আজ - শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, (হেমন্তকাল), সময় - রাত ১:৪৩

যশোরে সরকারি বই কেজি দরে বিক্রিকালে ধরা পড়লো প্রধান শিক্ষক!

মোঃ মহিউদ্দিন সানি (যশোর থেকে)।। করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সুযোগে অবিতরণকৃত বই বিক্রি করেছিলো যশোর সদর উপজেলার শাঁখারী গাতী এম,এল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। পথিমধ্যে বিক্রিকৃত বইসহ দুইটি ইজিবাইক ঘেরাও করে গ্রামবাসী। পরে সরকারি বই বিক্রিতে বাধ সাধেন তারা। একপর্যায়ে স্কুল কতৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বইগুলো ফের স্কুলে এনে রাখে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ থেকে ৮ টাকা দরে আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ মন বই বিক্রি করেছিলো স্কুল কতৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে গোপালপুর গ্রামের আব্দুর জলিলের ছেলে ভাংড়ি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে এসব বই বিক্রি করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ। বিক্রি হওয়া সেই বই নিয়ে যাওয়ার পথে বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে একটি ইজিবাইক আটক করে স্থানীয়রা। পরে শাঁখারি গাতী মোড় থেকে অন্য ইজিবাইকটিকে ফিরিয়ে আনেন তারা। এসময় ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক কেজি দরে বইগুলো কিনেছে বলে স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, বইগুলো বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা ছিলো। করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বইগুলো ঈদুর, উইপোকা ও তেলাপোকায় নষ্ট করে ফেলছিলো। অনেকটা বাধ্য হয়েই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নানসহ সকল সদস্যদের পরামর্শে আমরা বইগুলো বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অবিতরণকৃত বই থাকলে তা সরকারি নিয়মনীতি মেনেই বিক্রি করার কোনো নীতিমালা আছে কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
শাঁখারী গাতী এম,এল মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, বই বিক্রি প্রসঙ্গে আমাকে প্রধান শিক্ষক কিছুই জানাননি। আমি আজই জানতে পারলাম যে স্কুলে পড়ে থাকা অবিতরণকৃত বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে সরকার আমাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী বই দেয়নি। সেজন্য আমরা প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরোনো বইগুলো সংগ্রহ করে বইয়ের ঘাটতি পুরণ করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে ধরে স্থানীয় অভিভাবক মো আবুল খায়ের জানান, স্কুলে প্রতিবছর পুরোনো বই জমা দিয়ে নতুন বই নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদেরকে পরিবহন খরচ বাবদ ৫ থেকে ১০ টাকা দিতে হয়। এ্যাসাইনমেন্টের বাহানায় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭০ টাকা করে তোলেন তারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোর নামে কৌশলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেন। কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিভাবকদের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করেন না তারা।
তবে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ বিষয়গুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম. মুনিম লিংকন জানান, কোন ভাবেই বিদ্যালয় কতৃপক্ষ বই বিক্রি করতে পারবে না। তারা অবিতরণকৃত বইগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিতে পারবে। একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিসের দায়িত্বরতদের নেতৃত্বে এসব বইগুলোর বিক্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রেওয়াজ আছে। ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির ইচ্ছা খুশিমত এই অবিতরনকৃত বইগুলো বিক্রয়ের বিষয়ে অবশ্যই সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা বিদ্যালয় কতৃপক্ষ বই বিক্রি বিষয়ে কোন রেজুলেশন দেখাতে পারেনি। এ ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ত্রুটি,বিচ্যুতি সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আদর্শ শিক্ষাঙ্গনে পরিনত করার আশা রেখে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে এমন নেক্কারজনক ঘটনায় বিচারের দাবী জানিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

আরো সংবাদ
যশোর জেলা
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত