আজ - মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, (শীতকাল), সময় - রাত ২:১৭

যশোরে ‘জ্বিনের বাদশা’ আটক

যশোরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জ্বিনের বাদশা পরিচয়দানকারী তিন প্রতারককে আটক করেছে। শুক্রবার সকালে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দেবত্তর রামনাথপুর গ্রামের ওসমান সরকারের ছেলে সেলিম সরকার (৩২), সুন্দইল গ্রামের মৃত আকাম উদ্দিনের ছেলে দুদু মিয়া (৫৫) ও মথুরাপুর গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ মহন্তর ছেলে তাপস মহন্ত (৩৮)। গ্রেফতারকৃত সেলিম সরকার ও দুদু মিয়ার কাছ থেকে প্রতারণার ঘটনায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

এঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। যশোর শহরতলীর পাগলাদহ গ্রামের মৃত মতিয়ার রহমানের ছেলে (সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশনাল অফিসার) এএনএম সোহরাব হোসেন (৫৬) মামলাটি করেন। একই সাথে তিনি পিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার সকালে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ও সুন্দলপুর থেকে প্রতারক সেলিম সরকার, দুদু মিয় ও তাপস মহন্তকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, তারা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের সাথে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিজেদেরকে কখনও ফেরেশতা, কখনও জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে মানুষের সরলতার সুযোগে প্রতারণার মাধ্যমে নগদ অর্থসহ স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন। অভিযুক্ত সেলিম সরকার তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৮৬০০৮১৯২৯ থেকে গত ৪ নভেম্বর গভীর রাতে মামলার বাদীর মেয়ে সাজনিন খাতুনের ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন দিয়ে নিজেকে ফেরেশতা পরিচয় দেন। নিজেকে আল্লাহর কুদরত থেকে এসেছে বলে জানান। তারপর সাজনিন খাতুনকে জায়নামাজ ও কোরআন শরীফ নিয়ে বসতে বলেন। সাজনিনের মায়ের অসুস্থতা ও পরিবারের অনেক সমস্যার বিষয়ে উল্লেখ করে তার মনকে দুর্বল করে দেন। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বলে এই বিষয়ে যেন কাউকে কিছু না জানান। যদি কেউ জানে তাহলে তার পরিবারের সকলের ক্ষতি করার ভয় দেখানো হয়।

এরপর সাজনিন খাতুনের নিকট অভিযুক্ত সেলিম সরকার জায়নামাজ ও উট কেনার কথা বলে বিকাশ নং ০১৮৩২৫৮২৭০২, ০১৮৮৪৫২৮৮৭০ এর মাধ্যমে টাকা চান। সাজনিন খাতুন ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার জন্য ঘরে থাকা পিতার বেতন ও জিপিএফের উত্তোলনকৃত টাকা থেকে অভিযুক্তদের দেওয়া মোবাইলে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ৯২ হাজার ৫০০ টাকা প্রেরণ করেন।

গত ৬ অক্টোবর গ্রেফতারকৃতরা সাজনিন খাতুনকে শহরতলীর পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানির শো-রুমের সামনে আমগাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়ায় পটেটো চিপসের প্যাকেটের ভিতর একটি স্বর্ণের মুর্তি আছে বলে জানান। মুর্তিটি সাজনিন খাতুনকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত স্বর্ণের গহনা রেখে আসতে বলেন। ওই গহনা রেখে আসার সময় সাজনিন যেন পেছন ফিরে না তাকান। এই জন্য সতর্ক করা হয়। যদি তাকায় তাহলে আগুনের ঝলক পড়ে পুরো শরীর ঝলসে যাবে বলে ভয় দেখান। অভিযুক্ত সেলিম সরকারের কথায় ভয়ে ভীত হয়ে সাজনিন খাতুন পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানির শো-রুমের সম্মুখে আম গাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়া থেকে পটেটো চিপসের প্যাকেটে থাকা কথিত স্বর্ণের মুর্তি বাসায় নিয়ে আসেন। সরল বিশ^াসে পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণের চারটি কানের দুল, স্বর্ণের গলার চিক ২টি, একটি স্বর্ণের আংটি সর্বমোট ওজন অনুমান ৪ ভরি স্বর্ণ নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের্^ মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের্^ কাগজে মুড়ে রেখে আসেন।

পরবর্তীতে সাজনিন খাতুন আসামীদের মোবাইলে ফোন করলে অভিযুক্তদের দেয়া সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ পান। ঘটনার বিষয়ে সাজনিন খাতুন তার পিতাকে জানালে কথিত স্বর্ণের মুর্তিটি দেখে বুঝতে পারেন স্বর্ণের রঙের মুর্তিটি আসলে পিতলের তৈরি।

আটককৃতদের শনিবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট ২য় আমলী আদালতের বিচারক সাইফুদ্দীন হোসাইনের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

আরো সংবাদ