যশোরে ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। এবার মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। বাজারে ভুট্টার দামও ভালো। ভুট্টা চাষ করে এবার খুশি এ জেলার কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ মৌসুমে জেলায় ভুট্টার চাষ হয়েছিল ৬৩৮ হেক্টর জমিতে। গত ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর। আবাদ হয় ১ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর। আবাদ হয় ১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৬২ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৩৫ হেক্টর, মনিরামপুর উপজেলায় ২৭৫ হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ৬০ হেক্টর এবং কেশবপুর উপজেলায় ২৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে।
এ জেলায় ভুট্টার চাষ বাড়াতে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এবার জেলায় এক হাজার কৃষককে দুই কেজি করে দুই হাজার কেজি ভুট্টার বীজ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া প্রত্যেক কৃষক ভুট্টা চাষে ২০ কেজি করে ডিএপি (ডাই–অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ও ১০ কেজি করে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার পেয়েছেন।
মনিরামপুর, অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলার কয়েকটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক খেত থেকে ভুট্টার মোচা তোলা হয়েছে। বেশির ভাগ খেতে গাছ থেকে ভুট্টার মোচা তোলা এবং মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষক।
কৃষকেরা জানান, গত বছর স্থানীয় বাজারে ভুট্টার দাম ভালো ছিল। ফলনও ভালো হয়েছিল। তা ছাড়া ভুট্টা চাষে খরচ কম। এ কারণে তাঁরা এবার ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভুট্টা চাষের জন্য ভালো ছিল। যে কারণে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ একেবারেই কম হয়েছে। ফলনও তাঁরা ভালো পাচ্ছেন। বাজারে দামও এবার ভালো। দাম ও ফলনে তাঁরা খুশি।
প্রথমবারের মতো ভুট্টা চাষ করেছেন মনিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামের কৃষক মাহামুদুল হাসান। এক বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) জমিতে ভুট্টার চাষ করতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। তিনি জমি থেকে ভুট্টা পেয়েছেন ৩৮ মণ। ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে তিনি ৩০ হাজার টাকার বেশি পেয়েছেন। মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘প্রথমবার ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। বাজারে ভুট্টার চাহিদা আছে। দামও ভালো।’
অভয়নগর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামের কৃষক জিন্নাত তরফদার বলেন, ভুট্টা চার মাসের ফসল। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই ঘরে চলে আসে। তিনি এক বিঘা (৪২ শতক) জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে গাছ থেকে মোচা ভাঙবেন।
বাঘারপাড়া উপজেলার বাঘারপাড়া গ্রামের কৃষক কুতুব উদ্দিন এবার ৩৩ শতক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে ২ কেজি বীজ ও ৬৫ কেজি সার পেয়েছেন। তাঁর জমিতেও ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ভুট্টা চাষে রোগবালাই কম। খরচ কম হয়। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গমের সঙ্গে ভুট্টা মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খাওয়া যায়। গোখাদ্য হিসেবেও ভুট্টা ব্যবহৃত হয়। এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। রোগবালাই হয়নি বললেই চলে। ভুট্টা মাড়াই শুরু হয়েছে। ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। বাজারে ভুট্টার দামও ভালো।