আজ - বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - সকাল ৭:৪৪

মুসলমানের রক্তে ভেজা দিল্লির জমিন – নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। সেদিন বাবা যখন মুদি দোকানে যাচ্ছিলেন, তিন বছরের মেয়ে হয়তো চকলেটের বায়না ধরেছিল। এক বছরের ছেলেটাও হয়তো আমতা আমতা করে কিছু বলেছিল। গাল দুটোয় আদর দিয়ে বাবা হয়তো বলেছিলেন ‘আচ্ছা’। দুই সন্তানই তাই বাবার পথের দিকে চেয়ে থাকছিল, কখন বাবা কোলে তুলে মুখে চকলেট পুরে দেবেন। কিন্তু সেই বেলা বাবা এলেন না, এলেন না রাতেও।

দুই সন্তানকে পিঠে নিয়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলা বাবা পরদিনও এলেন না। এলেন বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি), কজন লোকের কাঁধে চড়ে, খাটিয়ায়, সাদা কাপড়ে। বাবা এভাবে এলেন কেন? তার দেহটা এমন নিথর কেন? নাকে-কানে সাদা ওসব কী গুঁজে দেয়া? ছেলেটা কিছু বলতে না পারলেও মেয়েটার এমন প্রশ্ন বুক কাঁপিয়ে দিচ্ছিল স্বজনদের।

কাঁপা কাঁপা স্বরেই স্বজনরা বললেন, তোমাদের বাবা মারা গেছেন। এই শেষবারের মতো এলেন। এবার গেলে আর কখনো আসবেন না তোমাদের কোলে নিতে, তোমাদের আদর করতে, বুকে জড়িয়ে নিতে। প্রথম বাক্যটা না বুঝলেও ‘আর কখনো আসবেন না’ বুঝে যেন ডুকরে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। এই কান্নায় যেন গাছের পাতা ঝরে পড়ে, ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস।

সান্তনা দেবেন কী, মেয়েটার কান্নার সঙ্গে যেন হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন স্বজনরাও। দাফন করতে আসা পড়শীদেরও চোখ টলমল করতে থাকে। স্বয়ং মৌলভী সাহেবও অশ্রু লুকোতে পারেন না। সাম্প্রদায়িক আইন সিএএ ও এনআরসিকে ঘিরে দিল্লিতে দাঙ্গায় প্রাণ হারানো অটোরিকশা চালক মুদাসসির খানের ওই স্বজনদের এ কান্নার ছবি এখন ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কেউ সে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কাঁদছে দিল্লি কাঁদছে মানবতা’। কেউ লিখেছেন, ‘এই কান্না বিশ্ববাসীর জন্য অভিশাপ’। আবার কেউ লিখেছেন, ‘এ কান্না ভারতবর্ষের’। এদিকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিক্ষোভ-সহিংসতায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩ শতাধিক মানুষ। এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুর, বাবরপুর, জাফরাবাদের মতো বেশ কয়েকটি এলাকায়।

শুক্রবারের নামাজের আগে নিরাপত্তার লক্ষ্যে গুরুগ্রামে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। প্রতিহিংসার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৮টি এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। সহিংসতার ঘটনা তদন্তে দুটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। দোকান-পাট কিছুক্ষণ খোলা রাখার জন্য কোথাও কোথাও কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে।

গত রোববার সহিংসতা শুরুর পর থেকেই গুরুগ্রামে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। এদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে গত কয়েকদিনের সহিংসতা নিয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য না দেয়ায় তাকে নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সহিংসতা শুরুর পর চুপই ছিলেন।

সহিংসতার তিনদিন পর তিনি সবাইকে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী (সিএএ) আইনকে কেন্দ্র করে গত রোববার থেকে দিল্লির উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন শহরে দাঙ্গা-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এর আগে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

এদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন যে, সহিংসতার ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। নিহত বয়স্ক পরিবারকে ১০ লাখ ও নিহত নাবালক পরিবারকে ৫ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আরো সংবাদ