকে খুঁজে পেতে দয়া করে সাহায্য করুন।’ 

২০ বছর আগে বাবার সংসারে বিচ্ছেদ হওয়া এক মায়ের সন্ধানে যশোরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন এক যুবক। শৈশবে মায়ের সঙ্গের দুটি ছবিই তার একমাত্র সম্বল। স্মৃতির দুটি ছবি দিয়ে পোস্টার তৈরি করেছেন তিনি। দেয়ালে দেয়ালে সাঁটছেন সেই পোস্টার। বিলিও করছেন। সেই পোস্টারে দুটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে।

তার নাম মো. মোস্তাকিন আহমেদ। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। মায়ের পরিচয় বলতে, তার নানা বাড়ি যশোর।

শনিবার বিকেলে যশোর প্রেসক্লাবে মো. মোস্তাকিন আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মোস্তাকিন জানান, তার বাবা আবদুল খালেক প্রায় ২৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রীকে রেখে ভারতে চলে যান। ভারতে গুজরাটে অবস্থানকালে তার মায়ের (যশোরের মেয়ে) সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানে আবদুল খালেক (বাবা) ও তার মা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেখানেই মুস্তাকিনের জন্ম হয়। তার (মুস্তাকিন) বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তার বাবা সবাইকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। প্রথম স্ত্রী থাকা ও ভারতে অবস্থানকারী মেয়েকে বিয়ে এবং সন্তান থাকায় পরিবারের লোকজন মেনে নিতে পারেননি। প্রায় ২০ বছর আগে মোস্তাকিনের মাকে ডিভোর্স দেন তার বাবা। মোস্তাকিনকে তার সৎ মায়ের (বাবার প্রথম স্ত্রী) কাছে রেখে দেওয়া হয়। মুস্তাকিন এতটুকুই জানেন তার নানা বাড়ি যশোরে। তবে সঠিক ঠিকানা জানেন না। ছোটবেলায় এতিম শিশু হিসেবে মাদরাসায় লেখাপড়া করেছেন। তার বাবাও সঠিক ঠিকানা কখনও বলেননি। কয়েক বছর আগে মুস্তাকিনের বাবা আবদুল খালেকও মারা গেছেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন মোস্তাকিন। বর্তমানে ডাব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

মোস্তাকিন জানান, এক সপ্তাহ আগে বাড়ির পুরাতন বাক্সে অনেকগুলো পুরাতন ছবি পান। তার মধ্যে দুটি ছবিতে দেখতে পান এক মহিলার কোলে ও পাশে একটি ছেলে। আর সেই ছবিটি ভারতের কোনো এক জায়গার। মোস্তাকিনের এক চাচা মেহেদী হাসান তাকে নিশ্চিত করেছেন এই ছবি দুটি তার (মোস্তাকিনের) মায়ের। এরপর মোস্তাকিন মায়ের সন্ধানে রাস্তায় নামেন। শুক্রবার থেকে তিনি যশোরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।

মোস্তাকিন বলেন, ২০ বছর আগে তার বাবার সঙ্গে যশোরে এসেছিলেন। শহরের একটি সিনেমা হল সংলগ্ন কবরস্থানের পাশের একটি বাড়িতে তাকে রেখে তার মাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল (বিচ্ছেদ বাবদ)। তখনও তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এতটুকুই স্মৃতি মনে আছে তার।

এ বিষয়ে মোস্তাকিনের সৎ মা রেশমা খাতুন মোবাইলে জানান,  মোস্তাকিনের বাবা ও মায়ের বিয়ে হয় ভারতে। পরে তারা দেশে আসে। মোস্তাকিনের বয়স যখন ৪-৫ বছর তখন তার মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার দেবররা তখন ২০ হাজার টাকা দেয় মোস্তাকিনের মাকে।  মোস্তাকিনকে আমার কাছে সে রেখে চলে যায়। ওর বাবা মারা গেছে কয়েক বছর আগে। তিনি কখনও মোস্তাকিনের নানা বাড়ির পরিচয় বলে যাননি। শুধু এইটুকু জানি তার বাড়ি যশোরে ছিল।

এ বিষয়ে মোস্তাকিনের চাচা অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান বলেন, মোস্তাকিন তার মায়ের সন্ধান করছে। ওই ছবি দুটো তার মায়ের। তার বাবার সঙ্গে মায়ের ডিভোর্স হয়েছিল। আর মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

আরো সংবাদ