আজ - শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - বিকাল ৫:০৭

‘মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ধ্বংস করতে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায় বিএনপি’

দেশের লাখ লাখ মানুসের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশ তথা মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ধ্বংস করতে দেশে বিএনপি জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে বলে বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলাসহ নানা সময়ে জঙ্গি হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল বিএনপি-জামাত। তারা কখনোই দেশের উন্নতি চায়নি, দেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখতে চায়নি। তারা শুধু ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন বলে বলেছেন নেতারা।

২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে সোমবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশেষ ভার্চুয়াল ওয়েবিনার ‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদের উত্থান’ আলোচনায় এমন কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আমরা যদি বিশ্লেষণ করি তবে দেখা যায় তৎকালীন জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে, তাদের ছত্রছায়ায় এই ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে। আমাদের মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের কথা থাকলেও পুলিশের বাঁধার মুখে সরে গিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে বাধ্য হই। মুক্তাঙ্গনে এমন হামলা করা সম্ভব নয় বলে আমাদের সরিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নিয়ে আসা হয় যাতে ওদের প্লান সাকসেস করতে পারে।

তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার পর পরই টিয়ার গ্যাস ও গুলি করে নেতা-কর্মীদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং যারা হামলার সাথে জড়িত তারা যাতে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতেই পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দেয়া হয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে। এরপর ফায়ার ব্রিগেড ডেকে পানি দিয়ে পুরো এলাকা ধুয়ে আলামত নষ্ট করে ফেলে। আমাদের আহত নেতা-কর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা না করে প্রশাসন উলটো আমাদের উপর হামলা করলো। নামে মাত্র একটা তদন্ত কমিটি গঠন, জর্জ মিয়া নাটক সাজানো, এমনকি সংসদ চলাকালীন সময়ে এমন ঘটনা ঘটলেও সংসদে এই ব্যাপারে আলোচনা করারও সুযোগ দেয়া হয়নি। কেন এমনটা করেছিলো তৎকালীন জোট সরকার প্রশ্ন করেন এই বর্ষীয়ান নেতা।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার শুরুটা ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। বঙ্গবন্ধুকে প্রায় সপরিবারে হত্যা, জাতীয় ৪ নেতাদের হত্যা, বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবেশ, একটি নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুটা হয়েছিলো ১৫ আগস্ট, তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্টে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায় সেই পুরানো একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, সেদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, ক্ষমতার আর এক কেন্দ্র বিন্দু ছিলো হাওয়া ভবন- যা পরিচালনা করতো খালেদা জিয়ার কু-পুত্র তারেক রহমান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা হইছে তা একবারে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়নি, এটি ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে। ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, সেদিন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জীবন নাশের উদ্দেশ্যে বাড়িঘরে আগুন দেয়, ধর্ষন করে, চিরদিনের জন্য আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংককে ধ্বংস করাই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তথা জঙ্গিবাদ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক হাসান মাহমুদ বলেন, রাষ্টীয় পৃষ্টপোষকতায় সন্ত্রাস লালনের শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৭৯ সালে পার্লামেন্টে সেটাকে আইনে রুপান্তর করে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শুরুটা জিয়া পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান, যার প্রমান ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত তার স্ত্রী বেগম জিয়ার বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং ২০০১-২০০৬ ক্ষমতায় থাকাকালীন তার কু-পুত্র তারেক রহমানের জঙ্গিদের লাললনপালন ও আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে প্রমানিত হয়।

তিনি আরো বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা যে রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদনে এবং তারেক রহমানের পরিচালনায় যে গ্রেনেড হামলা হয়েছে এটা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। আসলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই হামলা হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে যখন বাংলাদেশের গনতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো, স্বাধীনতাকে হত্যা করেছিলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছিলো। ওরা মনে করেছিলো, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হত্যা করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করবে, গনতন্ত্রকে হত্যা করবে। কিন্ত আল্লাহ্’র রহমতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকে বেঁচে আছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘সেদিন খালেদা জিয়া এই ঘটনা থেকে যখন বিরোধী দলীয় নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারেন নাই, আল্লাহ্ যখন তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তখন তারা আসলে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, ‘১৫ই আগস্ট ও ২১শে আগস্ট একই সূত্রে গাঁথা। একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটা সম্বন্ধে বলা যাবে না। তারা মনে করেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই এদেশে আর কোনো মানুষ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবে না, কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয় নাই।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার স্বাক্ষী মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অবঃ) বলেন, ২১শে আগস্টে রাতে ঘটনাস্থলে যে গ্রেনেড দুটি পেয়েছি হুবহু সেইম গ্রেনেড পরের দিন গোলাপ শাহ মাজারের পাশে এবং জেলখানার পাশে আর একটি গ্রেনেড আমি পেয়েছিলাম। ২১ আগস্ট পাওয়া গ্রেনেড দুটি ধ্বংস করে দেয়ার নির্দেশ ছিলো আমার কাছে, কিন্তু আমি গ্রেনেডগুলো আমাদের ব্রিগেডে নিয়ে আসি। অনেক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আসে গ্রেনেডগুলো নেড়েচেড়ে দেখে তারাও রায় দেয় যে, এগুলো যুদ্ধে ব্যবহার করে এমন গ্রেনেড। সেদিন বিকেলে সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা এসে গ্রেনেড দুটো নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

তিনি আরো বলেন, আমার বাড়িতে প্রশাসনের লোকজন গেলো, আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আমাকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্য করে অবসর নিতে। ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় আমি আমার দ্বায়বদ্ধতার জায়গা থেকে একজন সাক্ষী হিসেবে রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়ালাম।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারী আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘এরকম নেক্কারজনক ঘটনা যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি আরে নেই। একটা রাজনৈতিক দলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য ১৫ই আগস্টের যেই অসমাপ্ত কাজ রাস্ট্রীয় মদদে ২১শে আগস্টে করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মদদে এবং রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এবং প্রত্যক্ষ মদদে ওই সময় জঙ্গীদেরকে লালন পালন করা হয়েছে বাংলাদেশকে জঙ্গীদের চারণভূমি করার জন্য এবং সেই প্রচেষ্টা এখন অনেকটাই ব্যর্থ।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত