আজ - রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - ভোর ৫:৩২

যশোরে মাত্র ২০দিনে ৯ খুন : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কম।

যশোরে খুন খারাবি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র চলতি মাসের ২০ দিনে জেলায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৯ জন। এর মধ্যে শুধু যশোর সদরেই খুন হয়েছে ৬ জন। অপরদিকে খুন খারাবি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা কমে যাওয়ায় অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ কারণে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। তুচ্ছ ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে।


শার্শা উপজেলার গোগা গাজীপাড়ার মাদ্রাসাশিক্ষক হাফেজ হাফিজুর রহমান একই মাদ্রাসার ছাত্র শাহ পরানকে বলাৎকারের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। শাহ পরান এ ঘটনা মাদ্রাসা কমিটিকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলায় ১ জুন হাফেজ হাফিজুর রহমান নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করেন। পরদিন ২ জুন ওই বাড়ি থেকে শাহ পরানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার ১০দিন পর অভিযুক্ত হাফেজ হাফিজুর রহমানকে ১১ জুন খুলনার দিঘলিয়া অ্যারাবিয়া কওমি মাদ্রাসা থেকে আটক সক্ষম হন।


৬ জুন সন্ধ্যরাতে যশোর শহরের রেল রোড রেলবাজার (গাড়োয়ানপট্টি) এলাকায় কিশোর সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় আব্দুল্লাহ খান নামে আরেক কিশোর। নিহত আব্দুল্লাহ ওই এলাকার মুরাদ খানের ছেলে। এক সন্ত্রাসীকে মা তুলে গালি দেওয়ার কারণে তাকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৫ কিশোর সন্ত্রাসী পরে আটক হয়।

এ হত্যাকান্ডের দু দিন পর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামে যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পিটিয়ে ও কীটনাশক খাইয়ে হত্যা করেন দু সন্তানের জননী পলি খাতুনকে। তিনি একই গ্রামের ইউনুস আলীর স্ত্রী। এর ৫দিন পর যশোর শহরের শংকরপুর সন্ন্যাসী দিঘিরপাড়ে কিশোর সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় ফেরদৌস হোসেন নামে এক যুবক। মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কিলার হিসেবে চিহ্নিত কিশোর সন্ত্রাসী সাব্বিরকে আটক করতে পারেনি।

এই হত্যাকান্ডের একদিন পর চৌগাছা উপজেলার লস্কারপুর ভোগের বিলে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ কর্মী মমিনুর রহমান মমিনকে। বিল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের আরেকটি গ্রুপের সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে। পরদিন ১৫ জুন সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলার মহাকালের আমভাঙ্গা খাল থেকে রফিকুল ইসলাম এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের পনিক বিশ্বাসের ছেলে। ১৮ জুন সন্ধ্যারাতে যশোর শহরের শংকরপুরস্থ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকায় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গণপিটুনিতে নিহত হয় সানি নামে এক সন্ত্রাসী। প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী নয়নের ওপর বোমা হামলা চালাতে গিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হওয়ার পর পুলিশ নয়ন ও আনন্দ নামে উভয় পক্ষের দুই সন্ত্রাসীকে আটক করে। এ ঘটনার দু দিন পর ২০ জুন সকালে শহরতলীর খোলাডাঙ্গা গাজীরবাজার থেকে সিনবাদ নামে একজন হোটেল শ্রমিকের ব্যারেলভর্তি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের রাতে শহরের মানিকতলায় তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে এলাকার কতিপয় সন্ত্রাসী। আধিপত্য বিস্তার ও চোরাই মোবাইল ফোন সংক্রান্ত ঘটনায় তাকে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৩ জনকে ইতোমধ্যে আটক করেছে পুলিশ। ২০ জুন বিকেলে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্যাসফিল্ডের কাছে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় মাদ্রাসাছাত্র সাজিদ হোসেন স¤্রাট। মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়। স¤্রাটের বাড়ি বড় বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে দু জনকে আটক করতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু প্রকৃত খুনি এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, আগে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় পুলিশ নিয়মিত টহল দিতো। ডিবি পুলিশকেও মাইক্রোবাসে টহল দিতে দেখা যেত। পুলিশ কোন স্থানে বখাটে কিশোর অথবা যুবকদের আড্ডা দিতে দেখলে তল্লাশি চালাতো। সন্ধ্যার পর স্কুল-কলেজের ছাত্ররা বাইরে আড্ডা দিলে ছত্রভঙ্গ করে দিতো পুলিশ। মোটরসাইকেলে সন্দেহজনক চলাফেরা দেখলেই আরোহীদের ধরে দেহে তল্লাশি চালানো হত। যে কারণে পাড়া মহল্লায় বখাটে কিশোর অথবা যুবকেরা যত্রযত্র আড্ডা দিতে ভয় পেতো। তাদের মধ্যে পুলিশি আতঙ্ক বিরাজ করতো। ফলে সেই সময় অপরাধ প্রবণতা ছিল কম। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো শহরের পাড়া মহল্লায় পুলিশের জোরালো টহল দিতে দেখা যায়না। আর এ কারণে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র কিশোর সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যের কারণে পাড়া মহল্লার শান্তিপ্রিয় মানুষকে আতঙ্কে থাকতে হয়।

ক্ষমতাসৗীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের শেল্টারে থাকা এসব সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়াও দিয়ে থাকে। তুচ্ছ ঘটনায় এইসব সন্ত্রাসী প্রতিপক্ষের বুকে ছুরি বসিয়ে দিতে পিছপা হচ্ছেনা।


যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনছার উদ্দিন বলেন, মেয়েলি ঘটনায় কেউ খুন হচ্ছে। অথবা তুচ্ছ ঘটনায় কাউকে খুন করা হচ্ছে। এ ধরনের খুন খারাবিরোধে পুলিশের টহলের কোন সম্পৃতা নেই। তবে কোথায় কোন সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলে সেখানে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া হয়।

সেখানে সংঘর্ষ হলে অথবা অপরাধ ঘটলে পুলিশ তা রোধ করতে পারলো কি-না সেটা বিবেচ্য বিষয়। তিনি বলেন, আগের চেয়ে পুলিশের টহল বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কোথাও জটলা দেখলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তাছাড়া অপরাধীদের ছুরি চাকুর ব্যবহার রোধেও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত